তান্ত্রিকের ‘পরামর্শে’ প্রতিবেশীর শিশু কন্যাকে খুন করার অভিযোগ উঠেছে। প্রতীকী ছবি।
শারীরিক অসুস্থতা থেকে মুক্তি পেতে কখনও তান্ত্রিকের কথায় বড় ছেলের নাবালিকা মেয়ের হাতের দুই আঙুল কেটে নিয়েছে ঠাকুরমা। পুত্রসন্তানের আশায় সে কাজে সঙ্গী হয়েছে শিশুটির কাকিমাও। কখনও বিয়ের সাত বছর পরেও সন্তানধারণ না করতে পেরে তান্ত্রিকের কথায় প্রতিবেশীর ছেলেকে খুন করেছে মহিলা। এমনকি, তান্ত্রিকের কথায় অপুষ্টিতে ভোগা নিজের সন্তানকেই খুন করে ‘স্বাস্থ্যবান’ সন্তান পেতে চেয়েছে বাবা-মা, এমন ঘটনাও রয়েছে!
এমন সব ক’টি ঘটনাই এত দিন দেখা গিয়েছে গ্রামীণ এলাকা বা শহরতলিতে। কিন্তু, সোমবার খাস কলকাতার তিলজলার ঘটনা সেই হিসাবকে উল্টে দিয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। যেখানে সন্তান পেতে তান্ত্রিকের ‘পরামর্শে’ প্রতিবেশীর শিশু কন্যাকে খুন করার অভিযোগ উঠেছে। সেই তান্ত্রিকের খোঁজ মঙ্গলবার রাত পর্যন্তও পায়নি পুলিশ। এই পরিস্থিতিতে তন্ত্রবিদ্যার বিরুদ্ধে নাগরিক সচেতনতার নির্দেশিকা চেয়ে ফের আদালতে গিয়েছে বিজ্ঞান মঞ্চ। বীরভূমে ডাইনি অপবাদে প্রৌঢ় দম্পতিকে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ-সহ এমন একাধিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নাগরিক মনন উন্নয়নের নির্দেশিকা চেয়ে আগেই কলকাতা হাই কোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেছিল তারা।
মনোরোগ চিকিৎসক থেকে সমাজতত্ত্বের শিক্ষকদের দাবি, যে সব মানুষের আকাঙ্ক্ষার বাস্তব ভিত্তি নেই, তাদের চাহিদা যখন নিজের ক্ষমতার সীমা ছাড়ায়, তখনই তার জন্য এমন কিছু ঘটানো হয়। অভিযোগ, তন্ত্রসাধনার নামে সেই আকাঙ্ক্ষাকেই ইন্ধন দিয়ে অপরাধের জাল বোনা হয়।
এমনই অপরাধের উদাহরণ হিসাবে উঠে আসে ২০১৫-র অক্টোবরের ঘটনা। নিউ টাউনের মহিষগোটের কাছে খুন হয় বছর পাঁচেকের প্রীতি নস্কর। তদন্তে উঠে আসে, শিশুটির ঠাকুরমার অসুখ চিকিৎসা করিয়েও সারছিল না। শিশুটির কাকিমার পুত্রসন্তানের শখ থাকলেও মেয়ে হয়। এই অবস্থায় এক তান্ত্রিক তাদের পরামর্শ দেয়, বড় ছেলের মেয়ের হাতের আঙুল কেটে পুজো দিতে হবে। মহালয়ার ‘মাহেন্দ্রক্ষণে’ সেই কাজ করতে হবে। এর পরে মহালয়ার সকালে শিশুটি কাকার বাড়িতে ঢুকতেই তাকে ঘরে ঢুকিয়ে প্রথমে তর্জনী ও পরে কনিষ্ঠা কাটা হয় বলে অভিযোগ। শিশুটি চিৎকার শুরু করলে মুখে প্লাস্টিক চাপা দেওয়া হয়। এতে শ্বাসরোধ হয়ে মৃত্যু হয় তার। এর পরে পুজো সেরে আঙুল দু’টি ফেলে দেওয়া হয় বাড়ির পাশের কচুরিপানায়। সন্ধ্যায় দেহটি বস্তায় ভরে রান্নাঘরে রাখা হয়। রাতে শাশুড়ি এবং ছোট বৌমা মিলে দেহটি ছাদের ঘরে টেনে নিয়ে গিয়ে প্লাস্টিকে ভরে রেখে দেয়। রক্ত ধুয়ে ফেলতে ছাদের কলে কাচা হয় বস্তা। সিঁড়ির রক্ত মোছারও চেষ্টা হয়। কিন্তু মুছেও না যাওয়া সেই রক্তের ছোপই ধরিয়ে দেয় তাদের।
হাওড়ার গ্রামীণ এলাকায় নীলম গুপ্ত নামে এক মহিলা আবার সন্তানধারণের আশায় তান্ত্রিকের কথামতো প্রতিবেশীর তিন বছরের ছেলেকে খুন করে। পুলিশি জেরায় মহিলা দাবি করে, ভগবানকে তুষ্ট করতে এই কাজ করা নিয়ে তার অনুশোচনা নেই। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে বীরভূমে একই ভাবে তন্ত্রসাধক কিশোরের হাতে খুন হয় এক বালক। বলি দিলে সে নাকি আশ্চর্য ক্ষমতার অধিকারী হবে— এটা ভেবেই ওই কাজ করে সে। সজনেখালিতে আবার নিখোঁজ বালিকার দেহ উদ্ধারের পরে পুলিশ জানতে পারে, খুন করেছে মা-বাবা। পরে ধরা পড়ে এক তান্ত্রিক জানায়, রিকেট রোগে ভুগছিল মেয়েটি। তাই তাকে মেরে ‘স্বাস্থ্যবান’ সন্তানলাভের পথ বাতলে দিয়েছিল সে-ই।
তান্ত্রিক-যোগের আরও একটি ঘটনা ঘটে বাগুইআটিতে। স্বামীর সঙ্গে বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক রয়েছে, এই সন্দেহে এক তরুণী নিজের বোনকে বলি দিয়ে খুন করায় বলে অভিযোগ। বীরভূমের একটি শ্মশানে হাঁড়িকাঠের সামনে থেকে বোনের মুণ্ডহীন, নগ্ন দেহ উদ্ধার হয়। পুলিশ জানতে পারে, এলাকারই এক নাপিত তন্ত্রচর্চা করত। অভিযুক্ত তরুণী তার কাছে সাহায্য চাইলে সে-ই বোনকে বলি দেওয়ানোর ব্যবস্থা করে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy