আলোকরেখা: আসন্ন দীপাবলি উপলক্ষে জোরকদমে চলছে মাটির প্রদীপ তৈরির কাজ। (১) দত্তপুকুর ও (২) উল্টোডাঙার মুচিবাজারে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক ও দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
একটা সময় ছিল, যখন মাটির রং-বেরঙের প্রদীপ থেকে শুরু করে ঘর সাজানোর রকমারি জিনিসের পসরা নিয়ে সদাই গমগম করত কুমোরপাড়া। দীপাবলিতে যা বাড়ত কয়েক গুণ। মাঝের কয়েক বছরে চিনা পণ্যের ধাক্কায় কমে গিয়েছিল কুমোরপাড়ার সেই ব্যবসা। প্রদীপ থেকে শুরু করে মাটির বিভিন্ন জিনিসের বাজারে দেখা দিয়েছিল মন্দা। পরে আবার মাটির প্রদীপের চাহিদা ধীরে ধীরে বাড়লেও করোনার ধাক্কায় গত দু’বছরে ব্যবসা গিয়ে ঠেকেছিল তলানিতে। তবে, এ বছর দুর্গোৎসবের ভিড় দীপাবলির আগে ফের আশা জাগিয়েছে প্রদীপ শিল্পীদের মনে। কিন্তু মাটির দাম বাড়লেও প্রদীপের দাম সে ভাবে না বাড়ায় চিন্তায় আছেন তাঁরা। বিক্রি বাড়লে অবশ্য সবটাই পুষিয়ে যাবে। প্রদীপ শিল্পীরা জানাচ্ছেন, এখন ভিন্ রাজ্যেও বাংলার প্রদীপের চাহিদা যথেষ্ট।
করোনা-কাঁটায় গত দু’বছর কার্যত জৌলুসহীন ছিল আলোর উৎসব। ছিল একাধিক বিধিনিষেধ। হাই কোর্টের নির্দেশে বাজি বিক্রির উপরে নিষেধাজ্ঞা এবং গলওয়ান সীমান্তে ভারত-চিন দ্বন্দ্বের জেরে চিনা পণ্য বর্জনের হিড়িকে গত বছর দীপাবলিতে কিছুটা হলেও চাহিদা বেড়েছিল মাটির প্রদীপের। আয় বেড়েছিল মৃৎশিল্পীদের। কিন্তু এ বছর? চিনা পণ্য বর্জনের হিড়িক না থাকলেও সপ্তাহ দুয়েক আগে দুর্গোৎসবে মানুষের যে উৎসাহ দেখা গিয়েছে, দীপাবলির আগে সেটাই বাড়তি আশা জাগাচ্ছে মৃৎশিল্পীদের মনে। তবে, দাম বাড়াতে না পারলে লাভের মুখ যে সে ভাবে দেখা যাবে না, তা-ও বলছেন তাঁরা।
ব্যবসায়ীদের একাংশ জানাচ্ছেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর প্রদীপের দাম বিশেষ বাড়েনি। সব চেয়ে সস্তা প্রদীপ বিক্রি হচ্ছে প্রতি একশোটি ১০০ থেকে ১২০ টাকা দরে। রঙিন প্রদীপের দাম একটু বেশি। আকার অনুযায়ী দামও আলাদা। একশোটি রঙিন প্রদীপের দাম এ বছর ৩০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। আরও বেশি দামের প্রদীপও আছে বলে জানালেন শিল্পীরা। পাশাপাশি, মোম ভরা মাটির প্রদীপের এ বছর চাহিদা ভালই বলে জানাচ্ছেন কুমোরপাড়ার কারিগরেরা। মাটির দাম বৃদ্ধি পেলেও প্রদীপের দাম একই রেখে চাহিদা বাড়ানোর চেষ্টা করছেন ব্যবসায়ীরা। সঙ্গে চলছে ভিন্ রাজ্যের বাজার ধরার তোড়জোড়।
শহরের প্রদীপ শিল্পীদের একাংশ জানাচ্ছেন, গত বছরের তুলনায় এক ধাক্কায় মাটির দাম বেড়েছে গাড়ি-প্রতি তিন থেকে চার হাজার টাকা। এখন এক গাড়ি মাটি আনতেই খরচ হয়ে যাচ্ছে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা। কিন্তু প্রদীপের দাম কার্যত একই আছে। উল্টোডাঙার মৃৎশিল্পী কৈলাস প্রজাপতি হনুমান বললেন, ‘‘গত বছর প্রদীপের যা দাম ছিল, এ বছরও একই আছে। দশ-বিশ টাকা এ দিক-ও দিক হয়েছে। তবে, দাম কম থাকায় গত দু’বছরের তুলনায় এ বার চাহিদাও বেশি। ভিন্ রাজ্যেও বাংলার প্রদীপ যাচ্ছে। কালীপুজো পর্যন্ত এমন চাহিদা থাকলে মন্দ হবে না।’’ বড়বাজারের পাইকারি বাজারেও প্রদীপের চাহিদা বেড়েছে বলে জানাচ্ছেন সেখানকার ব্যবসায়ীদের একাংশ। তাঁরা জানালেন, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, রাজস্থানেও এ বছর বাংলার প্রদীপের চাহিদা রয়েছে। অন্য কয়েকটি রাজ্যেও প্রদীপ যাচ্ছে।
‘ওয়েস্ট বেঙ্গল আর্ট পট মেকার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর সভাপতি মোহনলাল প্রজাপতি বললেন, ‘‘এ বছর তো পুজোয় তেমন কোনও বিধিনিষেধ নেই। তাই ভাল কিছুর আশা করছি। তার উপরে ভিন্ রাজ্যে বাংলার প্রদীপের কদর বাড়ায় আমাদের আশা আরও বেড়েছে। বছর বছর ব্যবসায় এ ভাবে প্রদীপের আলো ছড়ালে মন্দ হয় না!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy