Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

কেটে গিয়েছে তাল, হা-হুতাশ সোনাপাড়ায়

অবস্থা এতটাই সঙ্গিন যে, যাঁরা রোজকার মজুরিতে ওই অঞ্চলের বিভিন্ন দোকানে কাজ করেন, তাঁদের একটা বড় অংশ গত ১১ দিন ধরে কাজ হারিয়ে রাস্তায় ঘুরছেন।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:১০
Share: Save:

এ যেন মড়ার উপরে খাঁড়ার ঘা!

তিন বছর আগে নোটবন্দির পরে সোনাপট্টিতে এক ধাক্কায় কমে গিয়েছিল ক্রেতার সংখ্যা। তার সঙ্গে এখন যোগ হয়েছে সোনার ঊর্ধ্বমুখী দাম। এর পরেও যে স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের জন্য আরও বড় ভোগান্তি অপেক্ষা করছে, তা-ই যেন জানান দিল পুজোর মুখে বৌবাজারের সেকরাপাড়া লেন ও দুর্গা পিতুরি লেনের বিপর্যয় পরিস্থিতি। অবস্থা এতটাই সঙ্গিন যে, যাঁরা রোজকার মজুরিতে ওই অঞ্চলের বিভিন্ন দোকানে কাজ করেন, তাঁদের একটা বড় অংশ গত ১১ দিন ধরে কাজ হারিয়ে রাস্তায় ঘুরছেন।

এমনই এক জন পলাশ দাস। সেকরাপাড়ার ভিতরে একটি ছোট ঘরে দুই কারিগরের সঙ্গে গয়না গড়েন তিনি। নদিয়ার বেথুয়াডহরির একটি সোনার দোকানের কাজ করেন। এই বিপর্যয়ে কারখানা বন্ধ থাকায় আপাতত হাতে কোনও কাজ নেই। ওই যুবকের কথায়, ‘‘মঙ্গলবার পুরনো কারখানা থেকে কিছু মালপত্র বার করে অন্যত্র রেখেছি। অন্য জায়গায় ঘর নিয়ে যে কাজ শুরু করব, তা-ও পারছি না। কারণ ভাড়া বেশি। এই চত্বরে বহু কারিগর কলকাতার বাইরের দোকানের কাজ করেন। সকলের এক অবস্থা। ভুগছে কলকাতার
বাইরের দোকানগুলিও।’’

সোনা ব্যবসায়ীদের একটি সংগঠন ‘স্বর্ণশিল্প বাঁচাও কমিটি’র অফিসে গিয়ে এ দিন দেখা যায়, ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। সংগঠনের কার্যকরী সভাপতি বাবলু দে-র কথায়, ‘‘মেট্রো এবং প্রশাসন জায়গা আটকে রেখে সমস্যা আরও বাড়িয়ে তুলেছে। বহু দোকানের সোনা পড়ে আছে বন্ধ কারখানার ভিতরে। গয়না তৈরি করে দিতে না পারায় ক্রেতাদের থেকে বকেয়া টাকাও চাওয়া যাচ্ছে না। দৈনিক কাজের অন্তত ৭০০-৮০০ জন কারিগর বেকার হয়ে গিয়েছেন। আমাদের দাবি, হয় বন্ধ কারখানা খুলে মালপত্র বার করতে দেওয়া হোক। অথবা কারিগরদের ক্ষতিপূরণদেওয়া হোক।’’

বড় কলেবরে সোনায় হলমার্ক বসানোর কাজ করেন ব্যবসায়ী-দম্পতি বিজয় সূর্যবংশী ও পুষ্পলতা সূর্যবংশী। সেকরাপাড়ায় তাঁদের বসবাসের জায়গা-সহ ছ’টি সম্পত্তি রয়েছে। বিপর্যয়ের জেরে এই মুহূর্তে সব ক’টি জায়গা বন্ধ। প্রতিটি বাড়িই ক্ষতিগ্রস্ত। পুষ্পলতা বলেন, ‘‘ওই ঘটনার পর থেকে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছি। স্বর্ণশিল্প সংস্থার লোকজন দু’বেলা খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন। ওঁদের অফিসেই ব্যবসার কিছু কাজ করার জায়গা দিয়েছেন।’’ বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটে ‘স্বর্ণশিল্প বাঁচাও কমিটি’র অফিসের তেতলায় উঠে এ দিন দেখা গেল, মেঝেতে কম্পিউটার বসিয়ে কোনও মতে চলছে বিজয়ের সংস্থার কাজ।

ধনতেরাস ও দীপাবলির আগে বৌবাজারে বাড়ি ভেঙে পড়ার এই ঘটনা ক্রেতাদের মধ্যেও আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। ওই এলাকার দুই নামী স্বর্ণ বিপণির তরফে অলোক চন্দ্র এবং শ্রীপর্ণা চৌধুরীর মত, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার দিকে আগে নজর দিক প্রশাসন। সেকরাপাড়ার সামনেই শ্রীপর্ণাদেবীদের সোনার দোকান। তিনি বলেন, ‘‘গত ১১ দিন ধরে দোকানের সামনে যা পরিবেশ, তাতে ক্রেতারা কেউ ভিতরে ঢুকতেই পারছেন না। টাকা না খাটলে ব্যবসার পরিকাঠামোই তো এ বার ভেঙে পড়বে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Diwali Sale Bow bazar Goldsmith
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy