কাফে কফি ডে।—ফাইল চিত্র।
বিয়ের দেখাশোনা চলছে একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত অয়ন্তিকা ঘোষালের। অনলাইন ম্যাট্রিমনিয়াল সাইটে আলাপ হওয়া এক যুবক দেখা করতে চেয়েছিলেন অয়ন্তিকার সঙ্গে। কিন্তু কোথায় হবে সাক্ষাৎ? যুবক বলেছিলেন, ‘দেখা হোক কাফে কফি ডে-তেই’— উত্তর দিতে বেশি সময় নেননি অয়ন্তিকা।
গত জানুয়ারিতে সাত পাকে বাঁধা পড়েছিলেন অভিনেত্রী অঙ্কিতা মজুমদার। স্বামী সৌমিত্রর সঙ্গে তাঁরও প্রথম সাক্ষাৎ এক সিসিডি-তেই।
ব্যবসায়ী, চাকুরে, অভিনেতা কিংবা সাধারণ কলেজপড়ুয়া— শহরবাসীর বহু ‘প্রথম পদক্ষেপ’-এর সাক্ষী এই কাফে চেন সিসিডি। সম্প্রতি সংস্থার কর্ণধার ভি জি সিদ্ধার্থের আত্মহত্যা কোনও ভাবেই মেনে নিতে পারছেন না সিসিডি-প্রেমীরা। যে সংস্থার কফি শপে বসে শুরু হয়েছিল বহু মানুষের জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, তারই কর্ণধারের মৃত্যু যেন হঠাৎ শেষ হয়ে যাওয়া ছোটগল্প! জীবনের প্রথম কত কিছুই তো জড়িয়ে আছে এই কফি চেনের সঙ্গে।
শহরের একটি ক্রিয়েটিভ অ্যান্ড ডিজিটাল মিডিয়া এজেন্সির মালিক শ্রীপর্ণা মজুমদার। এক সময়ে অফিস ভাড়া নেওয়ার মতো আর্থিক সামর্থ্য ছিল না শ্রীপর্ণার সংস্থার। সেই সময়ে দীর্ঘ ক্ষণ সিসিডি-তে বসেই অফিসের কাজ সারতেন তিনি। বলছিলেন, ‘‘সিসিডি-র বড় গুণ হল আতিথেয়তা। দীর্ঘ ক্ষণ সেখানে বসে থাকলেও কর্মীরা উঠে যেতে বলেন না। এই ব্যাপারটাই সংস্থাকে অন্য কফিশপগুলি থেকে আলাদা করে। অনেকটা যেন ঠিক কফি হাউসের মতো।’’ এক বার সিসিডি-র ফ্র্যাঞ্চাইজি নেওয়ার কথাও ভেবেছিলেন শ্রীপর্ণা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নানা কারণে তাঁর সেই ইচ্ছা পূরণ হয়নি।
গত ১২ বছরে এমন সম্ভবত কোনও দিন যায়নি, যে দিন কোনও কফি শপে পা পড়েনি অভিনেতা অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের। টালিগঞ্জে কফি-পাগল হিসেবে ‘নাম’ রয়েছে অনিন্দ্যর। আমেরিকা থেকে ফোনে তিনি বলেন, ‘‘এই সংস্থাই কফি বিষয়টিকে সাধারণ মানুষের কাছে সহজলভ্য করে তুলেছিল। ছিমছাম অন্দরসজ্জা এবং কফির গুণগত মান— সিসিডি-র এই ব্যাপারটাই আমাকে সবচেয়ে বেশি টানে।’’ বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা হোক, কিংবা প্রযোজক-পরিচালকদের সঙ্গে মিটিং, অনিন্দ্যের প্রথম পছন্দ কাফে কফি ডে। সংস্থার কর্ণধারের আত্মহত্যার ঘটনার জন্য সংস্থার বিজনেস মডেলই দায়ী বলে মনে করেন অভিনেতা। তাঁর যুক্তি, ‘‘কয়েক বছর ধরেই লোকসানে চলছিল সংস্থা। সিসিডি-র কর্তাদের আগে থেকে সতর্ক হওয়া উচিত ছিল।’’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘আমার মতে, শহরের প্রতিটি মোড়ে আউটলেট খোলার সিদ্ধান্তটাই ভুল ছিল। লাভের পরিমাণ কমা সত্ত্বেও ব্যবসা বাড়ানো উচিত হয়নি।’’
আপাদমস্তক ভদ্রলোক ছিলেন ভি জি সিদ্ধার্থ— জানাচ্ছেন একটি ভিডিয়ো গেম নির্মাণ সংস্থার মালিক অরিজিৎ ভট্টাচার্য। বলছিলেন, ‘‘এক বার বেঙ্গালুরুতে ওঁর (ভি জি সিদ্ধার্থ) সঙ্গে আলাপ হয়েছিল। খবরটা পাওয়ার পর থেকে খারাপ লাগছে!’’ ক্লায়েন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ কিংবা অফিস মিটিং— এ ব্যাপারে সিসিডি অরিজিতেরও প্রথম পছন্দ। তাঁর কথায়, ‘‘সিসিডি-র কর্মীদের ব্যবহার আমাকে মুগ্ধ করে। এই কফি শপ চেনটি আমার কেরিয়ারের অনেক উত্থান-পতনের সাক্ষী।’’
ব্যবসায় উত্থান-পতন থাকে। কিন্তু কাফে কফি ডে-র আড্ডাটা যেন হারিয়ে না যায়। মনেপ্রাণে এটাই চাইছেন শহুরে কফিবিলাসীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy