Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Electrical Wires

বিকল কেব্‌ল খুঁজতেই চার ঘণ্টা, বাসিন্দাদের রাত কাটল রাস্তায়

বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হওয়ার অভিযোগ পেয়ে বিকল কেব্‌লের সন্ধানে নেমে হিমশিম খেলেন সিইএসসি-র কর্মী ও শ্রমিকেরা। রাস্তা ও ফুটপাত ভেঙেচুরে প্রায় চার ঘণ্টা পরে তাঁরা বুঝতে পারলেন, বিভ্রাট হওয়া কেব্‌ল ঠিক কোন জায়গায় আছে।

ন্যায়রত্ন লেনে এক দিকে রাস্তা কাটার পরে কেব্‌লের খোঁজে অন্য দিকে চলছে ফুটপাত ভাঙার কাজ। শুক্রবার রাতে।

ন্যায়রত্ন লেনে এক দিকে রাস্তা কাটার পরে কেব্‌লের খোঁজে অন্য দিকে চলছে ফুটপাত ভাঙার কাজ। শুক্রবার রাতে। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২৪ ০৬:২৯
Share: Save:

চিকিৎসা করতে গিয়ে চিকিৎসক রোগীর শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের খোঁজ করছেন তাঁর পরিজনের কাছে! এ যেন সেই দশা। রাস্তার কোথায় কেব্‌ল, জানা নেই। সঙ্গে নেই নির্দিষ্ট করে কেব্‌ল ফল্ট নির্ধারণের কোনও যন্ত্র। গাঁইতি আর বেলচা দিয়ে একের পর এক রাস্তা, ফুটপাত আন্দাজে ভাঙা হচ্ছে। তবু ক্ষতিগ্রস্ত কেব্‌লের দেখা মিলছে না। বিদ্যুৎ-বিভ্রাটের কারণ যে কেব্‌ল, সেটি কোথায়, তার খোঁজ করা হচ্ছে পাড়ার বাসিন্দাদের কাছে! কেন এমন পরিস্থিতি, তা জানতে শনিবার সিইএসসি-র সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে বিষয়টি এড়াতে রীতিমতো ঠেলাঠেলি পড়ে যায় আধিকারিকদের মধ্যে।

এমনই পরিস্থিতি ছিল শুক্রবার রাতে, শ্যামবাজারের ফরিয়াপুকুর এলাকার ন্যায়রত্ন লেনে। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হওয়ার অভিযোগ পেয়ে বিকল কেব্‌লের সন্ধানে নেমে হিমশিম খেলেন সিইএসসি-র কর্মী ও শ্রমিকেরা। রাস্তা ও ফুটপাত ভেঙেচুরে প্রায় চার ঘণ্টা পরে তাঁরা বুঝতে পারলেন, বিভ্রাট হওয়া কেব্‌ল ঠিক কোন জায়গায় আছে। ক্ষুব্ধ পাড়ার বাসিন্দাদের কাছে তাঁরা স্বীকারও করলেন, সেখানে নতুন কাজ করতে এসেছেন। রাস্তার কোন অংশে কেব্‌ল আছে, সেটা তাঁরা বুঝতে পারছেন না। এমনকি, কোনও আধুনিক যন্ত্রও তাঁদের কাছে নেই, যার সাহায্যে ওই কেব্‌লের খোঁজ মিলতে পারে।

অনলাইনে অভিযোগ কিংবা বিল জমা নেওয়ার ব্যবস্থা করেছে সিইএসসি। কিন্তু, বিদ্যুৎ-বিভ্রাটের মোকাবিলায় সংস্থার পরিকাঠামো মান্ধাতার আমলের। শুক্রবার রাতে এমনই অভিযোগ করেছেন ন্যায়রত্ন লেনের বাসিন্দারা। দীপঙ্কর কর্মকার নামে এক বাসিন্দা জানান, রাত সাড়ে দশটা নাগাদ গোটা পাড়ার বিদ্যুৎ চলে যায়। রাত ১২টা নাগাদ সিইএসসি-র কর্মীরা কাজ শুরু করেন। দু’ঘণ্টা ধরে এক জায়গায় গর্ত খুঁড়ে তাঁরা দেখেন, কেব্‌ল সেখানে নেই! ফের উল্টো দিকের ফুটপাত ভাঙা শুরু হয়। তিনি বলেন, ‘‘কেব্‌লের অবস্থান বোঝার জন্য মধ্য রাতে লোকের বাড়িতে কড়া নেড়ে জানতে চাওয়া হয়, মিটার ঘর কোন দিকে? রাত ৩টে নাগাদ জানা যায়, কেব্‌ল রয়েছে প্রথমে যে জায়গাটি খোঁড়া হয়েছিল, তারই আশপাশে। ওঁরা আমাদের থেকে জানতে চান, কেব্‌ল কোথায় রয়েছে!’’

বাসিন্দারা জানান, ওই কর্মীরা বার বারই বলছিলেন, কেব্‌ল খুঁজে পেলে অস্থায়ী সংযোগ দিতে বেশি সময় লাগবে না। বাস্তবে সেটাই হয়। ভোর ৫টা নাগাদ অস্থায়ী সংযোগের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়। বাসিন্দাদের প্রশ্ন, একটি জরুরি পরিষেবায় কেব্‌লের হদিস পেতে সিইএসসি-র মতো সংস্থার কেন এত সময় লাগবে? শ্যামবাজার কালীবাড়ির উল্টো দিকের ফুটপাতের নীচেও কেব্‌লের সন্ধান করতে গিয়ে সিইএসসি-র কর্মীদের এমন অবস্থা হয় বলে অভিযোগ। কসবা থেকেও একই খবর পাওয়া গিয়েছে। সেখানে তাঁরা কাজ না করে ফিরেও যান বলে খবর।

বাসিন্দাদের দাবি, কাজ করতে আসা এক কর্মী এমনও জানান, তাঁদের যে স্ক্যানার রয়েছে, তাতে ১০ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে কেব্‌ল ফল্ট হলে ধরা পড়বে। কিন্তু নির্দিষ্ট জায়গাটি চিহ্নিত করা খড়ের গাদায় সুচ খোঁজার মতো। যে কারণে কর্মী বা শ্রমিকদের মনে রাখতে হয়, কোথা দিয়ে কেব্‌ল গিয়েছে। শুক্রবার রাতে কাজ করতে আসা দলটি তাই প্রথম বার দীর্ঘ সময় ধরে কেব্‌ল খুঁজেছে। কখনও রাস্তা ভেঙে, কখনও ফিডার বক্সে বিদ্যুতের সংযোগ ঘটিয়ে শব্দ শুনে তাঁরা কেব্‌লের হদিস পান।

জরুরি পরিষেবায় এমন মান্ধাতার আমলের পরিকাঠামো কেন? এ দিন এ বিষয়ে কথা বলতে সিইএসসি-র তিন আধিকারিকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। এক জনের কথা মতো সামগ্রিক ঘটনা হোয়াটসঅ্যাপে জানালে তিনি জানান, এ নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ইমেল করেছেন। পরে তিনি আর কিছু জানাননি।

দ্বিতীয় আধিকারিক যোগাযোগ করতে বলেন জনসংযোগ আধিকারিকের সঙ্গে। তাঁকে বেশ কয়েক বারের চেষ্টায় ফোনে পাওয়া গেলে তিনি ফের জানান, এ নিয়ে দ্বিতীয় ওই আধিকারিকের সঙ্গেই কথা বলতে। সেই চেষ্টাও সফল হয়নি।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy