Advertisement
E-Paper

মুখ্যমন্ত্রীর বার্তায় কি বদলাবে দখলদারির হকার-চিত্র

পুজোর মুখে শুক্রবার শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণে ঘুরে দেখা গেল দখলদারির এমনই চিত্র। গড়িয়াহাটে পুজোর বাজারের নামে কার্যত দখল করে নেওয়া হয়েছে গোটা ফুটপাত।

সঙ্কীর্ণ: দোকানে ভরেছে ফুটপাত। কোনও রকমে পাশ কাটিয়ে যাতায়াত পথচারীদের। শুক্রবার, হাতিবাগানে।

সঙ্কীর্ণ: দোকানে ভরেছে ফুটপাত। কোনও রকমে পাশ কাটিয়ে যাতায়াত পথচারীদের। শুক্রবার, হাতিবাগানে। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৬:৩৪
Share
Save

‘‘পুরো ফুটপাতটাই যদি দখল হয়ে যায়, হাঁটব কী করে!’’— বৃহস্পতিবার শহরের হকার পরিস্থিতি নিয়ে এমনই মন্তব্য করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যার জেরে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে এ শহরের হকার-দৌরাত্ম্য নিয়ে। কিন্তু এ বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিস্তর অভিযোগ থাকলেও পরিস্থিতির বদল হয় না। কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে কয়েক দিন প্রশাসনের নানা স্তরে আলাপ-আলোচনা চললেও আদতে দখলদারির হকার-চিত্রের পরিবর্তন হয় না বলেই অভিযোগ।

পুজোর মুখে শুক্রবার শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণে ঘুরে দেখা গেল দখলদারির এমনই চিত্র। গড়িয়াহাটে পুজোর বাজারের নামে কার্যত দখল করে নেওয়া হয়েছে গোটা ফুটপাত। একটি পোশাকের দোকানের সঙ্গে ব্যাগের দোকান এমন ভাবে পাতা যে, সেখান দিয়ে এক দিকে বেঁকে বেরোনো ছাড়া উপায় নেই পথচারীদের। স্থানীয় পুর প্রতিনিধির দেওয়া স্টল এমন ভাবে পাতা হয়েছে, সেটি ফুটপাতের সবটা দখল করেও অনেকটা নেমে এসেছে রাস্তায়। কিছুটা দূরে একটি শাড়ির দোকানের সামনে ফুটপাতের অংশ কার্যত ঢেকে গিয়েছে ডালা আর বিক্রেতার পাতা টুলে। ধর্মতলাতেও একই চিত্র। সেখানে একের পর এক হকারের ডালা এমন ভাবে গায়ে গায়ে লাগানো যে, ফুটপাত বলতে কিছু অবশিষ্ট নেই। দ্রুত গতিতে চলা গাড়ির মধ্যেই নেমে আসতে হচ্ছে পথচারীদের। একই অবস্থা উত্তরের শ্যামবাজার বা হাতিবাগান চত্বরেও। আর জি কর হাসপাতালের সামনে ফুটপাতের এক দিকের অনেকটা নিয়ে পাতা হয়েছে খাবারের দোকান। সামনেই মাটিতে ফল নিয়ে বসেছেন এক হকার। হাসপাতাল থেকে সদ্য ছুটি পাওয়া রোগীকেও যার জেরে হাঁটতে হচ্ছে ফুটপাত ছেড়ে রাস্তায়, গাড়ির পাশ দিয়ে।

অতীতে একাধিক দুর্ঘটনার কারণ হিসাবে পথচারীদের রাস্তায় নেমে আসার প্রবণতাকেই দায়ী করেছে পুলিশ। অধিকাংশ দুর্ঘটনার ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, ঘটনাস্থলের কাছে ফুটপাতে হাঁটার জায়গাই অবশিষ্ট নেই। অথচ, পুর নির্দেশ অনুযায়ী, কোনও ফুটপাতেরই এক-তৃতীয়াংশের বেশি জায়গা জুড়ে হকারদের বসার কথা নয়। কলকাতা পুর আইন, ১৯৮০-র ৩৭১ নম্বর ধারায় রাস্তা ও ফুটপাতে বাধা সৃষ্টিকারী স্থায়ী বা অস্থায়ী যে কোনও কাঠামোর উপরে নিষেধাজ্ঞা জারির এবং প্রয়োজনে তা ভেঙে দেওয়ার পূর্ণ ক্ষমতা পুর কমিশনারকে দেওয়া হয়েছে। আবার ২০১৪ সালের ‘পথ বিক্রেতা’ (জীবিকা সুরক্ষা ও পথ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ) আইনে শহরের আড়াই শতাংশ জনসংখ্যা হকারিতে থাকবে ধরে নিয়ে শহরের পরিকল্পনা করতে বলা হয়েছে। কিন্তু তা তো হয়ইনি, উল্টে ফুটপাত দখল করে দিনের পর দিন ব্যবসা চালাতে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। পুরভোটের মুখে এ নিয়ে তৎকালীন পুর প্রশাসক ফিরহাদ হাকিম বলেছিলেন, ‘‘হকার কোনও রাজনৈতিক দল বসায় না। হকার বসায় এক শ্রেণির পুলিশ, রোজগারের জন্য।’’ এ নিয়ে বিতর্কও হয়েছিল প্রবল। অনেকেই মনে করেছিলেন, হকারদের দখলে চলে যাওয়া ফুটপাত নিয়ে তিতিবিরক্ত নাগরিক সমাজের ‘মন পেতে’ই ভোটের মুখে সচেতন ভাবে পুলিশকে দায়ী করলেন ফিরহাদ। সেই বিতর্কই আরও এক বার সামনে এসেছে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে।

মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘প্রশাসন অনেক সময়ে জেনেও ব্যবস্থা নেয় না। পাড়ার নেতারাও জানে, ব্যবস্থা নেয় না।’’ এর পরেই হকারদের নির্দিষ্ট কার্ড দেওয়ার প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, ‘‘এই কারণেই হকারদের কার্ড দিতে বলেছিলাম। অনেক দিন হল, এ বার কিছু করতে হবে।’’ ২০১৫ সালে মুখ্যমন্ত্রী হকারদের রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন। সেই সময়ে প্রায় ৬১ হাজার হকারের আবেদনপত্র জমা পড়েছিল পুর ভবনে। যদিও হকার সংগঠনগুলি এর প্রতিবাদ শুরু করে। তাদের দাবি, কেন্দ্রীয় আইন অনুযায়ী, এখনও শহরে হকার চিহ্নিতকরণের সমীক্ষাই হয়নি। সেই সঙ্গেই শহরকে ‘হকিং জ়োন’, ‘নন-হকিং জ়োন’ এবং বিধিনিষেধযুক্ত এলাকায় ভাগ করারও দাবি জানায় তারা। সেই দাবির প্রেক্ষিতেই ২০১৮ সালে কলকাতা পুরসভা, পুলিশ ও হকারদের প্রতিনিধিদের নিয়ে ‘টাউন ভেন্ডিং কমিটি’ তৈরি হয়েছিল। কিন্তু সেই কমিটির কাজ এগোয়নি।

পুরসভার মেয়র পারিষদ (হকার পুনর্বাসন কমিটি) দেবাশিস কুমার যদিও বললেন, ‘‘বেআইনি হকারদের নিয়ে দ্রুত কড়া পদক্ষেপ করা হবে। আজই টাউন ভেন্ডিং কমিটির একটা বৈঠক ডাকা হয়েছিল এ নিয়ে কড়া বার্তা দেওয়ার জন্য। কিন্তু প্রতিনিধিদের উপস্থিতি কম থাকায় বাধ্য হয়ে বৈঠক বাতিল হয়েছে।’’

Mamata Banerjee hawker

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}