হাতে হাত: সামনের সারিতে নবীন প্রজন্ম। রবিবার। নিজস্ব চিত্র
তারুণ্যের অস্ত্রে শান দিয়ে এ বারের ব্রিগেড মাতালো বামেরা। কলকাতার রাস্তায় মিছিলের অগ্রভাগে, স্লোগানে সামনের সারিতে জায়গা করে নিল বামেদের তরুণ-ব্রিগেড। তরুণ কণ্ঠের স্লোগানে উঠে এল ‘টেট দুর্নীতি’, মইদুল মিদ্যার মৃত্যুর ঘটনা, নৈরাজ্যের কথা। ব্রিগেডের মঞ্চে সঞ্চালকের ভূমিকায় এসএফআইয়ের সর্বভারতীয় যুগ্ম সম্পাদক দীপ্সিতা ধর, জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ঐশী ঘোষকে সামনে এনে সেই তারুণ্যের অস্ত্রেই শান দিল বামেরা। সঞ্চালকের ভূমিকায় মঞ্চে দেখা গেল অভিনেতা বাদশা মৈত্রকেও। সব মিলিয়ে বিধানসভা ভোটের আগে বামেদের মিছিল মাতিয়ে রাখলেন ‘তরুণ-তুর্কিরাই’।
শেষ কবে বামেদের ব্রিগেড অভিযানে এমন তারুণ্য-ভরা ছবি দেখা গিয়েছে, মনে করতে পারলেন না বরাহনগরের বাসিন্দা পঞ্চাশোর্ধ্ব নবারুণ পাল। তাঁর কথায়, ‘‘এত বছর ব্রিগেডে আসছি। এত দিন চুলে পাক ধরা নেতাদেরই সামনের সারিতে দেখা যেত। সামনের সারিতে ছাত্র-যুবদের এ ভাবে অনেক দিন চোখে পড়েনি। এটার খুব দরকার ছিল।’’
এ বার ব্রিগেডের এক সপ্তাহ আগে থেকেই ‘টুম্পা সোনা’ গানের প্যারোডির পাশাপাশি নতুন প্রজন্মকে নিজেদের দিকে টানতে বাম ছাত্র-যুবদের দিয়েই কলকাতা তথা শহরতলির একাধিক জায়গায় প্রচার চালানো হয়েছিল। নাচ-গানের মাধ্যমে প্রচারের ওই উদ্যোগকে বলা হচ্ছিল ‘ফ্ল্যাশ মব’। সেই প্রচারের সাফল্য এ দিন ব্রিগেডের ছবি বুঝিয়ে দিয়েছে।
শনিবার রাত থেকেই দূরবর্তী জেলা থেকে ব্রিগেডে আসতে শুরু করা বাম কর্মী-সমর্থকদের জন্য মাঠের শেষ প্রান্তে রাত কাটানোর জায়গা করা হয়েছিল দলের তরফে। রবিবার বেলা বাড়তেই শহরের বিভিন্ন রাস্তা দিয়ে মিছিল ঢুকতে শুরু করে ময়দানে। প্রতিটি মিছিলেই সামনে ছিলেন তরুণ-তরুণীরা। কাউকে দেখা গেল খালি গায়ে, এক হাতে আইএসএফ ও অন্য হাতে এসএফআই এঁকে ঘুরতে। কোথাও দেখা গেল, কর্মী-সমর্থকেরা টুম্পা গানের প্যারোডি চালিয়ে গাড়িতে চেপে ব্রিগেডে যাচ্ছেন। প্রবীণদের দেখা গেল মিছিলের পিছনের সারিতে।
নদিয়ার গয়েশপুর থেকে ব্রিগেডে এসেছিলেন তৃতীয় বর্ষের ছাত্র রীতম দাস। মিছিলে স্লোগান দিচ্ছিলেন। ধর্মতলার ওয়াই চ্যানেলে তাঁকে প্রশ্ন করতেই উত্তর, ‘‘লাগামছাড়া দুর্নীতি, নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে আমাদের মতো কমবয়সিদের আওয়াজ তুলতেই হবে।’’
বাবার সঙ্গে মিছিলে হেঁটে ব্রিগেডে এসেছিলেন টালিগঞ্জের বাসিন্দা তন্বী বন্দ্যোপাধ্যায়। সদ্য কলেজ পাশ করা তন্বী বলেন, ‘‘এটাই আমার প্রথম ব্রিগেড। আমিই বাবাকে বলেছিলাম ব্রিগেডে আসব।’’ এমন হাজার তরুণ-তরুণী এ বার ব্রিগেড ভরিয়েছেন।
মাঠের এক পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছিলেন মহেশতলার বাসিন্দা কুহেলি বিট, সৌমিতা মুখোপাধ্যায়েরা। সিপিএমের পতাকা নিয়ে ছবি তুলতে থাকা কুহেলি বলেন, ‘‘বছরের পর বছর টেট না হওয়া, পরীক্ষায় দুর্নীতির প্রতিবাদ জানাতেই এ বার ব্রিগেডে আসা।’’
তবে সিপিএম ‘বুড়োদের দল’-- এমনটা মানতে নারাজ কাশীপুরের বাসিন্দা বিজন চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘‘১৯৮৬ থেকে ব্রিগেডে আসছি। বামপন্থীরা কোনও দিন তরুণ-যুবদের পিছনের সারিতে রেখে রাজনীতি করে না। বরাবরই তাঁদের পরিণত করে রাজনীতিতে আনে।’’
এসএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘তরুণ সমাজ তৃণমূল সরকার এবং বিজেপির প্রতি বীতশ্রদ্ধ। তৃতীয় বিকল্প যে সম্ভব, সেটা তারা বিশ্বাস করতে শুরু করেছে। টেট দুর্নীতি, বছরের পর বছর শিক্ষক নিয়োগ না হওয়া তাঁদের ক্ষোভ আরও বাড়িয়ে তুলেছে। তাই এ বারের ব্রিগেডে তরুণ প্রজন্মের ভিড়।’’
সব মিলিয়ে একুশের নির্বাচনের আগে বামেদের ব্রিগেড আরও রঙিন করল তরুণদের জমায়েত। পাশাপাশি বাড়তি অক্সিজেন জোগাল আলিমুদ্দিন স্ট্রিটেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy