আদালতে হাজির করানোর সময় বিজেপি নেতা রাকেশ সিংহকে ঘিরে উত্তেজনা পিটিআই
মাদক মামলায় জামিন পেলেন না বিজেপি নেতা রাকেশ সিংহ। বুধবার তাঁকে আদালতে পেশ করা হলে বিচারক তাঁকে পাঁচ দিনের পুলিশি হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। যদিও তাঁর দুই পুত্র জামিন পেয়েছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। সেই অভিযোগে শুভম এবং সাহেব নামে ওই দু’জনকে গ্রেফতারও করেছিল পুলিশ।
বুধবার রাকেশকে আদালতে হাজির করানোর সময় উত্তেজনা তৈরি হয়। রাকেশের অনুগামীরা পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে জড়িয়ে পড়়েন। একটা সময়ে ধস্তাধস্তিতে মাটিতে পড়েও যান রাকেশ। পুলিশের গাড়ি থেকে মাথা বার করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের নাম নেন রাকেশ। কোনওক্রমে তাঁকে কোর্ট লকআপে নিয়ে যান পুলিশকর্মীরা।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার রাতে রাকেশকে বর্ধমানের গলসি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তাঁর সঙ্গে গ্রেফতার করা হয়েছিল জিতেন্দ্রকুমার সিংহ ওরফে জিতুকে। তাঁকেও পাঁচদিনের জন্য পুলিশি হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত। তবে আইনজীবীদের একাংশের বক্তব্য, মাদক আইনে মাদক-সহ ছাড়া কাউকে এ ভাবে গ্রেফতার করা যায় না। মাদকসেবনের জন্য কাউকে গ্রেফতার করা যায় না। উদাহরণ স্বরূপ তাঁরা অভিনেতা সুশান্ত সিংহ রাজপুতের বান্ধবী রিয়া চক্রবর্তীর কথাও বলছেন। তাঁদের বক্তব্য, রিয়াকে পুলিশ মাদক আইনে গ্রেফতার করা হলেও তাঁর বিরুদ্ধে মাদকপাচারের অভিযোগ প্রমাণ করা যায়নি।
তবে পুলিশের দাবি, রাকেশকে গ্রেফতার করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। কারণ, মাদক মামলায় ধৃত বিজেপি নেত্রী পামেলা গোস্বামীকে পাঠানো রাকেশের বেশ কিছু এসএমএস, হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট এবং ছবি পুলিশের হাতে এসেছে। তা খতিয়ে দেখার পর তদন্তকারীরা মনে করছেন, ঘটনার নেপথ্যে অন্য কারও হাত থাকতে পারে। যাঁদের নাম উঠে আসছে, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করার আগে আরও তথ্যপ্রমাণ জোগাড়ের উপরেই জোর দিচ্ছেন গোয়েন্দারা। পামেলার মতোই রাকেশের বিরুদ্ধেও মাদক-বিরোধী আইনের এনডিপিএস (নার্কোটিক ড্রাগস অ্যান্ড সাইকোট্রপিক সাবস্ট্যান্সেস) ২৭ এবং ২৯ নম্বর ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। গোয়েন্দারা মনে করছেন, মাদক মামলায় তিনি সরাসরি জড়িত। যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
নিউ আলিপুর থানা থেকে ওই মাদক মামলার তদন্তভার নিয়েছে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। প্রায় ১০ লক্ষ টাকার কোকেন-সহ গত শুক্রবার বিজেপি মহিলা মোর্চার নেত্রী পামেলা এবং আরও দু’জন গ্রেফতার হন নিউ আলিপুর থেকে। মাদক মামলা নাটকীয় মোড় নেয় শনিবার পামেলাকে আদালতে পেশ করার সময়। তিনি বিজেপি-র সর্বভারতীয় নেতা তথা এ রাজ্যের পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়ের নাম নিয়ে রাকেশের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন। বলেন, রাকেশকে গ্রেফতার করতে হবে। রাকেশই তাঁকে ফাঁসিয়েছেন বলে পুলিশের কাছেও তিনি বয়ান দিয়েছেন।
ওই ঘটনার পর রাকেশকে ডেকে পাঠায় লালবাজার। মঙ্গলবার তাঁকে কলকাতা পুলিশের সদর দফতরে গিয়ে দেখা করতে বলা হয়েছিল। নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে আসরে নামেন রাকেশ। তিনি পাল্টা ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করে কলকাতা পুলিশের বিরুদ্ধেই ক্ষোভ উগরে দেন। রাকেশ অভিযোগ করেন, নিউ আলিপুর থানার একাংশের নির্দেশে তাঁর নাম নিচ্ছেন পামেলা। শুধু তা-ই নয়, সরাসরি কলকাতার পুলিশ কমিশনার সৌমেন মিত্রকে ই-মেল করে আইনি পদক্ষেপ করার হুঁশিয়ারি দেন। কলকাতা পুলিশের ডাকে যে তিনি যাবেন না, তা-ও চিঠি লিখে জানান রাকেশ। জানান, মঙ্গলবার তিনি দিল্লি যাবেন। কলকাতা পুলিশের হাইকোর্টে মামলাও করেন রাকেশ।
কিন্তু সেই মালা খারিজ করে দেয় আদালত। তার পরেই আসরে নামে পুলিশ। তারা সরাসরি রাকেশের বাড়িতে যায়। সেখানে রাকেশ ছিলেন না। রাকেশের দুই ছেলের সঙ্গে একপ্রস্ত বচসা হয় পুলিশের। তার পর তারা ঘরে ঢুকে তল্লাশি চালায়। সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার জন্য রাকেশের দুই ছেলেকে গ্রেফতারও করা হয়। এর পরেই রাতে গলসি থেকে ধরা পড়েন রাকেশ। বুধবার ভোরে তাঁকে লালবাজারে নিয়ে আসা হয়।
রাকেশের সঙ্গেই পুলিশের জালে পড়েন জিতু। পুলিশ সূত্রে খবর, এর আগেও জিতেন্দ্র মাদক মামলায় পুলিশের হেফাজতে ছিলেন। ওই ঘটনায় জিতেন্দ্রর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। পামেলার মতোই রাকেশের বিরুদ্ধেও মাদক-বিরোধী আইনের এনডিপিএস (নার্কোটিক ড্রাগস অ্যান্ড সাইকোট্রপিক সাবস্ট্যান্সেস) ২৭ এবং ২৯ নম্বর ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। গোয়েন্দারা মনে করছেন, মাদক মামলায় তিনি সরাসরি জড়িত। যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy