প্রতীকী চিত্র
শুধু নিজের নাম, বাবা-মায়ের নাম আর বাড়ি তালতলায়। এর বেশি কিছুই বলতে পারত না ছ’বছরের বালকটি।
যা শুনে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা ৫০টিরও বেশি তালতলা নামের এলাকায় খোঁজ চালিয়েছিলেন পূর্ব বর্ধমানের চাইল্ড লাইনের আধিকারিকেরা। কিন্তু কোথাও বালকটির পরিজনদের খোঁজ না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েন তাঁরা।
তবে শেষ আশা ছিল, কলকাতার তালতলা। যদি সেখানে গিয়ে খোঁজ মেলে! সেই আশাতেই কয়েক দিন আগে কলকাতা পুলিশের কাছে আসেন তাঁরা। ওই বালকের সঙ্গে গল্প করে পুলিশকর্মীরা জানতে পারেন, তার মামার বাড়ি ‘গাম্বুতলা’য়। সেই জায়গা সম্পর্কে খোঁজ নিতে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে, মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জ থানা এলাকায় রয়েছে গাম্বুতলা। তার কয়েকটি গ্রাম পরেই আছে তালতলাও। শেষমেশ কলকাতা পুলিশের অনুরোধে সামশেরগঞ্জ থানার এক সিভিক ভলান্টিয়ার সেই তালতলা গ্রামে যেতেই খোঁজ মেলে বালকের বাবা-মায়ের। এ ভাবেই প্রায় চার মাস পরে ঘরে ফিরল ছ’বছরের ছেলেটি।
পূর্ব বর্ধমান চাইল্ড লাইনের আধিকারিক অভিজিৎ চৌবে বলেন, ‘‘ঘরে ফেরার জন্য বাচ্চাটি রোজ আমার হাত ধরে কান্নাকাটি করত। বাবা-মায়ের কাছে ওকে ফিরিয়ে দিতে পেরে খুবই আনন্দ হচ্ছে। তবে এই কাজে কলকাতা পুলিশের ডিসি সুখেন্দু হীরা খুবই সহযোগিতা করেছেন।’’ রবিবার কাটোয়া জিআরপি থানায় এসে ছেলেকে ফিরিয়ে নিয়ে যান বাবা গোলাম হোসেন ও মা ফিরোজা।
গ্রামে গ্রামে ঘুরে চুড়ি বিক্রি করেন গোলাম। মায়ের কাছেই থাকত ছোট্ট ছেলেটি। এক দিন মায়ের সঙ্গে রাগারাগি করে ঘর থেকে বেরিয়ে যায় ওই বালক। তার পর থেকে আর খোঁজ ছিল না তার। ফিরোজা বলেন, ‘‘স্কুলে যাওয়ার তাড়া ছিল। কিন্তু খেলার মাঠ থেকে আসতেই চাইছিল না। আমি বকুনি দিয়েছিলাম। তাতেই রাগ করে বই-খাতা ছুড়ে ফেলে দিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিল। তার পর থেকে ওকে পাগলের মতো খুঁজেও পাইনি।’’
জেলা চাইল্ড লাইন সূত্রের খবর, গত সেপ্টেম্বরে হাওড়া-কাটোয়া লোকালে ওই বালককে একা বসে থাকতে দেখে সন্দেহ হয়েছিল এক চিকিৎসকের। তিনি তার সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পারেন, ছেলেটি পথ হারিয়ে ফেলেছে। এর পরে ওই চিকিৎসকই বালকটিকে কাটোয়া জিআরপি-র হাতে তুলে দেন। সেখান থেকে তাকে জেলা চাইল্ড
লাইনের তত্ত্বাবধানে একটি হোমে নিয়ে গিয়ে রাখা হয়েছিল। সেখানেই অভিজিতের চোখে পড়ে ওই বালক। অভিজিৎ বলেন, ‘‘ছেলেটি প্রতিদিনই বলত, ‘কাকু বাড়ি যাব’। ওর কাছ থেকে তালতলা আর বাবা-মায়ের নাম জেনে খোঁজ শুরু করেছিলাম। রাজ্য জুড়ে ৫০টিরও বেশি তালতলায় খোঁজ করা হয়। কোথাও ওর পরিজনদের পাইনি। শেষে জানতে পারি, কলকাতায় একটি তালতলা নামের এলাকা রয়েছে।’’
এর পরেই পূর্ব পরিচিত তথা কলকাতা পুলিশের ডিসি (আরএফ) সুখেন্দু হীরার সঙ্গে যোগাযোগ করেন অভিজিৎ। ওই পুলিশকর্তার কথা মতো গত ২০ ডিসেম্বর বালকটিকে কলকাতায় নিয়ে আসেন চাইল্ড লাইনের ওই আধিকারিক। পুলিশ সূত্রের খবর, ডিসি অফিসের কর্মী গুলাবউদ্দিন মণ্ডল ছেলেটির সঙ্গে গল্প করতে থাকেন। ওই পুলিশকর্মী বলেন, ‘‘ছেলেটির সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পারি, ওর বাড়ির আশপাশে এত গাড়ি চলাচল করে না। তাতেই নিশ্চিত হই যে, ওর বাড়ি কলকাতার তালতলায় নয়।’’
গুলাবউদ্দিন জানান, ছোটদের কাছে প্রিয় জায়গা হল মামার বাড়ি। ওই বালক জানায়, তার মামার বাড়ি গাম্বুতলায়। এর পরে কলকাতা পুলিশ মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জ থানায় যোগাযোগ করে। কিন্তু সেখানে ওই বালকের সম্পর্কে কোনও নিখোঁজ ডায়েরি ছিল না। পরে অবশ্য ওই থানার এক সিভিক ভলান্টিয়ার তালতলা গ্রামে যেতেই নিখোঁজ বালকের ঘরের খোঁজ মেলে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy