কৌশিক দাসের (ইনসেটে) মৃত্যুতে শোকাহত পরিজনেরা। বুধবার, যাদবপুরে। নিজস্ব চিত্র
তিন দিন নিখোঁজ থাকার পরে যাদবপুরের একটি পুকুর থেকে উদ্ধার হল এক যুবকের মৃতদেহ। বুধবার সকালের এই ঘটনায় ওই এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। প্রাথমিক ভাবে এটিকে অবসাদের জেরে আত্মহত্যার ঘটনা মনে করলেও ময়না-তদন্তের চূড়ান্ত রিপোর্ট পেলে তবেই নিশ্চিত ভাবে কিছু বলা সম্ভব বলে জানিয়েছে পুলিশ। এর পাশাপাশি, দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে মৃতের পরিবারের লোকজনকে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর ঊনচল্লিশের ওই যুবকের নাম কৌশিক দাস। গত রবিবার তিনি বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। এর পরে আর ফেরেননি বলে তাঁর পরিবারের দাবি। রাত পেরিয়ে গেলেও তিনি না ফেরায় পরের দিন যাদবপুর থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন তাঁরা। তদন্তে নেমে পুলিশ কৌশিকের মোটরবাইকটি খুঁজে পায় যাদবপুর লায়লকা মাঠের কাছের একটি জায়গায়। স্থানীয়েরাই মোটরবাইকটি দেখে পুলিশকে খবর দেন। সেটিতে চাবিটি লাগানো ছিল।
সোমবার দিনভর ওই এলাকার আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখে পুলিশ। কিন্তু সে ভাবে কোনও ফুটেজ সেই সময়ে মেলেনি বলে তদন্তকারীদের দাবি। তাঁদের সন্দেহ হয় ওই মাঠের পাশের পুকুরটি নিয়ে। সেটিতে আলো ফেলে অনুসন্ধানের চেষ্টা করা হয় সন্ধ্যার দিকে। তাতেও কিছু না পাওয়ায় রণে ভঙ্গ দেয় পুলিশ। বুধবার সকালে ওই জলাশয়েই একটি মৃতদেহ ভাসতে দেখেন স্থানীয়েরা। তাঁরাই থানায় খবর দিলে পুলিশ মৃতদেহটি উদ্ধার করে বাঘা যতীন স্টেট জেনারেল হাসপাতালে পাঠায়। সেখানে গিয়ে মৃতদেহটি শনাক্ত করেন কৌশিকের পরিবারের লোকজন।
বিজয়গড়ের বাসিন্দা কৌশিকের স্ত্রী এবং মা রয়েছেন। তবে তাঁরা একসঙ্গে থাকেন না। স্ত্রীকে নিয়ে আলাদা ঘর ভাড়া করে থাকতেন কৌশিক। কম বয়সে স্বামী মারা যাওয়ার পরে কৌশিকের মা ছেলেকে নিয়ে নিজের মায়ের কাছে থাকতে শুরু করেছিলেন। এখনও তিনি সেখানেই থাকেন। কৌশিকের বাবা সরকারি চাকরি করতেন। সেই সূত্রে পাওয়া পেনশনের টাকায় তাঁদের সংসার চলত। পরে এমবিএ পাশ করে কৌশিক একটি নামী ম্যানেজমেন্ট সংস্থায় ভাল পদে চাকরি পান। তাঁর প্রথম বিয়ের পরে বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যায়। পরে ফের বিয়ে করেন তিনি।
তাঁর স্ত্রী মৌমিতা দাস এ দিন বলেন, ‘‘লকডাউনের পরে করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই চাকরি চলে যায় কৌশিকের। তার পর থেকে বহু খুঁজেও একটা ভাল চাকরির ব্যবস্থা করতে পারেনি। সেই নিয়েই অবসাদে ভুগতে শুরু করেছিল। বেশি মাত্রায় মদ্যপান করতে শুরু করে ও। ২১ দিন আগেই আমার বাবা মারা গিয়েছেন। তাই আমি সেখানে গিয়েছিলাম। তার মধ্যেই এই কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলল ও।’’ ছেলের শোকে মূহ্যমান তনুশ্রী দাস বলেন, ‘‘রবিবার ওই ভাবে বেরিয়ে যাওয়ার আগের দিনই আমাদের সঙ্গে গিয়ে নিমন্ত্রণ বাড়িতে খেয়ে এল। তার পরে ও এমন কী করে করতে পারে, ভেবে পাচ্ছি না।’’ কৌশিকের দিদিমা, বৃদ্ধা কণিকাদেবী বলেন, ‘‘যাকে কোলে-পিঠে করে মানুষ করেছি, সে আমার আগে চলে যাবে, এটা মানা যায় না। টাকা লাগলে আমাদের বলতে পারত। এ ভাবে কেন নিজেকে শেষ করে দেবে?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy