—প্রতীকী চিত্র।
এ রাজ্যে ডেঙ্গি আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা কত? এই বিষয়ে এখনও কার্যত মুখে কুলুপ এঁটে আছেন স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা। কারণ, তথ্য বেরোলেই নাকি হবে সিআইডি তদন্ত! যদিও সরকারি থেকে বেসরকারি, সব হাসপাতালেই কমবেশি ডেঙ্গি রোগীতে শয্যা ভর্তি হয়ে আছে।
সম্প্রতি সমস্ত জেলার স্বাস্থ্য আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন স্বাস্থ্য ভবনের কর্তারা। সূত্রের খবর, সেখানেই রীতিমতো হুঁশিয়ারি দিয়েছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। এক কর্তা তো আবার স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, গত বছরের মতো এ বারেও যদি সাপ্তাহিক ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা সংবাদমাধ্যম জেনে যায়, তা হলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কে বা কারা তথ্য ফাঁস করলেন, তা জানতে সিআইডি-কে দিয়ে তদন্ত করানো হবে।
রাজ্যের এক স্বাস্থ্য আধিকারিকের কথায়, ‘‘কে উটকো ঝামেলায় পড়তে চায়? তা ছাড়া, আমরাও সাপ্তাহিক রিপোর্ট এখন জানতে পারি না।’’ প্রশ্ন হল, মশাবাহিত রোগ নিয়ে এত রাখঢাক কেন? কেন আক্রান্ত বা মৃতের সংখ্যা গোপন করা হচ্ছে? স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তার দাবি, ‘‘বাইরে তথ্য না জানালেও, পরিস্থিতির দিকে আমাদের নজর রয়েছে। প্রয়োজন বুঝে ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে।’’
প্রশ্ন হল, জনগণ যদি না-ই জানলেন বাস্তব পরিস্থিতির কথা, তা হলে তাঁরা সচেতনই বা হবেন কী ভাবে? লোকজন তো ভাবতেই পারেন, ডেঙ্গি তেমন ভাবে বাড়ছে না। জনস্বাস্থ্যের সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসকদের একাংশের মতে, ‘‘তথ্য গোপন করে আদতে জনস্বাস্থ্যেরই ক্ষতি করা হচ্ছে। ডেঙ্গি নিয়ে মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে। অথচ, সেটা বাড়ছে না কমছে, সেই তথ্য লুকিয়ে রাখা হচ্ছে। এমনকি, কেউ যদি বলে ফেলেন, তা হলে তাঁদের পুলিশ-আইনের জুজু দেখানো হচ্ছে!’’
স্বাস্থ্য ভবনের সূত্র বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখনও পর্যন্ত রাজ্যে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজারের ঘরে ঢুকে গিয়েছে। বেসরকারি মতে, এ পর্যন্ত ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। ‘অ্যাসোসিয়েশন অব হেল্থ সার্ভিস ডক্টর্স’-এর সাধারণ সম্পাদক মানস গুমটা বলেন, ‘‘তথ্য গোপন করাই আমাদের রাজ্য সরকারের জনস্বাস্থ্যের প্রোটোকল। কোভিডের সময়েও দেখেছি, সংক্রমণ ও মৃত্যুর তথ্যে ব্যাপক গরমিল থাকত। আগে ছিল অজানা জ্বর। এখন বাংলাদেশের মশা এবং সেখান থেকেও ডেঙ্গি আসছে শুনতে হচ্ছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘গত বছরও প্রতি সপ্তাহে কিছু তথ্য অন্তত জানা যেত। শোনা যাচ্ছে, তথ্য যাতে বেরিয়ে না যায়, তার কড়া নির্দেশ আছে স্বাস্থ্য প্রশাসনের।’’
এ দিকে, হাসপাতালে ডেঙ্গি রোগীর ভর্তির সংখ্যাও বাড়ছে। পিয়ারলেস হাসপাতালের এক কর্তা, চিকিৎসক সুদীপ্ত মিত্র বলেন, ‘‘দৈনিক ৬-৭ জন রোগীর ছুটি যেমন হচ্ছে, তেমনই তত সংখ্যক ভর্তিও হচ্ছেন। শয্যা কখনওই ফাঁকা থাকছে না।’’ মণিপাল হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ারের চিকিৎসক দীপঙ্কর সরকার বলেন, ‘‘ভাইরাল জ্বরের এক-তৃতীয়াংশ ডেঙ্গি রোগী। বর্ষা সবে শুরু হল। ফলে ডেঙ্গির প্রকোপ যে এখন থাকবে, তা বোঝাই যাচ্ছে। হাসপাতালেও ভর্তি হচ্ছেন অনেকে।’’
ডেঙ্গি থেকে সুস্থ হয়েও পুনরায় হাসপাতালে ভর্তির ঘটনা মাঝেমধ্যে দেখা যাচ্ছে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। বিশেষত, যাঁদের কোমর্বিডিটি রয়েছে, তাঁদের ডেঙ্গি থেকে সেরে ওঠার পরে বিশেষ সাবধানতা অবলম্বনের পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। না হলে হৃৎপিণ্ড, বৃক্ক (কিডনি), পেট বা অগ্ন্যাশয়ের (প্যাংক্রিয়াস) সমস্যা দেখা দিতে পারে। মেডিসিনের চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাস জানাচ্ছেন, ডেঙ্গিতে তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘমেয়াদি, দুই প্রভাবই রয়েছে। তাৎক্ষণিক প্রভাবে হৃদ্যন্ত্রে চাপ পড়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। আর দীর্ঘমেয়াদিতে অসম্ভব দুর্বলতা বোধ হবে এবং স্নায়ুর উপরে প্রভাব পড়তে পারে। মানসিক অস্থিরতা তৈরির ঝুঁকিও থাকে এই রোগীদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy