নতুন নাগরিকত্ব আইন ও এনআরসি-র বিরোধিতায় শহিদ মিনার ময়দানে কলকাতার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের মিছিল। শনিবার। ছবি: সুমন বল্লভ
ওঁদের একা ছাড়তে চায়নি শহর!
বৃহস্পতিবারের মিছিলে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা মানুষজনকে ‘আপন’ ভেবে আশ্রয় দিয়েছিল কলকাতা। শনিবারও নতুন নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় ছাত্র-যুব সংগঠনের মিছিলে শামিল হতে এসেছিলেন শহরের বিভিন্ন প্রান্তের লোকজন। তাঁদের কথায়, ‘‘ছোট ছেলেমেয়েগুলো যাতে বিপদে না পড়ে, তা নিশ্চিত করতেই এসেছিলাম।’’
এ দিন শহিদ মিনার চত্বরে জড়ো হয়েছিলেন বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। সেখানেই তাঁদের সঙ্গে যোগ দিতে শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কেউ দল বেঁধে, কেউ বা অফিসফেরত হাজির হয়েছিলেন। যেমন পরিবার ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে এসেছিলেন বেনিয়াপুকুরের তবসুম আড়া। আবার অফিস থেকে ফেরার পথে শহিদ মিনারের সমাবেশে পৌঁছে গিয়েছিলেন মনীষা দাশগুপ্ত। তাঁর কথায়, ‘‘এ যেন দ্বিতীয় স্বাধীনতার লড়াই। কিছুটা হলেও হাঁটব।’’
‘‘লড়াই তো বটেই, তবে তা ভেদাভেদ দূর করার,’’ বলছিলেন বালিগঞ্জের বাসিন্দা মায়াঙ্ক সারিকা। মা শিপ্রা ও দিল্লিতে কর্মরত বোন নিধিকে নিয়ে মিছিলে এসেছিলেন মায়াঙ্ক। জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের উপরে পুলিশি তাণ্ডবের পরে দিল্লিতে প্রতিবাদ মিছিলে শামিল হয়েছিলেন নিধি। বললেন, ‘‘দেশটাকে ভাগ করে কী লাভ? তাই বাড়িতে ফিরে এই মিছিলে এলাম।’’
আর ভাগাভাগি নয়, মনুষ্যত্বের পরিচয়েই বাঁচতে চান প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া শাহনাজ পরভিন। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া আসিমা খাতুনের হাত ধরে তিনি বললেন, ‘‘মানুষ আতঙ্কিত। কেন হবে এমন?’’ যে ভাবেই হোক ধর্মনিরপেক্ষ ভারতকে বাঁচাতে হবে। তাই মিছিলে শামিল হয়েছেন বলে জানালেন আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গজলা পরভিন, ভিক্টোরিয়া কলেজের ইফরা তনবিরেরা। পড়ুয়াদের তোলা স্লোগানে গলা মেলাচ্ছিলেন টালিগঞ্জের তরুণী শ্রেয়সী চৌধুরী। বেসরকারি সংস্থার ওই কর্মীর মতে, ‘‘সকলকেই নামতে হবে। এটা পড়ুয়াদের একার লড়াই নয়।’’
মিছিলের ভিড়ে জলের বোতল বিলি করছিলেন নিউ মার্কেট চত্বরের বাসিন্দারা। তাঁদেরই এক জন মহম্মদ তনবির আশরফ বললেন, ‘‘এখানে থাকা সকলেই আমাদের ভাইবোন। হিন্দু, মুসলিম বলে আলাদা কিছু নেই। তাই ওঁদের জন্য কেক-জল-বিস্কুট নিয়ে এসেছি।’’ পড়ুয়াদের হাত শক্ত করতে কলেজ থেকে সোজা শহিদ মিনারে চলে এসেছিলেন শিক্ষক সৈকত চক্রবর্তী। ভাঙড়ের আন্দোলনকারীদের একাংশও এ দিন শামিল হয়েছিলেন মিছিলে। তাঁরা বললেন, ‘‘আমাদের আন্দোলনে পড়ুয়ারা পাশে ছিলেন। দেশের স্বার্থে ওঁদের পাশে থাকা আমাদের কর্তব্য।’’ ৩৫ বছর ধরে কলকাতায় থাকা ৭০ বছরের মহম্মদ শামসের আলিও পা মেলালেন মিছিলে। তাঁর কথায়, ‘‘এ দেশ সবার, লড়াইও সকলের।’’
মিছিল যখন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের সামনে, পড়ুয়ারা নিজেরাই মাইক বন্ধ করে দেন। জ্বলে ওঠে কয়েক হাজার মোবাইল টর্চ। সন্ধ্যার নমাজ শুরু হতেই বন্ধ হয়ে যায় স্লোগান। পরে এর জন্য স্থানীয় বাসিন্দারাই পড়ুয়াদের প্রশংসা করে জানান, অন্য ধর্মের প্রতি এই শ্রদ্ধাবোধই ভারতের পরিচয়।
সব শেষে জমায়েতে যবনিকা পড়ল ‘উই শ্যাল ওভারকাম...’-এর সুরে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy