কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম। —ফাইল চিত্র
শহরে বেআইনি নির্মাণ নিয়ে ফের কলকাতা পুরসভাকে ভর্ৎসনা করল কলকাতা হাই কোর্ট। বৃহস্পতিবার গার্ডেনরিচের বেআইনি নির্মাণ নিয়ে একটি জনস্বার্থ মামলার শুনানি ছিল হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চে। শুনানিতে পুর কর্তৃপক্ষ এবং রাজ্য প্রশাসনের সমালোচনা করেন প্রধান বিচারপতি। জানান বেআইনি নির্মাণ বন্ধ করতে প্রশাসনিক ইচ্ছার পাশাপাশি রাজনৈতিক সদিচ্ছাও থাকতে হবে।
বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি কলকাতা পুরসভার কৌঁসুলির উদ্দেশে বলেন, “খাতায়কলমে দেখে সবই ভাল লাগছে। আপনাদের নিয়ম আছে, কিন্তু সেগুলো কোনও কাজে লাগে না। আধিকারিকদের হাত বেঁধে রাখলে চলবে না। তাঁদের হাত খুলে দিতে হবে। কোনও কাজের জন্য প্রশাসনিক ইচ্ছার পাশাপাশি রাজনৈতিক সদিচ্ছাও থাকতে হবে।” এই প্রসঙ্গে তিনি একটি উপমা টেনে বলেন, ‘‘অস্ত্রোপচার সফল কিন্তু রোগী মৃত।”
গার্ডেনরিচে গত ১৭ মার্চ একটি নির্মীয়মাণ পাঁচ তলা বহুতল ভেঙে পড়ে পাশের ঝুপড়ির উপরে। সেই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। ঘটনার পর বিস্তর সমালোচনার মুখে পড়তে হয় কলকাতার পুর প্রশাসনকে। ওই বহুতল যে বেআইনি ভাবে তৈরি করা হয়েছিল, তা মেনে নেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। তিনি ওই এলাকার বিধায়কও বটে। ঘটনায় পুরসভার তরফে তিন জন ইঞ্জিনিয়ারকে শোকজ় করা হয়। তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত চলছে।
বৃহস্পতিবারের শুনানিতে পুরসভার উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, “আপনাদের অফিসের সামনে হকার বসে আছে, আপনারা তা-ই সারাতে পারছেন না। আর এই সব নিয়ে আপনারা আইন দেখাচ্ছেন? এগুলো অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতি।” বিধাননগরে বাড়ি ভাঙার নির্দেশ দেওয়া হলেও অনেকগুলি কার্যকর হয়নি বলে ক্ষোভপ্রকাশ করেন তিনি। অবৈধ বাড়ি থেকে বাসিন্দাদের সরানোর ব্যাপারে রাজ্য অসুবিধার কথা জানালেও বেআইনি নির্মাণ বন্ধে কী করা হয়েছে, তার কৈফিয়তও চান প্রধান বিচারপতি। এর আগেও এই মামলায় প্রধান বিচারপতির ভর্ৎসনার মুখে পড়েছে পুরসভা।
ক্ষোভের সুরে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘আবার বেআইনি নির্মাণ হবে, আবার লোক মারা যাবে, আবার ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। কিন্তু ইচ্ছার অভাব থাকলে কাজের কাজ কিছুই হবে না।” বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ গার্ডেনরিচে বাড়ি ভেঙে পড়ায় নিহতদের পাঁচ লক্ষ টাকা এবং আহতদের দেড় লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিয়েছেন।
গার্ডেনরিচকাণ্ডে গ্রেফতার হওয়া প্রোমোটার এবং স্থানীয় কাউন্সিলর শামস ইকবালকে নোটিস দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। একই সঙ্গে হাই কোর্ট জানিয়েছে, আদালতের পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ‘রেজিস্ট্রার অফ অ্যাশিয়োরেন্স’ বৈধ অনুমোদন নেই এমন নির্মাণের ক্ষেত্রে কোনও ব্যক্তিকে কোনও ধরনের ‘পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি’ কিংবা ওকালতনামা দিতে পারবেন না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy