এই গাড়িতেই দুই পড়ুয়া অতনু এবং অভিষেককে খুন করা হয় বলে সূত্রের খবর। নিজস্ব চিত্র।
গাড়িতেই খুন। তাই অপরাধের ক্ষেত্রটিকে খুঁটিয়ে পরীক্ষা করলেন সিআইডির ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা। বৃহস্পতিবার সিআইডির ফরেন্সিক দল প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে পরীক্ষা করেন মেরুন রঙের একটি সুজুকি গাড়ি। গত ২২ অগস্ট স্কুল শেষে এই গাড়িতেই উঠেছিলেন হিন্দু বিদ্যাপীঠের ছাত্র, দুই ভাই অভিষেক এবং অতনু। সূত্রের খবর, তারপর গাড়ি থেকে সোজা নয়ানজুলিতে ছুড়ে ফেলা হয় তাদের দু’জনের নিথর দেহ। বৃহস্পতিবার গাড়ির ভিতরের আঙুলের ছাপ থেকে শুরু করে সওয়ারিদের ব্যবহার করা জলের বোতল, সবই পরীক্ষা করে দেখলেন সিআইডির ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা।
বাগুইআটির জোড়া খুনে ব্যবহার করা গাড়িটি পুলিশ এনে রেখেছিল বাগুইআটি থানার চত্বরেই। বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ গাড়িটি পরীক্ষা করতে আসেন সিআইডির ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের দল। সূত্রের খবর, ফরেন্সিকের বায়োলজি এবং ফিজিক্সের বিশেষজ্ঞরা এসেছিলেন। তাঁরাই গাড়ির ভিতরে দুষ্কৃতীদের আঙুলের ছাপ পাওয়া যায় কি না, তা পরীক্ষা করে দেখেছেন। এমনকি গাড়ির ভিতরে থাকা জলের বোতলও পরীক্ষা করতে দেখা যায় তাঁদের।
বাগুইআটির দুই ছাত্রকে হত্যার ঘটনায় ইতিমধ্যেই চার জনকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। তবে মূল অভিযুক্ত সত্যেন্দ্র চৌধুরি এবং তাঁর আরও এক সঙ্গী এখনও অধরা। ফরেন্সিকের বায়োলজি টিম যেখানে গাড়ির ভিতরে সত্যেন্দ্রদের ফেলে যাওয়া সূত্রের খোঁজ করেছেন, সেখানে ফিজিক্স টিম সম্ভবত খতিয়ে দেখেছেন গাড়ির নানা কারিগরি দিক। টানা দু’ঘণ্টা ধরে খুঁটিয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করার পর তদন্তকারীরা ২.৩০ নাগাদ বাগুইআটি থানা থেকে বের হন।
উল্লেখ্য, বুধবারই বাগুইআটির জোড়া খুনের তদন্তভার নিয়েছিল রাজ্যের গোয়েন্দা শাখা সিআইডি। বৃহস্পতিবার সকালে তারা পৌঁছে যায় বাগুইআটি থানায়। তার পর কাজ শুরু করে দু’টি সিআইডির দল। একটি দল পৌঁছে যায় নিউটাউনের একটি গেস্ট হাউসে। এই গেস্ট হাউসেই খুনের পরিকল্পনা হয়েছিল বলে সিআইডি সূত্রে খবর। সিআইডির ফরেন্সিক দলটি পৌঁছে যায় বাগুইআটি থানা। খুনের ঘটনাস্থল, গাড়িটিকে পরীক্ষা করতে।
বাগুইআটির দুই মাধ্যমিক পড়ুয়া অতনু এবং অভিষেক নিখোঁজ হয় গত ২২ অগস্ট। দু’দিন তাদের কোনও খোঁজ না পেয়ে বাগুইআটি থানায় অভিযোগ জানায় পরিবার। পরিবারের অভিযোগ ছিল, দু’জনকেই অপহরণ করা হয়েছে। পুলিশের কাছে অতনুর বাবা অভিযোগ করেন, তিনি বেশ কয়েক বার উড়ো ফোন পেয়েছেন। মুক্তিপণ চেয়ে মেসেজও পেয়েছেন। অপহরণকারীরা নির্দিষ্ট কোনও জায়গা বলেনি। বরং বার বার বদলেছে মুক্তিপণের অঙ্ক।
এর মধ্যে গত ২৪ অগস্ট থেকে দুই কিশোরের খোঁজ শুরু করে পুলিশ। তদন্তে উঠে আসে বেশ কিছু তথ্য। পুলিশ জানতে পারে, দুই কিশোরকে অচেনা কেউ নয়, ‘অপহরণ’ করেছে তাদের পরিচিত। এর পরই প্রকাশ্যে আসে অতনুদের পাশের বাড়ির ‘জামাই’ সত্যেন্দ্র চৌধুরির নাম। জানা যায়, অতনু নিজের বাইক কেনার জন্য ৫০ হাজার টাকা দিয়েছিল সত্যেন্দ্রকে। বাইক দেখাতে তাকে ২২ অগস্ট ডেকে পাঠান সত্যেন্দ্র। অতনু তাঁর তুতো ভাইকে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিল বাইক দেখতে।
তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, সত্যেন্দ্র গাড়ি নিয়ে এসেছিলেন। সেই গাড়িতেই দুই কিশোরকে নিয়ে রাজারহাটে একটি বাইক শোরুমে যান। কিন্তু বাইক পছন্দ হয়নি সত্যেন্দ্রের। তাই শোরুম থেকে দু’জনকে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। বিধাননগর পুলিশের দাবি, ওই দিন রাতেই খুন করা হয় দুই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীকে। পরে গত ২৩ অগস্ট ন্যাজাট থানা এলাকায় এবং ২৫ অগস্ট হাড়োয়ায় উদ্ধার হয় অতনু এবং অভিষেকের দেহ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy