Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Sahitya Parishad Sectary Election

ক্ষমতা দখলের টক্কর, ‘বিশৃঙ্খলা’ সাহিত্য পরিষদে

সম্প্রতি পরিষদের নতুন কর্মাধ্যক্ষদের বাছাই নিয়ে অশান্তি চরমে ওঠে বলে অভিযোগ। কার্যত মারমুখী সদস্যদের বাদ-বিসম্বাদে পরিষদের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়েছে বলেও অনেকের আক্ষেপ।

সাহিত্য পরিষৎ ভবন।

সাহিত্য পরিষৎ ভবন। —ফাইল চিত্র।

ঋজু বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০২৪ ০৭:৫১
Share: Save:

উনিশ শতকের মনীষীদের মহার্ঘ স্মৃতি। চোদ্দ শতকের শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের পুঁথির মতো বাংলার ইতিহাসের সম্পদ। এমন অনেক কিছু যেন বন্ধ সংগ্রহশালায় কার্যত গুহার আঁধারে বন্দি। বাংলা ও বাঙালির চিন্তা, মেধা চর্চার দলিল ছন্নছাড়া পড়ে আছে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ নামের ঐতিহাসিক প্রতিষ্ঠানটির অন্দরে। উনিশ শতকীয় প্রতিষ্ঠানটির প্রশাসন, পরিচালনা, অমূল্য নথির সংরক্ষণ থেকে সরকারি অনুদানের সদ্ব্যবহার ঘিরে অভিযোগে সরব সারস্বত সমাজের একাংশ।

সম্প্রতি পরিষদের নতুন কর্মাধ্যক্ষদের বাছাই নিয়ে অশান্তি চরমে ওঠে বলে অভিযোগ। কার্যত মারমুখী সদস্যদের বাদ-বিসম্বাদে পরিষদের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়েছে বলেও অনেকের আক্ষেপ। পরিষদের কার্যনির্বাহী সমিতির সদ্য প্রাক্তন সদস্য তথা গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারীদের অনেকে আইনি লড়াইয়ের কথাও ভাবছেন। তবে পরিষদের নবনির্বাচিত সম্পাদক রমেন সর এবং বিদায়ী সভাপতি প্রবীণ অধ্যাপক বারিদবরণ ঘোষ সব কিছুই নিয়ম মেনে হয়েছে বলে দাবি করেছেন। যদিও পরিষদের সদস্যদের একাংশের অভিযোগ, কর্মাধ্যক্ষদের মধ্যে প্রভাবশালী একটি গোষ্ঠী বছরের পর বছর ক্ষমতা আঁকড়ে রেখেছে। সদস্যেরা বেশির ভাগ জানতেও পারেন না যে কখন কী ঘটছে, কারা কর্মাধ্যক্ষ হচ্ছেন।

গত রবিবার পরিষদের বার্ষিক অধিবেশনে নতুন কর্মাধ্যক্ষদের নাম ঘোষণার সময়ে বিদায়ী সভাপতি শত অনুরোধেও একটি প্যানেলের বাইরে কারও নাম পড়েননি বলেও অভিযোগ। এই নিয়ে তুমুল বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। পরিষদের নিয়মাবলীতে রয়েছে, কার্যনির্বাহী সমিতির মনোনীত কর্মাধ্যক্ষদের নামের বাইরে কোনও নাম কিছু সদস্য পেশ করলে, গোপন ব্যালটে ভোট হওয়া উচিত। অছিদের একাংশ তা বললেও সভাপতি শোনেননি।

রমেন বলছেন, “আমাদের প্যানেলের পাল্টা প্যানেল যাঁরা খাড়া করছেন, তাঁরা নিয়ম অনুযায়ী ১ ফাল্গুনের মধ্যে নাম দিতে পারেননি।” বারিদবরণও পাল্টা প্যানেলের পদ্ধতিগত ত্রুটির কথা বলছেন। প্রাক্তন সহ-সভাপতি স্বাগতা দাস মুখোপাধ্যায় এ বার রমেনদের প্যানেলে থাকতে চাননি। পাল্টা প্যানেলে গ্রন্থশালা অধ্যক্ষ হিসেবে তাঁর নাম ছিল। প্রবীণ গ্রন্থাগারিক স্বাগতার দাবি, ১ ফাল্গুনের আগে কোনও কর্মাধ্যক্ষেরই নাম জমা পড়েনি। তিনি বলেন, “৩ মার্চ কার্যনির্বাহী সমিতির সভায় বার বার অনুরোধেও সভাপতি আমাদের প্যানেলের নাম নেননি। তখন তা আমরা তৎকালীন সম্পাদককে দিই। পরিষদের নিয়ম অনুযায়ী, পয়লা চৈত্রের আগে তা করা হয়।’’

পরিষদের কয়েক বছর আগের সম্পাদক, অধ্যাপক শক্তিসাধন মুখোপাধ্যায়ও মনে করেন, ‘‘এ ক্ষেত্রে সভাপতি বার্ষিক অধিবেশনে অছিদের কথা শুনে ভোট করাতেই পারতেন।’’ রমেন এবং তাঁর ঘনিষ্ঠদের অভিযোগ, অধিবেশনে সভাপতির মাইক চেপে ধরে চাপ দেওয়া হয়। স্বাগতা-সহ সভার অনেকে আবার রমেনের ঘনিষ্ঠদের আচরণ নিয়ে সরব। পরিষদে গণতান্ত্রিক আবহ ফেরাতে তাঁরা আইনি লড়াইয়ের পরিকল্পনা করছেন।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার অধ্যাপক তথা পরিষৎ সদস্য রাজ্যেশ্বর সিংহ মর্মাহত, ‘‘ব্রিটিশ লাইব্রেরি বাংলা বইয়ের সর্বজনীন নেট-নথি তৈরি করছে। যাদবপুরে সুকান্ত চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে রবীন্দ্র রচনা সম্ভারও নেটে রয়েছে। কিন্তু পরিষৎ ডিজিটাল নথি তৈরিতে অনাগ্রহী।” যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শব্দকল্প’ নামের বিপুলায়তন বিবর্তনমূলক অভিধানের কাজেও পরিষৎ সাহায্য করে না বলে অভিযোগ। বহু বিশিষ্ট ব্যক্তির মূল্যবান বই সংরক্ষণেও খামতির অভিযোগ রয়েছে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy