গর্ভস্থ শিশুকে নির্ধারিত সময়ের আগে বার করে নেওয়ার ঘটনা চিকিৎসাশাস্ত্রে নতুন কিছু নয়। অন্তঃসত্ত্বা মায়ের স্বাস্থ্যের কথা ভেবে অনেক সময়েই চিকিৎসককে এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়। বিশেষ করে যদি অন্তঃসত্ত্বার রক্তচাপ অতিরিক্ত হয়ে যায়। এর পরে সেই সদ্যোজাত শিশুর স্বাস্থ্য বুঝে তার চিকিৎসা শুরু করা হয়। তাকে সুস্থ করে স্বাভাবিক জীবনে ফেরানোটাই সেই মুহূর্ত থেকে চিকিৎসকের কাছে নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। তবে এ সবের জন্য আদালতের দ্বারস্থ হতে হয় না। কারণ, এখানে দুটো জীবনকেই রক্ষার লড়াই থাকে।
সেখানে ৩৪ সপ্তাহের এক অন্তঃসত্ত্বাকে কেন পৌঁছতে হচ্ছে আদালতে? কারণ তিনি নির্দিষ্ট সময়, অর্থাৎ ২৪ সপ্তাহ পেরিয়ে যাওয়ার অনেকটা পরে জানতে পেরেছেন যে, তাঁর গর্ভস্থ সন্তান ‘ওপেন স্পাইনা বাইফিডা’ রোগে আক্রান্ত। যে রোগের কারণে শিশু আজীবন শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে লড়বে। তবুও হাই কোর্টের এই রায় মানতে কষ্ট হচ্ছে। চিকিৎসক হিসেবে আমাদের কাজ জীবন বাঁচানো। সাড়ে আট মাসের সেই গর্ভস্থ শিশুকে পেটের ভিতরে থামিয়ে দেওয়ার পদ্ধতিকে আমি মানব না। আবার শিশুর জন্মের পরে তাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করে তিলে তিলে শেষ করার সমর্থকও আমি নই। মানসিক বা শারীরিক প্রতিবন্ধকতা এবং বিরল রোগ নিয়েও এ শহরে বহু শিশু বা তাদের আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকা পরিবার অসম লড়াই করে চলেছে। সে সব তবে কী?
এক জন অন্তঃসত্ত্বা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তাঁর ভ্রূণের ত্রুটির কথা জানতে পারেননি। এই না-জানতে পারাটা আমাদের চিকিৎসাশাস্ত্রের অক্ষমতা বলেই মানব। এমন শিশুকে তার মা-বাবা গ্রহণ করতে অপারগ হলে সরকারের উচিত তাকে গ্রহণ করা। মনে রাখতে হবে, সে এই সমাজের সম্পদ, এই সমাজের দায়িত্ব। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, বিদেশে এমন অনেক মানুষ আছেন, যাঁরা শুধু বিশেষ ভাবে সক্ষম শিশুদের দত্তক নিয়ে বড় করতেই আগ্রহী। কারণ, সেটাই তাঁদের কাছে চ্যালেঞ্জ। আমি নিশ্চিত, এ দেশে কেন, এ শহরেও তেমন মানসিকতার মানুষ আছেন। শুধু তাঁদের কাছে এই বার্তাটা পৌঁছে দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে সরকারি সহায়তার পদ্ধতিকে খানিকটা দ্রুত এবং সহজ করতে হবে।
শিশুদের চিকিৎসক আমি। ওরা কিছু না বললেও কষ্ট পড়ে নিতে হয়। সেই আমি যদি ওদের কথা না বলব, তবে কে বলবে ওদের জন্য? ওদের জীবন নিয়ে সব সিদ্ধান্তই তো আমাদের বড়দের চাপিয়ে দেওয়া।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy