Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪

জলকর নয়, অপচয় বন্ধে জরিমানাই পথ!

সেই জরিমানার ‘স্ল্যাব’ কী হবে, কী ভাবে তা নেওয়া হবে, সে সব নিয়ে আলোচনা চলতে পারে।

পরিমাপ: টালা পার্ক এলাকায় একটি বাড়িতে বসানো জলের মিটার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।

পরিমাপ: টালা পার্ক এলাকায় একটি বাড়িতে বসানো জলের মিটার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।

দেবাশিস ঘড়াই
শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৯ ০৪:৩৬
Share: Save:

‘বাবা-বাছা’ বলে জল অপচয় রোধ করা যাবে না। কারণ, সচেতনতা প্রচারেই যদি কাজ হত, তা হলে প্রতি বছর পুজোয় বাজির তাণ্ডব সহ্য করতে হত না নাগরিকদের! সে ক্ষেত্রেও তো রাজ্য প্রশাসনের তরফে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে লাগাতার প্রচার চলে। তেমন ভাবেই শুধু সচেতনতা প্রচার করে জল অপচয় বন্ধ করা যাবে না বলেই মত বিশেষজ্ঞদের। তাই জলকর নয়, জল-জরিমানাই এক এবং একমাত্র পথ বলে জানাচ্ছেন তাঁরা।

সেই জরিমানার ‘স্ল্যাব’ কী হবে, কী ভাবে তা নেওয়া হবে, সে সব নিয়ে আলোচনা চলতে পারে। রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার কারণে কলকাতা পুরসভা যতই এ ব্যাপারে মুখে কুলুপ এঁটে থাকুক, জল নষ্ট বন্ধ করতে আর্থিক দায় না চাপানো হলে জল অপচয় বন্ধ করা যাবে না বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। তাঁরা এ-ও বলছেন, দৈনিক মাথাপিছু ১৫০ লিটার পর্যন্ত বিনামূল্যে জল দেওয়া হোক। কারণ, কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের অধীনে ‘দ্য সেন্ট্রাল পাবলিক হেল্‌থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং অর্গানাইজেশন’ (সিপিএইচইইও)-এর নির্দেশিকা অনুযায়ী, দিল্লি, কলকাতা, মুম্বই-সহ মেট্রোপলিটন শহরগুলিতে দৈনিক মাথাপিছু ১৫০ লিটার জল প্রয়োজন। এর বেশি কোনও ভাবেই লাগা সম্ভব নয় বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা। তার থেকে বেশি খরচ হলেই জল-জরিমানা বসানোর প্রস্তাব রাখছেন তাঁরা।

কিন্তু জলকর নয় কেন? কেন জল-জরিমানা?

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়াটার রিসোর্সেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক পঙ্কজকুমার রায় জানান, দেশের অন্য অনেক শহরে ওয়াটার-চার্জ নেওয়া হয়। কিন্তু সেটাই একমাত্র সমাধানের পথ নয়। কারণ, কারও হাতে টাকা থাকলে ইচ্ছে মতো জল কিনে নিতে পারেন। কিন্তু তাঁর প্রয়োজন দৈনিক ১৫০ লিটার। তার বেশি খরচ মানেই সেটা অপচয়। পঙ্কজবাবুর কথায়, ‘‘যেটা দরকার, সেটা হল ১৫০ লিটারের বেশি খরচ করলেই এমন ‘স্ল্যাব’ থাকবে যাতে ওই টাকা দিতে মানুষের ভয় থাকে। সুতরাং জরিমানা না করলে শুধু জলকর বসিয়ে জল-অপচয় সমস্যার সমাধান করা যাবে না।’’ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব এনভায়রনমেন্টাল স্টাডিজ়-এর শিক্ষক তড়িৎ রায়চৌধুরীর বক্তব্য, ‘‘আর্থিক দায়বদ্ধতা তৈরি না হলে জলের অপচয় বন্ধ করা যাবে না। বিনামূল্যে পাচ্ছি বলেই সহজে নষ্ট করছি। কিন্তু অপচয়ের জন্য যখন টাকা দিতে হবে, তখন জলের প্রকৃত মূল্য বোঝা যাবে!’’

কলকাতা পুরসভার এক থেকে ছ’নম্বর ওয়ার্ডে ‘ওয়াটার লস ম্যানেজমেন্ট’ প্রকল্পের অধীনে এখনও পর্যন্ত ৩৭৫১টি পানীয় জলের মিটার বসানো হয়েছে। তাতে ধরা পড়ছে, ৯৯ শতাংশ ক্ষেত্রেই পানীয় জল খরচের মাত্রা নির্ধারিত ১৫০ লিটারের থেকে কোথাও চার গুণ, কোথাও পাঁচ গুণ বেশি। কিন্তু এটা জানার পরে সেই অপচয় রোধে পুরসভার হাতে কার্যত কোনও অস্ত্র নেই। কারণ, রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার কারণে জল-জরিমানা তো দূর, পুরসভা জলকরের পথেই হাঁটতে নারাজ! ফলে কত বেশি জল খরচ হচ্ছে, শুধুমাত্র তা জেনেই ‘সন্তুষ্ট’ থাকতে হচ্ছে পুরকর্তাদের।

যদিও এক নম্বর বরোর চেয়ারম্যান তরুণ সাহা বলছেন, ‘‘আমরা বাসিন্দাদের জল-অপচয় রোধে সচেতন করার চেষ্টা করছি। তাতে ফলও মিলছে।’’

‘ওয়াটার স্ট্রেসড সিটি’-র তালিকায় নাম লেখানো এ শহরে অদূর ভবিষ্যতে জলের হাহাকারের অশনিসঙ্কেত দেখছেন বিশেষজ্ঞেরা। সে ক্ষেত্রে শুধু সচেতনতার প্রচার কতটা কাজে দেবে, তা নিয়ে সংশয়ে আছেন খোদ পুরকর্তারাই।

এক পুরকর্তা বলছেন, ‘‘জলকর বা জল-জরিমানা বসবে কি না, সেটা তো সরকারের সিদ্ধান্ত। আমরা তো সাধারণ চাকুরে। তবে এটুকু বলতে পারি, জল অপচয় করলে যদি আর্থিক শাস্তির ভয় না থাকে, তা হলে অপচয় চলতেই থাকবে। পরিস্রুত, পানীয় জল তৈরি হয় করদাতাদের টাকায়, সেই টাকা জলের সঙ্গে ড্রেন দিয়েই বেরিয়ে যাবে!’’

অন্য বিষয়গুলি:

Water Water scarcity
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy