ঘাতক বাস। —ফাইল চিত্র।
নিছক ট্র্যাফিক বিধি লঙ্ঘনের মামলা শুধু নয়, বৈধ পারমিট ছাড়াই সম্পূর্ণ অন্য রুটে ছোটার অভিযোগ উঠেছে বাঘা যতীন উড়ালপুলে দুর্ঘটনার নেপথ্যে থাকা গড়িয়া স্টেশন-বাগবাজার রুটের বেসরকারি বাসটির বিরুদ্ধে। আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে কী ভাবে সম্পূর্ণ অন্য রুটে দিনের পর দিন ওই বাসটি যাত্রী নিয়ে চলেছে, সেই প্রশ্ন তুলছে বাসমালিক সংগঠনের নেতৃত্বই।
পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, শনিবারের দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ডব্লিউবি০৭জে২৮২৬ বাসটি ভারত স্টেজ-৩ (বিএস-৩) মডেলের। ২০১৬ সালের ১ এপ্রিল সেটির পারমিট রেজিস্ট্রেশন হয় সল্টলেক এআরটিও-র অধীনে। বাসের মূল রং হিসাবে সরকারি নথিতে নীল এবং হলুদ রঙের উল্লেখ রয়েছে। পারমিট পাওয়ার সময়ে বাসটির মূল রুট ছিল রাজচন্দ্রপুর থেকে আলিপুর কোর্ট। পরে ওই রুট পারমিট দেখিয়েই বাসটির ফিটনেস সার্টিফিকেট নেওয়া হয় বলে অভিযোগ। কিন্তু, বাস্তবে ওই রুটে না চলে রং পাল্টে বাসটি বাগবাজার-গড়িয়া স্টেশন রুটে ছুটছিল। অভিযোগ, আগের নীল-হলুদ রং পাল্টে বাসটিতে নীল-সাদা রং করা হয়। পুরনো রুটে বাসটির পারমিট সক্রিয় থাকলেও তার শংসাপত্রের মেয়াদ ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর ফুরিয়ে গিয়েছে। বাসটির পথকর, বিমা এবং দূষণ সংক্রান্ত নথির মেয়াদ অবশ্য ফুরিয়ে যায়নি। তবে, বাসটি সম্পূর্ণ ভোল বদলে যে ভাবে অন্য রুটে ছুটছিল, তা এক কথায় চমকে দেওয়ার মতো বলেই সংশ্লিষ্ট মহলের বক্তব্য। এমন ক্ষেত্রে দুর্ঘটনা ঘটলে আইনি জটিলতায় বিমার সুবিধা ক্ষতিগ্রস্তেরা পান না।
পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, বিএস-৩ মডেলের কোনও বাসকেই এই ভাবে অন্য রুটে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। একমাত্র বিএস-৪ এবং বিএস-৬ মডেলের বাস পরিবহণ দফতরের অনুমতি নিয়ে অন্য রুটে নিয়ে যাওয়া যায়। বাসমালিক সংগঠন-সহ যাত্রীদের অনেকের অভিযোগ, গড়িয়া স্টেশন থেকে ই এম বাইপাস ধরে বিভিন্ন রুটের যে সব বাস চলে তাদের অধিকাংশের বৈধ পারমিট নেই। প্রশাসনের একাংশের সঙ্গে যোগসাজশে এবং স্থানীয় স্তরে কিছু ‘বোঝাপড়া’ করে ওই সব বাস চলে বলে অভিযোগ। সরকারি পরিবহণ নিগমের কর্তাদের একাংশও গড়িয়া স্টেশন থেকে বাইপাস ধরে ‘নাম-গোত্রহীন’ বাসের ছড়াছড়ি নিয়ে ক্ষুব্ধ। বাইপাস দিয়ে এত বাস কী ভাবে চলে, সেই প্রশ্নও তুলেছেন তাঁরা।
ওয়েস্ট বেঙ্গল বাস মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপনারায়ণ বসু বলেন, ‘‘কিছু বাসমালিক স্থানীয় স্তরে যোগসাজশ করে পারমিট ছাড়াই গড়িয়া স্টেশন থেকে বাস চালান। এই অভিযোগ দীর্ঘদিনের। ওই সব বাস নিয়ে অস্বচ্ছতার একাধিক অভিযোগ রয়েছে।’’ সিটি সাবার্বান বাস সার্ভিসের সাধারণ সম্পাদক টিটু সাহা বলেন, ‘‘একটি বাসের পারমিট নথিভুক্ত হওয়ার পরে সেই বাস কোথায় চলছে, তা নিয়ে নজরদারি থাকা দরকার। সেখানে বড় ফাঁক রয়েছে।’’ কলকাতা বাস-ও-পিডিয়ার অন্যতম সংগঠক অনিকেত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পারমিট আছে এমন রুটে বাস চলছে দেখিয়ে চুপিসারে অন্য লাভজনক রুটে সরে যাওয়ার প্রবণতা অতি বিপজ্জনক। এতে যাত্রীদের স্বার্থ এবং জীবন দুই-ই বিপন্ন হয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy