E-Paper

বুদ্ধের অধরা স্বপ্নের শোকে একাকার ওঁরা

নন্দীগ্রাম-উত্তর কালে সংস্কৃতি জগতের বিশিষ্টেরা বেশির ভাগই সংস্কৃতিপ্রেমী মুখ্যমন্ত্রীকে ছেড়ে যাচ্ছিলেন। অনেকে বলেন, মৃণাল, সুনীল বা সৌমিত্রের মতো বরণীয় বাঙালিকে তখনও ভরসাস্থল বলে মনে করতেন বুদ্ধদেব।

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সঙ্গে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়।

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সঙ্গে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র।

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০২৪ ০৬:৪৫
Share
Save

হতে পারেন তিনি রাজনীতিবিদ। কিন্তু দলীয় রাজনীতির আতশকাচে সব সম্পর্কের ব্যাখ্যা মেলে না। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের প্রয়াণের পরে তাঁর বহু দিনের সুহৃদ মৃণাল সেন, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে সম্পর্কও শোকের আবহে বিশেষ ছায়া ফেলেছে।

নন্দীগ্রাম-উত্তর কালে সংস্কৃতি জগতের বিশিষ্টেরা বেশির ভাগই সংস্কৃতিপ্রেমী মুখ্যমন্ত্রীকে ছেড়ে যাচ্ছিলেন। অনেকে বলেন, মৃণাল, সুনীল বা সৌমিত্রের মতো বরণীয় বাঙালিকে তখনও ভরসাস্থল বলে মনে করতেন বুদ্ধদেব। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর প্রয়াণের দিনেই সমাজমাধ্যমে মৃণাল এবং বুদ্ধদেবের শেষ দেখার ছবিটি পোস্ট করেন মৃণাল-পুত্র কুণাল সেন। ভারতীয় সময় অনুযায়ী শুক্রবার সকালে শিকাগো থেকে কুণাল বলছিলেন, ‘‘বাবার ২০১৭ সালের জন্মদিনের পরের দিন, ১৫ মে বুদ্ধবাবু শেষ বার আমাদের বাড়িতে বাবার সঙ্গে দেখা করতে যান।’’ ছবিটিতে টেবিলের পাশে বুদ্ধদেবের মুখোমুখি বসে ঈষৎ শীর্ণ মৃণাল। ২০১৮ সালের শেষে মারা যান বর্ষীয়ান চলচ্চিত্রকার। মৃণাল সেনের শেষ জন্মদিনে সম্ভবত নিজে অসুস্থ বলেই দেখা করতে যাননি বুদ্ধদেব।

তাঁর বাবা এবং প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর সম্পর্ক নিয়ে কুণাল বলছেন, “বাবা অনেক সময়েই ব্যক্তিগত পরিসরে সিপিএমের সমালোচনা করতেন। আবার বামফ্রন্ট, সিপিএম এবং বুদ্ধদেবের প্রতি ওঁর ভালবাসাও ছিল। বুদ্ধদেবের সাহিত্য, সিনেমা অনুরাগের কারণেও এই ভালবাসা।” কুণালের মতে, মৃণালের সিপিএম-প্রীতির মধ্যে এক ধরনের স্ববিরোধ ছিল। তিনি বলেন, “বাবা অনেককে বলতেন, আমায় ইন্টারভিউ কোরো না, আমি একটু বাদেই পরস্পরবিরোধী কথা বলে ফেলতে পারি।’’

বুদ্ধদেবের কাছের লোক সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও তাঁর পরিজনের সঙ্গে পরে সৌহার্দ্য গড়ে ওঠে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সৌমিত্রের চিকিৎসায় সর্বতো ভাবে পাশে ছিল তৃণমূল সরকার। কিন্তু তা বলে সময় বিশেষে যে কোনও সরকারের সমালোচনা করতেই পিছপা হননি সৌমিত্র। বুদ্ধদেবের শেষ যাত্রার দিনে সৌমিত্র-কন্যা পৌলোমী বসু বলছিলেন, “নন্দীগ্রাম পর্বের পরেও বাবা কিন্তু একটি খবরের কাগজে বাম সরকারের সমালোচনা করেন। তাতে বুদ্ধবাবুর সঙ্গে ওঁর সম্পর্ক পাল্টায়নি। বুদ্ধবাবু যে ভাবে সমালোচনা গ্রহণ করেছিলেন, তা-ও শেখার।”

রাজনীতিবিদ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের ঠিক, ভুল ছাপিয়ে সুনীল-জায়া স্বাতী গঙ্গোপাধ্যায়ের এ দিনের অনুভূতিটি এক জন প্রিয়জন বিয়োগের। সম্প্রতি সিপিএমের দলীয় মুখপত্রের গ্রন্থাগারে সুনীলের বেশির ভাগ বই দিয়েছেন স্বাতী। তিনি বলছেন, “সুনীল কিন্তু কোনও দলের সমর্থক ছিল না। তবে আমি শুনেছি, ওঁরা বইয়ের যত্ন করেন। এটা ভেবেই বই দেওয়া!’’ আর বুদ্ধদেব প্রসঙ্গে স্বাতীর মন্তব্য, “খালি মনে হচ্ছে, এক জন খাঁটি মানুষ চলে গেলেন, যিনি সত্যিই রাজ্যটার ভাল করতে চেয়েছিলেন।” বুদ্ধদেবের প্রসঙ্গে এখন পরোক্ষ ভাবে সিঙ্গুরের অধরা স্বপ্নের কথাও উঠে আসছে। স্বাতী বলেন, “উনি অনেক দূর এগিয়েওছিলেন, কেন পারলেন না, তা আর বলতে চাই না!” পৌলোমীও এক সুর, “বুদ্ধবাবু যা চেয়েছিলেন, তা না-পারার কষ্ট সহজে যাবে না।”

সুনীলের প্রয়াণের কিছু দিন পরে বুদ্ধ-জায়া মীরা ভট্টাচার্যের ফোন পেয়ে ভাল লেগেছিল স্বাতীর। তিনি বলছেন, “আমি এখনই ওঁদের বিরক্ত করব না! তবে কিছু দিন বাদে অবশ্যই ওঁকে ফোন করে কথা বলব। ওঁদের দু’জনকেই বড্ড ভাল লাগে আমার।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Buddhadeb Bhattacharjee Death Sunil Gangopadhyay

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।