Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
BJP

মিছিলে রুদ্ধ পথে ভোগান্তি, হেঁটেই গন্তব্যে 

সব থেকে বেশি ভোগান্তি হয়েছে হাওড়া স্টেশনমুখী বিভিন্ন রাস্তায়।

বিজেপির মিছিলের জেরে (১) হাওড়া সেতুর কাছে যানজট।

বিজেপির মিছিলের জেরে (১) হাওড়া সেতুর কাছে যানজট।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০২০ ০১:৪৮
Share: Save:

পিঠে ভারী একটা ব্যাগ নিয়ে যতটা সম্ভব জোরে স্ট্র্যান্ড রোড ধরে হাঁটছিলেন নিউ টাউনের বাসিন্দা মুকেশ কুমার। সঙ্গে তাঁর স্ত্রী। গন্তব্য, হাওড়া স্টেশন। জানালেন, হাওড়া থেকে জনশতাব্দী ধরে পটনা যাবেন তাঁরা। ট্রেন ধরার জন্য হাতে আছে মাত্র ১৫ মিনিট। মুকেশ জানেন, ১৫ মিনিটে হেঁটে ট্রেন অবধি পৌঁছনো সম্ভব নয়। তবু চেষ্টা করে দেখছেন। মুকেশ বললেন, ‘‘স্ত্রীকে নিয়ে বাবুঘাট থেকে হেঁটে আসছি। ওখান থেকেই বাস বন্ধ করে দিয়েছে।’’

শুধু মুকেশ কুমারই নন, বৃহস্পতিবার বিজেপি-র নবান্ন অভিযানকে কেন্দ্র করে কলকাতা ও হাওড়া শহরের গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু রাস্তায় প্রবল ভোগান্তিতে পড়েন অসংখ্য মানুষ। স্ট্র্যান্ড রোড থেকে শুরু করে মহাত্মা গাঁধী রোড, জি টি রোড— প্রায় সর্বত্রই দেখা গেল, গন্তব্যে পৌঁছতে নিরুপায় মানুষ মাইলের পর মাইল হাঁটছেন। সব থেকে বেশি ভোগান্তি হয়েছে হাওড়া স্টেশনমুখী বিভিন্ন রাস্তায়।

যেমন, স্ট্র্যান্ড রোডেই দেখা গেল, দু’বছরের শিশু ও স্ত্রীকে নিয়ে হাঁটছেন মোতিয়ার রহমান। তাঁর কথায়, ‘‘ট্রেন থেকে হাওড়া স্টেশনে নেমে দু’ঘণ্টা অপেক্ষা করেও কিছু পাইনি। অগত্যা স্ত্রী ও বাচ্চাকে নিয়ে হাঁটছি। বাবুঘাট থেকে যদি বাস বা ট্যাক্সি কিছু পাই, তা হলে বাড়ি ফিরতে পারব।’’

আরও পড়ুন: লাঠি, বোমা, গ্যাসে ধুন্ধুমার, উদ্ধার পিস্তল, শূন্য নবান্ন থেকে দূরেই বিজেপি

স্ট্র্যান্ড রোডে আবার সুযোগ বুঝে নেমে পড়েছিল কিছু ভ্যান। হাওড়া সেতুর মুখ পর্যন্ত পৌঁছে দিতে ভাড়া মাথাপিছু ১০ টাকা। বয়স্ক অনেকেই হাঁটতে না পেরে উঠে পড়ছিলেন তাতে। যাত্রী-বোঝাই সেই সব ভ্যানে সামাজিক দূরত্ব মানার কোনও বালাই ছিল না। নেতাজিনগরের বাসিন্দা, অতুল ভৌমিক নামে এক প্রৌঢ় বললেন, ‘‘হাওড়া ময়দান এলাকায় যাব। হাওড়া স্টেশন পর্যন্ত হাঁটতে পারব না। অগত্যা ভ্যানে উঠে পড়লাম। সামাজিক দূরত্ব যে বজায় রাখতে পারলাম না, তা ভালই জানি। কিন্তু উপায় কী?’’

পুলিশের ব্যারিকেডে আটকে যাওয়া অ্যাম্বুল্যান্সকে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।

হাওড়া সেতুর মুখেই পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ায় কাতারে কাতারে মানুষ ফুটপাত ধরে হাঁটতে শুরু করেন। কেউ এসেছেন কলকাতায়। কেউ গিয়েছেন হাওড়ার দিকে। বিজেপি-র মিছিল যখন ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করছিল, তখন হাওড়া সেতু সংলগ্ন এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। যার জেরে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন পথচারীরা। গন্ডগোলের মধ্যে পড়ে তাঁদের অনেককেই দেখা যায়, সেতুর ফুটপাত থেকে হাত মাথার উপরে তুলে রাস্তা পেরোচ্ছেন।

আরও পড়ুন: ইট উড়তেই রণমূর্তিতে পুলিশ, মাথায় ডান্ডা খেয়ে পড়ে গেলেন রাকেশ

এ দিন বিজেপি-র নবান্ন অভিযানের কারণে মহাত্মা গাঁধী রোড, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের একাংশ এবং হেস্টিংস মোড়ে যান নিয়ন্ত্রণ শুরু হয় বেলা ১১টার পর থেকেই। এর কিছু ক্ষণ পরে গোলমালের কারণে হেস্টিংস মোড় কার্যত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বহু মানুষ রাস্তায় আটকে পড়েন। এমনকি, দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় শববাহী গাড়িকেও। পুলিশের তৎপরতায় সেই গাড়ি অবশ্য খানিক পরে হেস্টিংস মোড় দিয়েই যাওয়ার অনুমতি পায়।

শিশু আর জিনিসপত্র নিয়ে স্ট্র্যান্ড ধরে হেঁটে যাচ্ছেন যাত্রীরা।

হাওড়ায় আবার সকাল ৯টার পর থেকেই জি টি রোডে কার্যত কোনও গাড়ি চলেনি। হাওড়া শহরে ঢোকার মূল রাস্তাগুলিতে (বেনেপোল, ড্রেনেজ ক্যানাল রোড, ধুলাগড়) যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেখানেও সমস্যায় পড়েন বহু মানুষ।

হেঁটেই গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দেন তাঁরা। শিবপুরের বাসিন্দা আশিস বসু বললেন, ‘‘জি টি রোড বন্ধ থাকায় শিবপুর ট্রাম ডিপো থেকে হাওড়া ময়দান পর্যন্ত হেঁটে আসতে অনেক সময় লেগে গিয়েছে।’’ হাওড়াবাসীর অভিযোগ, ২টোর পরে ফের গাড়ি চলাচল শুরু হলেও রাস্তাঘাট স্বাভাবিক হতে বিকেল হয়ে যায়।

এ দিন অধিকাংশ ট্যাক্সি এবং অ্যাপ-ক্যাবই ধর্মতলা বা চাঁদনি চকের দিকে যেতে চায়নি বলে অভিযোগ। গাড়িচালকদের অভিযোগ, সকাল থেকেই ওই সব এলাকায় ছিল প্রবল যানজট। শরৎ বসু রোড থেকে ধর্মতলা যেতে গাড়ি পাননি অসীমা রায় নামে এক মহিলা। তিনি বললেন, ‘‘এখন রাস্তায় বাস কম। মেট্রোও আগে থেকে স্লট বুক না-করে চাপা যায় না। ধর্মতলা যাব বলায় কোনও ট্যাক্সিচালকই রাজি হননি। ওঁরা জানান, বিজেপি-র নবান্ন অভিযানের জন্য ধর্মতলা চত্বরে প্রবল যানজট। তাই সে দিকে যাবেন না।’’

ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার, সুমন বল্লভ এবং বিশ্বনাথ বণিক

অন্য বিষয়গুলি:

BJP Nabanna March Nabanna Howrah
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy