২০২০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি ব্যবসায়ী-কন্যা রসিকার সঙ্গে বিয়ে হয় অন্য এক ব্যবসায়ী পরিবারের ছেলে কুশলের। ফাইল চিত্র
মূল অভিযুক্তের গ্রেফতারির এক মাসের মধ্যেই আলিপুর আদালতে রসিকা জৈন মৃত্যু মামলায় চার্জশিট জমা দিল পুলিশ। মূল অভিযুক্ত, রসিকার স্বামী কুশল আগারওয়ালের পাশাপাশি সেখানে নাম রয়েছে তাঁর বাবা নরেশ আগারওয়াল এবং মা নীলম আগারওয়ালেরও। কুশল বর্তমানে জেল হেফাজতে থাকলেও অন্য দু’জন ফেরার বলে চার্জশিটে উল্লেখ রয়েছে। এ-ও জানানো হয়েছে, পণের দাবিতে অত্যাচার চালানো হত রসিকার উপরে। আগের ধারার সঙ্গেই চার্জশিটে যোগ হয়েছে পণের দাবিতে অনিচ্ছাকৃত ভাবে মৃত্যু ঘটানোর ধারাও। ফেরার দু’জনের বিরুদ্ধে এ দিন গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি হয়েছে বলে খবর।
২০২০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি ব্যবসায়ী-কন্যা রসিকার সঙ্গে বিয়ে হয় অন্য এক ব্যবসায়ী পরিবারের ছেলে কুশলের। জাঁকজমক করে বিয়ের অনুষ্ঠান হয় রাজস্থানের উমেদ ভবনে। কিন্তু বিয়ের এক বছর সাত দিনের মাথায় গত বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি ডি এল খান রোডে শ্বশুরবাড়ির বারান্দা থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় রসিকাকে। আলিপুর রোডের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেই রাতেই তাঁর মৃত্যু হয়। পরদিনই রসিকার শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে আলিপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন তাঁর বাবা মহেন্দ্রকুমার জৈন। তাঁর অভিযোগ, মেয়ের বিয়ের সময়ে তাঁদের পণ দিতে হয়েছিল। বিয়ের পরেও সেই দাবিতে অত্যাচার চলতে থাকে। রসিকাকে মারধর করা হত বলেও তিনি অভিযোগ করেন। যার ভিত্তিতে এফআইআর দায়ের করে তদন্তে নামে পুলিশ। এর পরে মামলায় দীর্ঘ আইনি লড়াই চলতে থাকে দুই পরিবারের মধ্যে।
কুশল আলিপুর আদালতে অন্তর্বর্তী জামিনের আবেদন করেন। ২০২১ সালের ১৫ জুন তিনি সেই আবেদন তুলে নেন। ওই বছরই ২৪ জুলাই কুশলের বিরুদ্ধে আলিপুর আদালত থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। কিন্তু পুলিশ সেই সময়ে তাঁকে গ্রেফতার করতে পারেনি বলে অভিযোগ। বিষয়টি গড়ায় হাই কোর্টে। চলতি বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি কুশলের অন্তর্বর্তী জামিনের আবেদন খারিজ করে কলকাতা হাই কোর্ট।
এর পরেও কুশল গ্রেফতার না হওয়ায় পুলিশের বিরুদ্ধে কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগ নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয় মৃতার পরিবার। গত ১৪ জুন আইপিএস অফিসার দময়ন্তী সেনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের বিশেষ তদন্তকারী দল বা সিট গঠন করার নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট। সিট তদন্ত শুরু করলেও বিষয়টি যায় সুপ্রিম কোর্টে। সেখানে অন্তর্বর্তী জামিনের আবেদন করেন কুশল। কিন্তু শীর্ষ আদালতের রক্ষাকবচ কুশল পাচ্ছেন না পরিষ্কার হতেই গত ১৩ জুলাই বাড়ি থেকেই কুশলকে গ্রেফতার করে সিট।
তবে এফআইআর দায়ের হওয়ার এত দিন পরে গ্রেফতার করায় পুলিশের ভূমিকা সমালোচিত হয়। সেই বিতর্ক আর বাড়তে না দিতেই গ্রেফতারির এক মাসের মধ্যে তড়িঘড়ি পুলিশ চার্জশিট জমা করল বলে মনে করছেন অনেকে। চার্জশিটে সিট দাবি করেছে, ৫০ জনের সাক্ষী নেওয়া হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ নথি এবং তথ্য-প্রমাণ পরীক্ষার জন্য ফরেন্সিক ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। সে সবের কয়েকটির রিপোর্ট এসেছে। তবে কয়েকটির রিপোর্ট আসা এখনও বাকি। পরীক্ষার সব রিপোর্ট এলে পরে নতুন ধারা যুক্ত করে সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট পেশ করা হতে পারে বলে জানানো হয়েছে।
চার্জশিটে সিট জানিয়েছে, তদন্তে তারা নিশ্চিত, বিয়ের সময়ে তো বটেই, পরেও নানা সময়ে পণ নেওয়া হয়েছে রসিকার বাবা-মায়ের থেকে। রসিকার উপরে এ নিয়ে মানসিক অত্যাচার চালানোরও প্রমাণ মিলেছে। এক সময়ে মনোরোগ চিকিৎসকের প্রয়োজন হয় রসিকার। কিন্তু সেই চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে রসিকার স্বামী বা শ্বশুরবাড়ির তরফে পদক্ষেপ করা হয়নি বলেও উল্লেখ রয়েছে চার্জশিটে। কুশলের পরিবারের কেউ এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি। রসিকার বাবা মহেন্দ্র বলেন, ‘‘লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ফল পাচ্ছি। দ্রুত বিচার শেষে দোষীরা শাস্তি পাক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy