মা নবনীতা বড়ুুয়া এবং ছেলে রৌনকের আশ্রয় এখন হোটেল। নিজস্ব চিত্র।
এক মাস আগে, সেপ্টেম্বরে বাবাকে হারিয়েছে ছোট্ট রৌনক। এ বার মাথার উপর ছাদটাও হারাতে বসেছে অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। বিয়ের পর যে বাড়িতে সংসার পেতেছিলেন, ২০ বছরের সেই ঠিকানা ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন নবনীতা বড়ুয়া। সম্বল ছিল শুধুই আধার কার্ড। মা এবং ছেলের আশ্রয় এখন হোটেল। কত দিন সেখানে থাকতে হবে, জানেন না বৌবাজারের মদন দত্ত লেনের রৌনকরা। রৌনকদের আশঙ্কা একটাই, দিন পেরিয়ে হোটেল-বাসের সময়কাল মাস, বছরে গিয়ে ঠেকবে না তো!
শুক্রবারের ঘটনা। মেট্রোর কাজের কারণে মদন দত্ত লেনের অন্তত দশটি বাড়িতে ফাটল ধরে। তার মধ্যে একটি রৌনকদের। শুক্রবার ভোরে মদন দত্ত লেনের বাড়িতে তখন ঘুমিয়ে ছিলেন রৌনক আর তার মা, ভোর ৪টে নাগাদ ঘুম ভেঙে যায় কিশোরের। রৌনকের কথায়, ‘‘ছাদে কিছু একটা পড়েছিল। সেই শব্দ শুনে ঘুম ভেঙে যায়। তখনই পাশের বাড়ি থেকে এক জন ডাকতে শুরু করেন। বলেন, বাড়িতে ফাটল ধরেছে। এখনই আধার কার্ড নিয়ে বার হতে হবে। আধার কার্ড নিয়ে কোনও রকমে জামা পরে রাস্তায় বেরিয়ে যাই।’’
সেই থেকে রৌনকরা ঘরছাড়া। কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র বলে, ‘‘পৌনে ৫টা থেকে আমরা রাস্তায়। প্রায় ১০টা পর্যন্ত আমরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলাম। তার পর আসি হোটেলে।’’
শুক্রবার ভোরে ওই আধার কার্ডই ছাড়া আর কিছুই নিয়ে বার হতে পারেনি রৌনকরা। জামা, কাপড়, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পর্যন্ত সঙ্গে আনতে পারেনি তারা। সেপ্টেম্বরে বাবা মারা গিয়েছিলেন বলে পরীক্ষা দিতে পারেনি রৌনক। অক্টোবরে সেই পরীক্ষা। কিন্তু নিজের বই খাতা পর্যন্ত সেই ভোরে নিয়ে বার হতে পারেনি রৌনক।
আজ, রবিবার আবার বাড়িতে গিয়ে বইখাতা নিয়ে এসেছেন রৌনক ও তাঁর মা। সঙ্গে জামা কাপড়, বাসনপত্র আর কিছু জিনিস। বাকি সবই পড়ে রয়েছে বাড়িতে। নবনীতা জানালেন, ২০ বছরের সংসার, স্মৃতি সবই ফেলে এসেছেন। কবে ফিরবেন, সেটাই এখন চিন্তার। নবনীতার কথায়, ‘‘হোটেলে এসে দেখলাম অনেকেই গত ছ’মাস ধরে ঘরছাড়া হয়ে এখানে পড়ে রয়েছেন। আমার পক্ষে এটা এক প্রকার অসম্ভব।’’ কেন, তাও জানিয়েছেন নবনীতা। ছেলে যে পুল কারে স্কুলে যায়, তা হোটেলে আসতে রাজি নয়। পুল কার ধরতে গেলে ছেলেকে দীর্ঘ পথ হাঁটতে হবে। আরও অনেক সমস্যা রয়েছে।
২০১৯ সালে দুর্গা পিতুরি লেনের বাড়িগুলিতে একই কারণে ফাটল ধরার কারণে ঘরছাড়াদের অনেকেই আজও ঘরে ফিরতে পারেননি। নবনীতার আশঙ্কা, তাঁদেরও সে রকম হবে না তো! প্রশ্নের জবাব কে দেবে, সেটাই এখন প্রশ্ন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy