Advertisement
২৭ ডিসেম্বর ২০২৪
Kerosene

খরচ তুলতে কেরোসিনে চলছে বাস!  বেলাগাম পরিবেশ দূষণের আশঙ্কা

ডিজ়েলের বদলে কেরোসিনের সঙ্গে পরিমাণ মতো মোবিল মিশিয়ে চলছে বাস-মিনিবাস।

—ফাইল চিত্র

—ফাইল চিত্র

ফিরোজ ইসলাম 
শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৫:৫৩
Share: Save:

করোনা পর্বে বাসের ভাড়া না বাড়লেও ডিজ়েলের দাম লাফিয়ে বেড়েছে। অভিযোগ, লিটার প্রতি ৮০ টাকা ছাড়িয়ে যাওয়া ডিজ়েলের খরচ সামলে বাস নামানো অসম্ভব বুঝে নিয়ম ভেঙে বিকল্প হাতড়াচ্ছেন অনেক বাসমালিক।

কী সেই বিকল্প? ডিজ়েলের বদলে কেরোসিনের সঙ্গে পরিমাণ মতো মোবিল মিশিয়ে চলছে বাস-মিনিবাস। কলকাতার একাংশ, শহরতলি ছাড়াও জেলা শহরের অল্প দূরত্বের রুটে এ ভাবে বাস চালিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন মালিকদের কেউ কেউ। আর এমনটা চলছে কেরোসিনের দহনে পরিবেশ দূষণ বেলাগাম হওয়ার আশঙ্কা সত্ত্বেও। এমনকি, বাসের যন্ত্রাংশের লোকসান বুঝেও এই বিকল্প পথ ব্যবহারের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।

দক্ষিণ কলকাতার একটি রুটের বাসমালিক জানান, করোনা পরিস্থিতিতে ডিজ়েলের মূল্যবৃদ্ধির ধাক্কা সামলে বাস চালাতে দিনে প্রায় ৮০০-৮৫০ জন যাত্রী প্রয়োজন। সেখানে দিনে মেরেকেটে যাত্রী হচ্ছেন ৪০০-৪৫০ জন। যাত্রীপিছু ১০ টাকা নিলেও কুলিয়ে ওঠা যাচ্ছে না। খরচ মিটিয়ে ঘরে কিছু টাকা আনতে ‘অন্য পথ’ নেওয়া ছাড়া উপায় নেই বলে দাবি তাঁদের। সারা দিনে বাসপিছু ৫০ লিটার ডিজ়েল
কিনতে লকডাউনের সময়ের তুলনায় প্রায় ৮০০ টাকা বেশি লাগছে। ওই টাকায় দু’জন কর্মীর দৈনিক খরচ মেটানো যায়, জানাচ্ছেন ওই বাসমালিক। ‘অন্য পথে’ কী ভাবে সামলাচ্ছেন ব্যবসা? তাঁর দাবি, ডিজ়েলের বদলে কেরোসিনে বাস চালান তাঁরা।

সারা দিনে যে পরিমাণ ডিজ়েল লাগত, সেই একই পরিমাণ কেরোসিন খোলা বাজার থেকে কিনছেন বাসমালিকেরা। সঙ্গে এক থেকে দেড় লিটার মোবিল মিশিয়ে ভরে নেওয়া হচ্ছে তেলের ট্যাঙ্কে। এতে মাইলেজ মিলছে ডিজ়েলের মতোই। খোলা বাজারে কেরোসিনের দাম লিটার প্রতি প্রায় ৫০ টাকা। কিন্তু এই চাহিদা বৃদ্ধির ফলে সম্প্রতি এর দামও বেড়ে হয়েছে ৬০ টাকার কাছাকাছি। কেরোসিনের ঘনত্ব কম। তাই ডিজ়েলের তুলনায় কম পিচ্ছিল। অটোমোবাইল বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, কেরোসিন দিয়ে গাড়ি চালালে ইঞ্জিনে শুষ্ক দহনের (ড্রাই বার্ন) আশঙ্কা বাড়ে। এতে যন্ত্রের ক্ষয় ছাড়াও তাপমাত্রা
বৃদ্ধিজনিত বিপত্তি এবং ইঞ্জিনে আগুন ধরে যাওয়ার আশঙ্কাও থাকে। এমনকি, তেল সরবরাহের পাম্পেরও ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। এই সব সমস্যা এড়াতে মোবিল মেশানো হয়।

রয়েছে অন্য বিপদও। বাজার চলতি কেরোসিন তেলে সালফার যৌগের পরিমাণ অনেক বেশি। ওই হার প্রায় ০.২ শতাংশের কাছাকাছি। ফলে কেরোসিনের দহনে দূষণের মাত্রা বহু গুণ বাড়ে। কিন্তু পরিবেশের ক্ষতির কথা কে ভেবেছেন? যন্ত্রের ক্ষতি সত্ত্বেও যেখানে ওই সাশ্রয়ের কথাই ভাবছেন মালিকেরা।

‘ওয়েস্ট বেঙ্গল বাস-মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর যুগ্ম সম্পাদক প্রদীপনারায়ণ বসুর মতে, “জেলা বা শহরতলিতে অসাধু বাসমালিকদের কেউ কেউ
লুকিয়ে-চুরিয়ে এমন কাজ করতে পারেন। তবে ওই পদ্ধতি সমর্থনযোগ্য নয়।” আবার ‘সিটি সাবার্বান বাস সার্ভিস’-এর টিটু সাহা বলেন, “বিএস-৪ মাত্রার গাড়িতে এমন কারচুপি সম্ভব নয়। পুরনো গাড়িতে কেউ করতে পারেন।” ‘অল বেঙ্গল বাস মিনিবাস সমন্বয় সমিতি’র রাহুল চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, “আমাদের সংগঠনের আওতার বেশির ভাগ বাস দূরপাল্লার। ওই সব বাসে এমন ঝুঁকি নেওয়া সম্ভব নয়।”

অন্য বিষয়গুলি:

Pollution Kerosene
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy