বিপদ: বড়সড় ফাটল ধরেছে বৌবাজারের মদন দত্ত লেনের একটি বাড়ির একাংশে। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র
হোটেল-যাত্রায় যেন আর ইতি টানা যাচ্ছে না। কারও এ নিয়ে তৃতীয় বার, কারও দ্বিতীয়, কারও বা প্রথম। বৌবাজারে মেট্রোর কাজের জেরে একাধিক বাড়িতে নতুন করে ফাটল ধরার পরে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ সংলগ্ন একটি হোটেলে উঠে সেই ক্ষতিগ্রস্তেরা জানালেন, ফের তাঁদের অনিশ্চয়তার জীবন শুরু হল। আবার কবে বাড়ি ফিরতে পারবেন, জানেন না কেউই।
মদন দত্ত লেনের বাসিন্দা শৈলেন্দ্র গুপ্ত নামে এক যুবক সপরিবার গিয়ে উঠেছেন চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের একটি হোটেলে। তিনি জানালেন, প্রথম বার, অর্থাৎ ২০১৯ সালের ৩১ অগস্ট যখন বৌবাজারের দুর্গা পিতুরি লেনের কয়েকটি বাড়িতে ফাটল ধরল, তখন পাশের গলি মদন দত্ত লেনের কিছু বাসিন্দাকে নিরাপত্তাজনিত কারণে হোটেলে রাখা হয়েছিল। সেই সময়ে এক মাস তিনি হোটেলে ছিলেন। ফের দ্বিতীয় বার যখন ফাটল ধরল, তখনও তাঁদের এক মাসের জন্য হোটেলে থাকতে হয়। শৈলেন্দ্র বলেন, ‘‘তখন তো আমাদের গলির বাড়িগুলিতে ফাটল ধরেনি। তাতেই এক মাস হোটেলে থাকতে হয়েছিল। এ বার আমাদের গলির বিভিন্ন বাড়িতেই ফাটল দেখা দিয়েছে। আমাদের বাড়িও বাদ পড়েনি। এখন কত মাস যে হোটেলে থাকতে হবে, কে জানে!’’
শৈলেন্দ্রর প্রশ্ন, ‘‘বার বার একই ঘটনা ঘটছে কেন? কেন মেট্রো আমাদের আগে থেকে সতর্ক করেনি?’’ শৈলেন্দ্র জানান, শুক্রবার ভোরে চিৎকার-চেঁচামেচিতে তাঁর ঘুম ভেঙে যায়। ঘুম থেকে উঠে তিনি দেখেন, বাড়িতে ফের ফাটল ধরায় পাড়ার বেশ কিছু বাসিন্দা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। তিনি দেখেন, তাঁদের বাড়ির দেওয়ালেও ফাটল ধরেছে। শৈলেন্দ্র বলেন, ‘‘বুঝলাম যে, ফাটল এ বার দুর্গা পিতুরি লেনের পরে আমাদের মদন দত্ত লেনেও রাজ্য বিস্তার করেছে। ভয়ে দ্রুত আমরা সকলে নীচে নেমে আসি।’’
অসুস্থ মা-বাবাকে নিয়ে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের ওই হোটেলেই উঠেছেন লোরেটো কলেজে ইতিহাসের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী অদিতি সিংহ। তিনি বলেন, ‘‘মা অসুস্থ। বাবা আরও বেশি অসুস্থ। বাবার যক্ষ্মা আছে। প্রচুর ওষুধ খেতে হয়। কোনও মতে ওঁদের নিয়ে এই হোটেলে এসে উঠেছি। তাড়াহুড়োয় সব ওষুধও আনতে পারিনি। অসুস্থ মা-বাবাকে নিয়ে কী ভাবে হোটেলের ঘরে থাকব, জানি না। এ ভাবে কত দিন কাটাতে হবে, তা-ও বুঝতে পারছি না। মেট্রো কর্তৃপক্ষ আমাদের আগে থেকে সতর্ক করেননি কেন?’’ অদিতি জানান, তাড়াহুড়োয় তিনি তাঁর বইপত্রও আনতে পারেননি। তাঁদের বাড়িতে যে ভাবে ফাটল ধরেছে, তাতে ঘরের ভিতরে আর ঢোকা যাবে কি না, তা-ও জানেন না ওই তরুণী। যদি ঢুকতে না পারেন, তা হলে মা-বাবার ওষুধ আর নিজের বইপত্র কী ভাবে আনবেন, তা নিয়েও দুশ্চিন্তায় আছেন তিনি।
মদন দত্ত লেনের একটি বাড়ির কয়েক জন বাসিন্দা মধ্য কলকাতার একটি হোটেলে উঠেছেন। তাঁরা বললেন, ‘‘আমাদের সোনার দোকান। সামনে দীপাবলি, ধনতেরস। গত দু’বছর কোভিডে ব্যবসা ভাল হয়নি। এ বার ভেবেছিলাম, হয়তো ঘুরে দাঁড়াতে পারব। কিন্তু দীপাবলির আগেই আমাদের পাঁজর ভেঙে গেল। এর জন্য দায়ী মেট্রো কর্তৃপক্ষই।’’
মদন দত্ত লেনের ঠিক পাশে, ১০৬ নম্বর বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটের বস্তাপট্টির প্রায় ২০টি দোকানে ফাটল ধরায় আতঙ্কে দেবনারায়ণ সাউ, সৌরভ সাউ, রাজেশ শাহদের মতো দোকানিরা। এ দিন ভোরে এলাকার লোকজনের চিৎকারে ঘুম ভেঙে তাঁরা দেখেন, তাঁদের দেওয়ালেও ফাটল ধরেছে। বাইরে বেরিয়ে তাঁরা দেখেন, শুধু ঘরের দেওয়ালে নয়, মেঝেতে ও বাড়ির ছাদেও ফাটল ধরেছে। প্রাণভয়ে তাঁরা রাস্তায় চলে আসেন। মেট্রো কর্তৃপক্ষ তাঁদের হোটেলে যাওয়ার কথা বললেও তাঁরা ফের ঝুঁকি নিয়ে বাড়িতেই ফিরে এসেছেন। তাঁদের প্রশ্ন, ব্যবসার জিনিসপত্র ফেলে কী ভাবে হোটেলে যাওয়া সম্ভব? রাজেশদের অভিযোগ, তাঁরা এর আগে মেট্রো কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলেন যে, দোকানের কিছুটা অংশ বসে গিয়েছে। সারানোর ব্যবস্থা করা হোক। কিন্তু মেট্রো কর্তৃপক্ষ উদ্যোগী হননি। এখন তাঁদের হোটেলে উঠতে বলা হয়েছে। অথচ, হোটেলে গেলে কবে ফিরতে পারবেন নিজেদের বাড়িতে, তারও কোনও নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না মেট্রো কর্তৃপক্ষ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy