প্রস্তুতি: এক দিন পরেই বাংলা নববর্ষ। চলছে ক্যালেন্ডার তৈরির কাজ। বড়বাজারে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
একটা সময়ে নববর্ষের গন্ধ মেখে হাজির হত বাংলা ক্যালেন্ডার। হালখাতায় মিষ্টির প্যাকেটের পাশাপাশি কদর পেত নতুন ক্যালেন্ডারও। দেব-দেবী হোক বা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য— আলোচ্য বিষয় ছিল তার ছবিও। তবে বঙ্গজীবনে বাংলা তারিখের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ফিকে হয়েছে ক্যালেন্ডারের চাহিদাও। যেটুকু চাহিদা রয়েছে, তাতেও ভাগ বসিয়েছে টেবিল ক্যালেন্ডার।
শহরের ক্যালেন্ডার ব্যবসায়ীদের একাংশ জানাচ্ছেন, বাংলা নববর্ষে ক্যালেন্ডার বাজারের ২০ শতাংশও আর অবশিষ্ট নেই। যেটুকু বেঁচে রয়েছে, তা শহরতলির দৌলতে। ক্যানিং স্ট্রিটের এক ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘আগে শুধুমাত্র বাংলা নববর্ষের সময়েই গোটা কলকাতায় তিন থেকে চার কোটি টাকার ব্যবসা হত। করোনার আগেও ভাল ব্যবসা হয়েছে। কিন্তু করোনার পরে ব্যবসা কমতে কমতে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে।’’ তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘এখন কত জনকে বাড়িতে ক্যালেন্ডার ঝুলিয়ে রাখতে দেখতে পান বলুন তো?’’
বাংলা ক্যালেন্ডারের ব্যবসা যে তেমন আর নেই, সে কথা শোনা গেল ক্যানিং স্ট্রিটের আর এক ব্যবসায়ী প্রবীর চৌধুরীর মুখেও। তিনি বললেন, ‘‘বাংলা তারিখ মনে থাকলে তবে তো ক্যালেন্ডারের ব্যবসা থাকবে। আগে এই সময়ে আমরা দিনরাত এক করে কাজ করতাম। অতিরিক্ত কর্মী নিতাম। দু’মাস আগে থেকে বায়না, ডেলিভারি চলত। কিন্তু সে সব এখন কোথায়?’’
বাংলা ক্যালেন্ডারের ব্যবসা ফিকে হয়ে যাওয়ার কারণ কী? করোনার জেরে ব্যবসায়িক মন্দা, কাগজ-কালি থেকে শুরু করে মজুরির দাম বেড়ে যাওয়া না কি চাহিদায় ভাটা?
ব্যবসায়ীদের মুখে উঠে আসছে এই সব কারণই। তাঁদের মতে, শহুরে বাঙালির কাছে আগেকার দেওয়ালে ঝোলানো ক্যালেন্ডারের থেকে টেবিল ক্যালেন্ডার অনেক বেশি আকর্ষণীয়। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই ক্যালেন্ডারের চাহিদা কমেছে। এ ছাড়া মোবাইলের বাড়বাড়ন্তে তারিখ-সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস দেখতে ক্যালেন্ডারের প্রয়োজনীয়তা অনেকটাই ফুরিয়েছে আগের থেকে।
বড়বাজারে টেবিল ক্যালেন্ডারের খোঁজে আসা এক বিমা সংস্থার কর্মীর গলাতেও উঠে এল সেই কথা। তিনি বললেন, ‘‘আগে ব্যবসার প্রচারের জন্য নববর্ষে ক্যালেন্ডার দিতাম। লোকজন ঘরে ঝুলিয়ে রাখতেন। তাঁরা খুশি হতেন, আমার প্রচার হত। কিন্তু এখন ক্যালেন্ডার কেউ ঝোলাতেই চাইছেন না। বাধ্য হয়েই এ বার টেবিল ক্যালেন্ডারের বায়না দিয়েছি।’’
টেবিল ক্যালেন্ডারের বরাত যে ভাল আসছে, তা স্বীকার করে নিচ্ছেন বড়বাজারের ব্যবসায়ীদের একাংশ। অঙ্কিত সাহা নামে এক ব্যবসায়ী বলছেন, ‘‘আগে সাধারণত ব্যবসা হত ইংরেজি নববর্ষের সময়ে। কিন্তু এই বছর দেখছি বাংলা নববর্ষেও টেবিল ক্যালেন্ডারের চাহিদা বেড়ে গিয়েছে। রকমারি নকশার ক্যালেন্ডারের খোঁজে ক্রেতারা আসছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy