জলাশয়ে কচুরিপানা। উদ্যান ঢেকেছে আগাছায়।
জলাশয় ভরে রয়েছে কচুরিপানায়। আর বাকি অংশে আগাছার জঙ্গল। বেড়াতে এসে যে সবুজ ঘাসে ভরা মাঠে বসে দু’দণ্ড শান্তি পেতেন মানুষ, সেখানে চারদিকে ছড়িয়ে খাবারের প্যাকেট, চায়ের কাপ থেকে শুরু করে নানা ধরনের আবর্জনা। ফলে মেলে না বসার জায়গাও।
বর্তমানে ঠিক এমনটাই অবস্থা হাওড়ার শিবপুরের আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু বটানিক্যাল গার্ডেনের। অথচ আদালতের নির্দেশে কয়েক বছর আগেই গার্ডেনের হাল ফেরাতে একগুচ্ছ প্রকল্প হাতে নিয়েছিলেন গার্ডেন-কর্তৃপক্ষ। যার মধ্যে অন্যতম ছিল গার্ডেনের ভিতরের ২৪টি জলাশয়ের মধ্যে সংযোগ ব্যবস্থা চালু করা, যাতে গঙ্গায় জোয়ার-ভাটার সময়ে ওই জল লেকে ঢুকতে ও বেরোতে পারে।
কিন্তু অভিযোগ, গত কয়েক বছর ধরে কয়েক কোটি টাকা খরচের পরেও আজও চালু করা যায়নি ওই ব্যবস্থা। বটানিক্যাল গার্ডেন সূত্রে খবর, ওই প্রকল্পে কাজ করার সময়ে জলাশয়গুলির নাব্যতা বাড়ানোর প্রয়োজন ছিল। তখন সেগুলি খননের জন্য বড় বড় জেসিপি মেশিন ঢোকাতে গিয়ে বেশ কিছু গাছ সমূলে উপড়ে ফেলতে হয়েছিল। কাটতে হয়েছিল বহু মূল্যবান বৃক্ষের ডালপালা। কিন্তু তার পরেও জলাশয়গুলির মধ্যে সংযোগ ব্যবস্থা কার্যকর হয়নি। সেই সঙ্গে বন্ধ হয়ে যায় জলাশয়গুলি নিয়মিত পরিষ্কারের কাজও। ফলে প্রতিটি জলাশয় ভরে গিয়েছে কচুরিপানায়। বন্ধ হয়ে গিয়েছে গার্ডেনের অন্যতম আকর্ষণ বোটিং ব্যবস্থাও।
শুধু জলাশয়ের সংস্কারই নয়, আদালতের নির্দেশে গার্ডেনের নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের যে কথা দিয়েছিলেন কর্তৃপক্ষ, তা-ও প্রায় হয় না বলেই অভিযোগ সেখানকার কর্মীদের। গার্ডেনে ঢুকলেই চোখে পড়বে এর হতশ্রী চেহারা। কেয়া বাগান, বাঁশবাগান, পাম্প হাউজ— সর্বত্রই ছোট-বড় আগাছার জঙ্গল, আবর্জনা। রাস্তার পাশে সবুজ ঘাসের মাঠে পড়ে রয়েছে গাছের কাটা ডাল। তার চারপাশে গজিয়ে উঠেছে বড় বড় ঘাসের ঝোপ। ফলে সেখানে বসে বন ভোজনের আনন্দ নেওয়ারও উপায় নেই। এমনকী গার্ডেনে বেড়াতে আসা লোকজনের অভিযোগ, টিকিট কেটে ঢুকে বিখ্যাত শতাব্দীপ্রাচীন বট গাছটির কাছে বসারও উপায় নেই। কারণ পাশেই মাটির একটি নকল ঢিপি বা ‘টেবল টপ’ তৈরি হওয়ায় সেখানেও কমে গিয়েছে বসার জায়গা। ২৫ ডিসেম্বর বা ১ জানুয়ারির মতো উৎসবের দিনে প্রচুর মানুষের সমাগমে এই সমস্যা আরও প্রকট হয়ে ওঠে।
গার্ডেনে বেড়াতে আসা যোধপুর পার্কের স্বণার্লী রায়চোধুরী, দমদমের স্নেহা গঙ্গোপাধ্যায়ের অভিযোগ, জায়গাটি তার আগের খোলামেলা চেহারা হারিয়েছে। যে সব জায়গায় মানুষ আগে বসতেন, এখন সেগুলি লোহার ব্যারিকেডে ঘেরা। স্বর্ণালী বলেন, ‘‘মানুষ কী এখানে এসে সারাক্ষণ ঘুরে বেড়াবেন? গার্ডেনে এসে বসার মজাটাই চলে গিয়েছে। সেই সঙ্গে আবার চার দিক আর্বজনায় ভরা।’’
কিন্তু কেন এমন অবস্থা হল?
বটানিক্যাল গার্ডেন কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, কেন্দ্র সরকার গার্ডেনের পিছনে বাৎসরিক ব্যয়বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়া এই সমস্যা হচ্ছে। বটানিক্যাল গার্ডেনের ডিরেক্টর অরবিন্দ প্রামাণিক বলেন, ‘‘এটা ঠিকই যে রক্ষণাবেক্ষণ আরও প্রয়োজন। কিন্তু কেন্দ্র বাৎসরিক ব্যয়বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়ায় রক্ষণাবেক্ষণের খরচ কমাতে হয়েছে। গার্ডেন থেকে আয়ও নেই। তবু সাধ্যমতো চেষ্টা করছি।’’
কিন্তু দর্শনার্থীদের থেকে নেওয়া টিকিটের টাকা থেকে যে আয় হয় তা কোথায় যায়? অরবিন্দবাবু বলেন, ‘‘যে টাকা আয় হয় তা জমা দিতে হয়
কেন্দ্রীয় সরকারকে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy