সন্তানহারা: শাহনওয়াজ ফরিদের শোকার্ত মা। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র
বৃহস্পতিবার সকালে স্ত্রী এবং দুই সন্তানকে নিয়ে দিঘায় বেড়াতে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। তার আগে বুধবার সন্ধ্যায় এক বন্ধুর ফোন পেয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন ওই যুবক। এর পরে বুধবারই গভীর রাতে ক্ষতবিক্ষত ও রক্তাক্ত অবস্থায় ফুটপাতে পড়ে থাকতে দেখা যায় তাঁকে। পুলিশ এসে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। পুলিশের দাবি, শাহনওয়াজ ফরিদ (২৭) নামে ওই অ্যাপ-ক্যাব চালককে খুন করা হয়েছে। এই ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে চার জনকে গ্রেফতার করেছেন তদন্তকারীরা। তাদের নাম ভাও শাহিদ, তোতলা আজাদ ওরফে আলম, চিপ্পু ওরফে আমির রেহান ও শাহবাজ। আজ, শুক্রবার তাদের আদালতে তোলা হবে।
পুলিশ জানায়, নিহতের বাড়ি কড়েয়া থানা এলাকার তিলজলার শিবতলা লেনে। বুধবার গভীর রাতে পার্ক সার্কাস ময়দান সংলগ্ন ফুটপাতে পড়ে থাকতে দেখা যায় তাঁকে। শাহনওয়াজের দেহ যেখানে উদ্ধার হয়েছে, তার কয়েক মিটার দূরেই ডিসি (এসইডি)-র অফিস। পাশেই পুলিশের একটি কিয়স্ক। যদিও সেটি বন্ধ বহুদিন ধরে।
লালবাজার জানিয়েছে, ওই রাতে পার্ক সার্কাস ময়দানে শাহনওয়াজের সঙ্গে বসে মদ্যপান করছিলেন তাঁর বন্ধু লাডলা, মনু এবং তনভির। তাঁদের থেকে কিছুটা দূরে বসে মদ্যপান করছিলেন ওই চার অভিযুক্ত। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্তকারীরা জেনেছেন, শাহনওয়াজেরা সেখানে বসে জোরে জোরে গালিগালাজ করছিলেন। যার প্রতিবাদ করে অভিযুক্তেরা। দু’পক্ষের মধ্যে এ নিয়ে সাময়িক গোলমাল হলেও পরে ঠিক হয়ে যায়। এর মধ্যে শাহবাজ তার বান্ধবীকে সেখানে নিয়ে এসে কিছুটা দূরে আলাদা ভাবে বসে। শাহনওয়াজেরা ফের গালিগালাজ করলে শাহবাজ প্রতিবাদ করে এবং দু’পক্ষের মধ্যে আবার গোলমাল হয়। এবং আবারও মিটমাট হয়ে যায়। এর মধ্যে শাহবাজ মোটরবাইকে চড়ে বান্ধবীকে নিয়ে ময়দান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময়ে মনু সেই বাইকে বোতল ছুড়ে মারেন বলে অভিযোগ। তাতে জখম হয় শাহবাজ। পুলিশ জানায়, এর পরে বান্ধবীকে পৌঁছে দিয়ে সেখানে ফিরে আসে শাহবাজ। তখনই দু’পক্ষের মধ্যে মারপিট বেধে যায়। শাহনওয়াজ ফোনে মনুর দাদাকে পুরো ঘটনার কথা জানালে তিনি দলবল নিয়ে সেখানে চলে আসেন। এরই মধ্যে শাহনওয়াজকে সামনে পেয়ে তাঁর বুকে ও মুখে ছুরি চালায় তোতলা আজাদ। জখম শাহনওয়াজ ফুটপাতের কাছে এসে পড়ে যান।
পুলিশ জানায়, রাত আড়াইটে নাগাদ টহল দিতে বেরিয়েছিলেন পার্ক স্ট্রিট থানার অতিরিক্ত ওসি অমিত চট্টোপাধ্যায়। তিনি পার্ক সার্কাস ময়দানের সামনে জটলা দেখে এগিয়ে যান। দেখতে পান, শাহনওয়াজ সেখানে পড়ে রয়েছেন। পুলিশ জানায়, শাহনওয়াজকে উদ্ধার করার সময়ে সেখানে আসে শাহবাজ ও শাহিদ। তারাও জখম হয়েছে বলে পুলিশকে জানায়। পুলিশ তাদের থানায় নিয়ে যায়। খুনের খবর পাওয়ার পরেই স্থানীয় থানায় যান কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা-প্রধান মুরলীধর শর্মা, ডিসি ডিডি (স্পেশ্যাল) দেবস্মিতা দাস এবং গুন্ডা দমন ও হোমিসাইড শাখার গোয়েন্দারা।
বৃহস্পতিবার শাহনওয়াজের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিবেশীরা ভিড় জমিয়েছেন সেখানে। কান্নায় ভেঙে পড়েছেন নিহতের মা রশিদা বেগম। তিনি জানান, ইদের ছুটিতে এ দিনই স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে দিঘায় যাওয়ার কথা ছিল শাহনওয়াজের। বুধবার সকাল থেকে তিনি বাড়িতেই ছিলেন। সন্ধ্যায় এক বন্ধু ফোন করে ডাকায় বাড়ি থেকে বেরোন তিনি। নিহতের এক দাদা শেখ ইসমাইল বললেন, ‘‘রাত ১টা নাগাদ শাহনওয়াজকে ওর স্ত্রী ফোন করেছিল। ভাই তখন জানায়, দশ মিনিটের মধ্যে ফিরে আসবে। পরে রাত তিনটে নাগাদ পুলিশ জানায়, ভাইয়ের দেহ উদ্ধার হয়েছে।’’ এ দিন থানার সামনে দাঁড়িয়ে শাহনওয়াজের স্ত্রী নামিরা জাহাঙ্গির অভিযোগ করেন, বন্ধুদের জন্যই খুন হয়ে গেলেন তাঁর স্বামী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy