প্রতীকী ছবি।
সপ্তাহ দুয়েক আগে এক চোখে লাল আর চুলকানির সমস্যা নিয়ে মায়ের সঙ্গে চেম্বারে এসেছিল বছর তেরোর কিশোর। চেনা সংক্রমণ কনজাংটিভাইটিস মনে করেই প্রেসক্রিপশন লিখে দিয়েছিলেন চিকিৎসক। ছ’দিন পরে ফোনে কিশোরের মা জানান, ছেলের দুটো চোখই লাল হয়ে গিয়েছে। চিকিৎসক প্রশ্ন করে জানতে পারেন, হাল্কা জ্বরও এসেছে। দেরি না-করে তিনি আরটি-পিসিআর পরীক্ষার কথা বলেন। দিন কয়েক বাদে আবার ফোন। কোভিড পজ়িটিভ রিপোর্ট এসেছে ছেলের।
চক্ষু চিকিৎসক জ্যোতির্ময় দত্ত বলছেন, “গত এক বছরে অন্যান্য উপসর্গের সঙ্গে কনজাংটিভাইটিস নিয়ে আসা রোগী বড়জোর পাঁচ জনকে পেয়েছি। তবে শুধু কনজাংটিভাইটিস নিয়ে এসে কোভিডের অন্য উপসর্গের লক্ষণ পরে প্রকাশ পাওয়ার ঘটনা এই প্রথম। সেটাই বাড়াচ্ছে দুশ্চিন্তা।” তবে কি কনজাংটিভাইটিস হলেই সতর্ক থাকতে হবে রোগীকে?
উঠে আসছে ভিন্ন মতও। একদল চিকিৎসক মানতে নারাজ যে, কনজাংটিভাইটিস কোভিডের একমাত্র উপসর্গ হতে পারে। তাঁদের মতে, কোভিড ১৯-এর প্রথম পর্বে অন্যান্য লক্ষণের সঙ্গে এই উপসর্গ নিশ্চয়ই ছিল। কিন্তু তা বিভিন্ন কারণে প্রকাশিত হয়নি। চিকিৎসক
শৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “এক বছর আগেও চেম্বারে কনজাংটিভাইটিসের উপসর্গ নিয়ে প্রতি বছরের মতোই রোগী আসছিলেন। পরে শুনেছি এঁদের কয়েক জন কোভিডে আক্রান্ত হন। এক জন তাতে মারাও যান।
কিন্তু তখন কোভিড নিয়ে সারা বিশ্বেই নতুন নতুন তথ্য বেরোচ্ছিল আর তা খণ্ডনও করা হচ্ছিল। দীর্ঘ লকডাউন এবং আনলক-পর্বের বিধিনিষেধের গেরোয় হারিয়ে যান এই রোগীরা। এই সময়ে বেশি করে সামনে আসছে কনজাংটিভাইটিসের উপসর্গ।” ‘রিজিয়োনাল ইনস্টিটিউট অব অপথ্যালমোলজি’ (আর আই ও)-র ডিরেক্টর অসীম ঘোষ আবার জানাচ্ছেন, কম হলেও তাঁরা কোভিডের সহ-উপসর্গ হিসেবে কনজাংটিভাইটিস পেয়েছেন।
নিজের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে চোখের চিকিৎসক এবং একটি বেসরকারি চক্ষু হাসপাতালের কর্ণধার দেবাশিস ভট্টাচার্য আবার বললেন, “শুধুই কনজাংটিভাইটিসের উপসর্গযুক্ত কোভিড রোগী গত এক বছরের করোনা-পর্বে আমরা পাইনি। কোভিড রোগীর অন্য উপসর্গের সঙ্গে কনজাংটিভাইটিসের সমস্যার কথা পড়েছি। তবে এমন রোগীও আমাদের হাসপাতালে আসেননি।”
যদিও ‘স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন’-এর প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান, পরজীবী বিশেষজ্ঞ অমিতাভ নন্দী বলছেন, “বেশ কয়েক জন কোভিড সংক্রমিতের ক্ষেত্রে অন্য উপসর্গের সঙ্গে কনজাংটিভাইটিস পেয়েছি। তবে তা অনেক কম সংখ্যক।”
অথচ জ্বর, সর্দি-কাশি, স্বাদ-গন্ধ চলে যাওয়ার মতো সাধারণ উপসর্গের বাইরে আরও যে লক্ষণ এখন সামনে আসছে, তারই একটি কনজাংটিভাইটিস। এই মত ইংল্যান্ডের চেশায়ারের ওয়েরিংটনের স্বাস্থ্যকর্মীদের।
করোনা-পর্বের ন’মাসের মাথাতেই অবশ্য ইউরোপিয়ান জার্নাল অব অপথ্যালমোলজি তাদের গবেষণাপত্রে কোভিডের একক উপসর্গ হিসেবে কনজাংটিভাইটিসের পক্ষে তুরস্কের বাস্কেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি বিভাগের এক স্বাস্থ্যকর্মীর তথ্য তুলে ধরেছিল। ওই স্বাস্থ্যকর্মীর চোখ লাল হয়ে গিয়েছিল, তা থেকে অনর্গল জল পড়ছিল, এবং তিনি ফোটোফোবিয়ায় ভুগছিলেন। এক কোভিড রোগীর সংস্পর্শে আসায় তাঁর আর কোনও উপসর্গ না থাকা সত্ত্বেও করোনা পরীক্ষা হয়েছিল। রিপোর্ট প্রথমে নেগেটিভ আসে। কিন্তু মা সংক্রমিত হলে তাঁর দ্বিতীয় বার পরীক্ষা করা হয়। সেই রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে। এর পরেই ওই যুবকের ক্ষেত্রে কোভিডের আগের ও পরের শারীরিক পরিস্থিতি বিচার করে চিকিৎসকেরা এই সিদ্ধান্তে আসেন যে, তাঁর ক্ষেত্রে কোভিডের একমাত্র উপসর্গ ছিল কনজাংটিভাইটিস। বছর তেরোর ওই কিশোরের ক্ষেত্রেও কি এমনটাই ঘটেছে?
কোভিড-১৯ নিয়ে এখনও গবেষণার বিস্তার ঘটে চলেছে। ফলে কোনও তথ্যই উড়িয়ে দিচ্ছেন না চিকিৎসকেরা। তবে সতর্কতার
বিষয়ে সহমত সকলেই। তাঁদের পরামর্শ, মাস্ক আর হাত ধোয়া ভুললেই ফের বিপদ ঘনিয়ে আসবে। গরমে চশমা বা রোদচশমাকে সঙ্গী না করলে চোখ থেকেও বিপদ হতে পারে। বাসে-ট্রেনে যাতায়াতের সময়ে মাথা ঢেকে, ফেসশিল্ড পরতে বলছেন তাঁরা। না হলে কোভিডের ঢেউ আবার আছড়ে পড়তে দেরি নেই। মনে রাখতে হবে, প্রতিষেধক এখনও বড় জনগোষ্ঠীর কাছেই অধরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy