টালা সেতু ভাঙার কাজ চলছে। বৃহস্পতিবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক এবং সুমন বল্লভ
রাস্তার দু’ধারে প্রায় ৫০০ মিটার দূরত্বে দু’টি প্লাস্টিকের তাঁবু। তাতেই রয়েছেন টালা সেতু ভাঙার কাজে নিযুক্ত প্রায় ৫০ জন। একটি তাঁবুর সঙ্গে অন্যটির শ্রমিকদের যোগাযোগ নেই। স্যানিটাইজ়ারের বোতল, পানীয় জল, রান্নার সামগ্রী, এমনকি তাঁদের কাজের সময়ও আলাদা। এক তাঁবুর শ্রমিকেরা যখন মাস্ক, গ্লাভস পরে সেতু ভাঙছেন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে অন্য তাঁবুর শ্রমিকদের তখন রাখা হচ্ছে বিশ্রামে!
নিরাপত্তার সমস্ত রকম বন্দোবস্ত রেখে টালা সেতু ভাঙার কাজ চললেও লকডাউনের শহরে থমকেই রয়েছে অন্য সেতুগুলির সংস্কার। প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও বেশ কয়েকটি সেতুর সামান্যতম স্বাস্থ্য পরীক্ষাও করা যাচ্ছে না করোনা-আতঙ্কের এই পরিস্থিতিতে। মাঝেরহাট সেতুর কাজও বন্ধ। সেতু বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, সড়ক-সহ শহর এলাকায় সব রকম নির্মাণ প্রকল্পে ছাড় দিয়েছে কেন্দ্র। যেখানে প্রকল্প এলাকায় কর্মীরা রয়েছেন, বাইরে থেকে কর্মী আনার দরকার নেই, সেখানে কাজ চালানো যাবে বলে জানানো হয়েছে। তবু কাজ বন্ধ থাকলে সব দিক থেকেই পিছিয়ে যাওয়ার তালিকা দীর্ঘায়িত হবে। লকডাউন উঠলে মানুষের ভিড়ে কাজ করার থেকে এই সময়টাকেই কাজে লাগালে ভাল। তাঁদের আরও বক্তব্য, এক বছরের মধ্যে টালা সেতুর কাজ শেষ করার কথা বলেছে সরকার। এই পরিস্থিতিতে কাজ বন্ধ রাখলে তা কখনওই সম্ভব নয়। এক সেতু বিশেষজ্ঞের কথায়, “যে কোনও সেতুর সংস্কার বা স্বাস্থ্য পরীক্ষার এটাই আদর্শ সময়। কারণ, গাড়ি চলাচল বা রাস্তায় মানুষের বেরোনো বন্ধ। যে কাজ রাতের শহরে রাস্তা ফাঁকা থাকবে ভেবে করা হত, তা অনায়াসেই এখন করা যেতে পারে।” তা ছাড়া, মাঝেরহাট বা টালার মতো যে সেতুগুলি রেললাইন সংলগ্ন, অর্থাৎ যেখানে কাজ করতে গেলে রেলের অনুমতি লাগে, সেখানেও কাজ সেরে ফেলা সহজ হবে। কারণ, যাত্রিবাহী ট্রেন চলাচলও এখন বন্ধ।
মাঝেরহাট এবং টালা সেতু পূর্ত দফতরের অধীন। এ ছাড়া, কেএমডিএ-র অধীনে শহরের প্রায় ১৭টি সেতু রয়েছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটির কাজ আগে হয়ে গেলেও দ্বিতীয় দফায় অন্তত আটটি সেতুর সংস্কার হওয়ার কথা ছিল। করোনা-আতঙ্কে যা গত মার্চ থেকেই বন্ধ। কেএমডিএ-র এক আধিকারিক জানান, টালা সেতু বন্ধ হওয়ায় চিৎপুর উড়ালপুলের উপরে চাপ বাড়তে পারে ভেবে সেটির সংস্কার শুরু হয়েছিল। সেই কাজও ৮৫ শতাংশ হয়ে আটকে রয়েছে। একই ভাবে কাজ বাকি কসবার কাছে বিজন সেতু, বাইপাসের অম্বেডকর সেতু, দক্ষিণ কলকাতার দুর্গাপুর সেতু, চেতলা উড়ালপুল, টালিগঞ্জের করুণাময়ী সেতু, ঢাকুরিয়া সেতু, বাইপাস থেকে প্রিন্স আনোয়ার শাহ কানেক্টরের জীবনানন্দ সেতুর কাজ। ওই আধিকারিকের কথায়, “বিজন সেতুর সংস্কারের জন্য কিছু দিন আগে উদ্যোগী হই আমরা। এই লকডাউন কাজ সারার আদর্শ সময় ভেবে অল্প সংখ্যক শ্রমিক দিয়ে কাজ করানোর কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু অনুমতি পাওয়া গেল না।”
মাঝেরহাটে সেতুর নীচে বিশ্রাম শ্রমিকদের। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক এবং সুমন বল্লভ।
কেএমডিএ-র সিইও অন্তরা আচার্য বলেন, “ফাঁকা রাস্তার সুযোগ নিয়ে দ্রুত কাজটা করার চেষ্টা করা যেতে পারে বলে ভেবেছিলাম আমরা। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, রাস্তা পরীক্ষা করার জন্যও সব মিলিয়ে প্রায় ১০০ জন লোক লাগছে। এই পরিস্থিতিতে ঝুঁকি নেওয়া ঠিক হবে না। তা ছাড়া, টেকনিক্যাল কাজ করে যে দল, তার সদস্যেরাও এই পরিস্থিতিতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছেন। ফলে কিছুই করা যাচ্ছে না।” টালা সেতুর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “টালায় হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু অন্য কোনও সেতুর কাজ করাতে গিয়ে ঝুঁকি নিতে চাইছি না। শ্রমিকদের নিরাপত্তার কথাও ভাবতে হয়।” লালবাজার জানাচ্ছে, সেতু সংস্কারের কাজ করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করলে নিশ্চয়ই দেখা হবে। তবে যুগ্ম কমিশনার পদমর্যাদার এক পুলিশকর্তা বলেন, “জরুরি পরিস্থিতিতে কেউ কাজ করতে চাইলে সংক্রমণের ঝুঁকি সংক্রান্ত বিষয়টি দেখে নিয়ে অনুমতি দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু আবেদনই তো কেউ করছেন না।”
পূর্ত দফতরের এক কর্তা বলেন, “এই পরিস্থিতিতে
অনেকেই সেতু সংস্কারকে জরুরি কাজ হিসেবে দেখতে চান না।” ওই আধিকারিকই জানান, টালার মতো কাজ করাতে প্রায় একশো জন শ্রমিককে রাখা হয়েছিল মাঝেরহাট সেতু চত্বরে। কিন্তু তাঁদের দিয়ে কাজ করানো যায়নি। শেষ মুহূর্তে প্রশাসন কাজের অনুমতি প্রত্যাহার করেছে। নির্মীয়মাণ সেতুর নীচেই তাঁবুতে আছেন শ্রমিকেরা। তাঁদের এক জন, বিহারের রঞ্জনকুমার দাস বললেন, “২৩ মার্চ থেকে আটকে আছি। প্রথমে বলা হল, কাজ হবে। পরে হল না। বাড়িও যেতে পারলাম না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy