Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Bara Bazar

পাঁচতলা থেকে শিশুদের ছুড়ে ফেলল পড়শি, বড়বাজারে মৃত ১

পড়শিরা পুলিশকে জানিয়েছেন, দিন পনেরো আগে বাচ্চাদের খেলাধুলো নিয়েই বিক্রমবাবুর সঙ্গে শিবকুমারের গোলমাল হয়।

মৃত শিশু শিভমের দিদা ও মা। নিজস্ব চিত্র।

মৃত শিশু শিভমের দিদা ও মা। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা 
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০২০ ০৩:৩৩
Share: Save:

তিনটি বাচ্চা মিলে টানা বারান্দায় প্রায়ই হইহই করে খেলত। রবিবারও খেলছিল। মেয়েটি চার বছরের, সঙ্গে তার দু’বছরের ভাই। সঙ্গী অন্য ছেলেটি বছর ছয়ের।

বাচ্চাদের এই হুড়োহুড়ি, চেঁচামেচি নিয়ে পাশের ঘরের পড়শি মাথা গরম করত প্রায়ই। অভিযোগ, এ দিন রেগেমেগে তিনটি বাচ্চাকেই পাঁচতলা থেকে ফেলে দিতে যাচ্ছিল সে। দেখতে পেয়ে এক মা কোনও রকমে মেয়েটিকে ধরে ফেলেন। কিন্তু অন্য দু’টি বাচ্চাকে সত্যিই ছুড়ে ফেলা হয় নীচে। দু’বছরের শিশু শিবম সাউ মারা গিয়েছে। ছ’বছরের বালক বিশাল সাউ আহত হয়ে নীলরতন সরকার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

রবিবার সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ বড়বাজার থানা এলাকার ১১৩ নেতাজি সুভাষ বসু রোডের ঘটনা। রাতে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা মুরলীধর শর্মা জানান, খুন এবং খুনের চেষ্টার অভিযোগে পড়শি শিবকুমার গুপ্তকে (৫৫) গ্রেফতার করা হয়েছে। পড়ে যাওয়া দু’টি শিশু একে অপরের আত্মীয়।

আরও পড়ুন: জ্বর, বমির উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন পুলিশ কর্মীর মৃত্যু

পুলিশ সূত্রের খবর, পাঁচ ফুটের সরু গলির উপরে পাঁচতলা বাড়িটিতে একাধিক পরিবারের বসবাস। মৃত শিশুর বাবা বিক্রম সাউ পাঁচতলায় থাকতেন। পেশায় গাড়িচালক। পাশেই ঘর শিবকুমারের। বিপত্নীক শিবকুমারও গাড়ি চালাত। তার বড় ছেলে নিজের স্ত্রীকে নিয়ে এই মুহূর্তে উত্তরপ্রদেশে গিয়েছেন। ছোট ছেলে এখানেই ছিলেন। ঘটনার সময়ে তিনি বাইরে গিয়েছিলেন জিনিস কিনতে।

ঘটনাস্থল: বড়বাজারের এখানেই পড়ে ছিল দুই শিশু। রবিবার। ছবি: আর্যভট্ট খান

পড়শিরা পুলিশকে জানিয়েছেন, দিন পনেরো আগে বাচ্চাদের খেলাধুলো নিয়েই বিক্রমবাবুর সঙ্গে শিবকুমারের গোলমাল হয়। পাশাপাশি ঘরের সামনে সরু বারান্দা। সেখানেই সব সময় বাচ্চাগুলি খেলত। জল নিয়ে নাড়াচাড়া করত। তাতেই বিরক্ত হয়ে বিক্রমবাবুদের সঙ্গে গোলমালে জড়িয়েছিল শিবকুমার। পড়শিদের অভিযোগ, তখনই সে হুমকি দিয়েছিল, বাচ্চারা ফের এ রকম করলে তাদের উপর থেকে ফেলে দেওয়া হবে। কিন্তু সেটা যে সত্যিই ঘটবে, তা ভাবতে পারেননি কেউই।

আরও পড়ুন: ডেঙ্গি-রুট ধরে করোনা, নজরে উঃ ২৪ পরগনা

আহত বিশাল সাউয়ের বাবা বুধন সাউ যেমন ঘটনার সময় বাড়িতেই ছিলেন। এমন যে ঘটে যাবে, ভাবতে পারেননি। পুলিশ জানায়, বিশালকে ছুড়ে ফেলা হলে সে প্রথমে তারের উপরে পড়ে। সেখান থেকে দোকানের টিনের চালে পড়ে তার পর মাটিতে পড়ে। এ কারণেই বেঁচে গিয়েছে সে।

উল্টো দিকের বাড়ির বাসিন্দা তারাদেবী সোনকার জানান, এ দিন সন্ধেয় তাঁর চোখের ওষুধ নীচে পড়ে গিয়েছিল। এক জনকে তুলে দেওয়ার জন্য বলবেন বলে বারান্দায় এসে দেখেন, সরু গলির উপর পড়ে রয়েছে একটি বাচ্চা। আর একটি বাচ্চাকে চ্যাংদোলা করে তুলে ফেলে দিচ্ছে শিবকুমার! তিনি বলেন, “আমি চিৎকার করে উঠি। কিন্তু তত ক্ষণে ও বাচ্চাটিকে ফেলে দেয়।” অরবিন্দ সাউ নামে আর এক পড়শি বলেন, “নানা বিষয়ে দুই পরিবারে গোলমাল হত। লকডাউনে টানা বাড়ি থাকায় ঘন ঘন ঝামেলা বাধত।”

শিবকুমার গুপ্ত।

আকাশ সোনকার নামে এক পড়শি ঘটনার সময়ে আশপাশে ছিলেন। বাচ্চা দু’টি পড়ে যাওয়ার খবর পেয়ে তিনি আর কয়েক জনকে নিয়ে দৌড়ে আসেন। তাঁরাই দু’টি বাইকে করে বাচ্চাদের তুলে প্রথমে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু সেটি কোভিড হাসপাতাল হওয়ায় তাঁরা যান বড়বাজারের একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে। কিন্তু বাচ্চাদের অবস্থা সঙ্কটজনক দেখে নার্সিং হোমের তরফে তাদের নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলা হয়। আকাশ বলেন, “নীলরতন সরকার হাসপাতালে গেলে ছোট বাচ্চাটিকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।” তার দেহ ময়নাতদন্তে গিয়েছে। তার বাবা বিক্রম সাউ হাসপাতালে বসে হাউহাউ করে কাঁদছিলেন। কথা বলার অবস্থায় ছিলেন না। আহত শিশুর বাবা, ভ্যানচালক বুধন সাউ হাসপাতাল চত্বর থেকে জানান, তাঁর ছেলে এখন ট্রমার মধ্যে আছে। মাথায়, হাতে-পায়ে চোট লেগেছে। তবে কথা বলছে ধীরে ধীরে। পুলিশ সূত্রেও জানা গিয়েছে, তার অবস্থা স্থিতিশীল। বুধন বলেন, ‘‘এ রকম ভাবে যে বাচ্চাদের ফেলে দিল, তার কঠোরতম শাস্তি চাইছি।’’

স্তম্ভিত শিবকুমারের পরিবারও। মহেশ শর্মা নামে শিবকুমারের এক পরিচিত জানান, শিবকুমারের বড় ছেলে আমন এখন উত্তরপ্রদেশে রয়েছেন। আমনই এ দিন সন্ধেয় ফোন করে মহেশকে বলেন, তাড়াতাড়ি যেন তিনি ওঁদের বাড়িতে যান। পড়শির সঙ্গে এ দিন ফের কোনও গোলমাল হয়েছে। মহেশ জানান, তিনি যখন পৌঁছন, তত ক্ষণে বাচ্চা দু’টিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Bara Bazar Murder Crime
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE