প্রতীকী ছবি
অ্যাসিডে নষ্ট হয়ে গিয়েছে দু’টি চোখ। আর তাই তাঁকে বলা হয়েছে, তাঁর নামে নাকি আধার কার্ড করানোই যাবে না! অথচ, এই আধার কার্ড না থাকলে মিলবে না ক্ষতিপূরণ।
মানসিক ভাবে অসুস্থ ও অ্যাসিড-আক্রান্ত স্বামীর ক্ষতিপূরণ আদায়ের জন্য বছরখানেক ধরে একের পর এক জায়গায় ঘুরে এমনই অভিজ্ঞতা হয়েছে বারুইপুরের এক তরুণী বধূর। সবিতা মণ্ডল নামে ওই তরুণীর দাবি, তাঁকে বলা হয়েছে, ক্ষতিপূরণ পেতে হলে তাঁর স্বামী দীপঙ্কর মণ্ডলের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট একটি ছিল। কিন্তু আধার কার্ড না থাকায় এক সময়ে সেটি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ব্যাঙ্ক জানিয়েছে, নতুন অ্যাকাউন্ট খুলতে গেলে আধার কার্ড লাগবে।
সবিতার বক্তব্য, বছর দুই আগে পরিবারের বাকি সদস্যদের আধার কার্ড হলেও তাঁর স্বামীর করানো যায়নি। কারণ, তিনি মানসিক ভাবে অসুস্থ ছিলেন। ওই অসুস্থতার মধ্যেই ২০১৮ সালের জুলাই মাসে সম্পত্তি সংক্রান্ত বিবাদের জেরে অ্যাসিড-হামলার শিকার হন দীপঙ্কর। যার জেরে তাঁর দু’টি চোখ নষ্ট হয়ে যায়।
এর পরেই দেখা দেয় নতুন সমস্যা। এক দিকে মানসিক অসুস্থতা, অন্য দিকে অ্যাসিডের ক্ষত— দুইয়ের চিকিৎসা করাতে গিয়ে নাজেহাল অবস্থা হয় সবিতার। এক সময়ে তিনি জানতে পারেন, অ্যাসিড-আক্রান্তদের ক্ষতিপূরণ দেয় সরকার। সেই ক্ষতিপূরণের জন্য আবেদন করতে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার দ্বারস্থ হন তিনি। ওই সংস্থা তাঁকে জানায়, ক্ষতিপূরণের টাকা পেতে হলে আগে স্বামীর নামে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। সেই মতো ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খুলতে গেলে সবিতাকে জানানো হয়, আধার কার্ড ছাড়া অ্যাকাউন্ট খোলা যাবে না।
সবিতা বলেন, ‘‘আমি খবর নিয়ে স্থানীয় একটি ব্যাঙ্কে যাই, যেখানে আধার কার্ডের ছবি তোলানো হচ্ছিল। সেখানে আমার স্বামীর ছবি তোলাও হয়। কিন্তু চোখের মণির ছবি তুলতে না পেরে ওঁরা জানিয়ে দেন, আধার কার্ড করানো যাবে না।’’ ফলে খোলা যায়নি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট। আর অ্যাকাউন্ট না থাকায় ক্ষতিপূরণের টাকাও মেলেনি। শুধু তা-ই নয়, সবিতা স্বামীর সঙ্গে জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট খুলতে চাইলে ব্যাঙ্ক সে ক্ষেত্রেও দীপঙ্করের আধার কার্ড লাগবে বলে জানায়। ফলে কোনও অ্যাকাউন্টই খুলতে পারেননি বলে অভিযোগ তরুণীর। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘কারও চোখের ছবি যদি তোলা না যায়, তা হলে তাঁর আধার কার্ড হবেই না? এ রকম নিয়ম আবার থাকতে পারে নাকি?’’
শুধু বারুইপুরের সবিতাই নন, এর আগে অটিজ়মে আক্রান্ত একটি শিশুর আধার কার্ড করাতে গিয়ে একই সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলেন তার মা। আবার বেহালার বাসিন্দা, সেরিব্রাল পলসিতে আক্রান্ত সনৎ মৈত্রের পরিবার হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল এই কারণে। শেষে হাইকোর্ট নির্দেশ দিলে বাড়ি গিয়ে সনতের বায়োমেট্রিক ছাপ তুলে এনেছিলেন আধার কার্ড তৈরির কাজে যুক্ত আধিকারিকেরা। প্রশ্ন উঠেছে, সকলেরই তো আর কোর্টে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি থাকে না। তা হলে তাঁদের কী হবে?
সবিতা জানিয়েছেন, তাঁর স্বামীর অ্যাসিডের ক্ষতগুলি শুকিয়ে গেলেও টাকার অভাবে মানসিক অসুস্থতার চিকিৎসা করানো যায়নি। ফলে মানসিক সমস্যা আরও বেড়ে গিয়েছে। ওই তরুণীর কথায়, ‘‘আমি পরিচারিকার কাজ করি। হাতে ক’টা মাত্র টাকা আসে। তার
উপরে অ্যাসিডে আক্রান্ত হওয়ার পরে স্বামীর চিকিৎসা করাতে গিয়ে অনেক টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে। সংসারের খরচ, মেয়ের খরচ সামলে ওঁর মানসিক অসুস্থতার চিকিৎসা কী করে করাব?’’
সবিতা যে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার দ্বারস্থ হয়েছিলেন, সেই সংস্থার কোঅর্ডিনেটর দিব্যালোক রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘এ রকম হওয়ার কথাই নয়। আমি দীপঙ্করের স্ত্রীকে জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট খুলতে বলেছিলাম। সেই অ্যাকাউন্ট খুলতে গেলে আধার লাগার কথা নয়।’’ কিন্তু বারবার কেন এমন ঘটনা ঘটছে? রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফোন করা হলে তিনি ফোনে কোনও কথা বলতে রাজি হননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy