ফাইল চিত্র।
দুর্গাপুজো আসতে বাকি ৯০ দিনের কিছু কম সময়। কিন্তু গত বছরের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়েই সম্ভবত, শহরের অন্যতম বড় পুজো কমিটিগুলির একটি অংশ করোনা আবহে ‘জল মেপেই’ প্রস্তুতি শুরু করতে চাইছে।
ফলে পরিস্থিতি এখন এ রকম—কোথাও বাজেটই ঠিক হয়নি, কোথাও প্রাথমিক বাজেট ঠিক হলেও প্রতিমার বায়না দেওয়া বা মণ্ডপ তৈরির জন্য শিল্পীর সঙ্গে কথা বলা হয়নি। কেউ আবার এ বছর কোনও রকমে পুজো সারতে চাইছেন। কোনও কোনও উদ্যোক্তা সরকারি নির্দেশিকার অপেক্ষায়। যদিও সরকারের তরফে এখনও নির্দেশিকা আসেনি। করোনার প্রথম বছর, ২০২০ সালে দুর্গাপুজো হলেও কলকাতা হাইকোর্টের রায়ে শেষ মুহূর্তে মণ্ডপে দর্শনার্থীদের প্রবেশ বন্ধ করা হয়েছিল। এই মুহূর্তে সংক্রমণ কিছুটা কমলেও পুজোর আগে তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে। চিকিৎসকেরাও চাইছেন, ভিড়হীন ভাবেই হোক পুজো। উদ্যোক্তাদের অনেকেই পুজোর সঙ্গে জড়িত সকলকে প্রতিষেধক দেওয়ার কাজ শেষ করার উপরে জোর দিচ্ছেন।
‘ফোরাম ফর দুর্গোৎসব’-এর সাধারণ সম্পাদক শাশ্বত বসু বলেন, ‘‘পুজোর আগে প্রতিষেধকের উপরে জোর দেওয়া হচ্ছে। এ জন্য কয়েকটি শিবির হয়েছে, যাতে পুজোর সঙ্গে জড়িত সকলকে প্রতিষেধক দেওয়ানো যায়। আগামী দিনেও শিবির হবে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘পুজোয় বহু মানুষের জীবন ও জীবিকা জড়িত। ফলে পুজো বন্ধ হওয়া মানেই বড় অংশের মানুষের ক্ষতি। তাই চাইছি সরকারি বিধিনিষেধ মেনে পুজো করতে। তবে শহরের প্রতিটি পুজো কমিটির বাজেট যে কমবে, তা নিয়ে দ্বিমত নেই।’’
বাজেট নিয়ে একই মত গৌরীবেড়িয়া সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির যুগ্ম-সম্পাদক মান্টা মিশ্রের। তিনি বলেন, ‘‘প্রাথমিক ভাবে তিন রকম বাজেট ঠিক করেছি। পরিস্থিতি বিবেচনা করে একটি ধরে এগোব। তবে ২০১৯-এর পুজোর থেকে এ বারের বাজেট অর্ধেকেরও কম হবে। বিজ্ঞাপন এ বছরেও পাব কি না জানি না!’’
দেশপ্রিয় পার্ক পুজো কমিটির সভাপতি সুদীপ্ত কুমারও বলেন, ‘‘এত বড় মাঠ সাজাতে বাজেট এমনিতেই বেশি হয়। এ বছর জাঁকজমক যতটা কম করা যায় দেখব। পুজো নিয়ে সরকার প্রাথমিক নির্দেশিকা দিলে উদ্যোক্তাদের সুবিধা হয়। তবে সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ এলে কোনও মতে পুজো করা হবে।’’ এ বছর তাঁরা পুজোয় দুঃস্থ মানুষকে সাহায্যের উপরে জোর দিচ্ছেন বলেও জানালেন সুদীপ্তবাবু।
এ দিকে প্রতিমার বায়নাই দেওয়া হয়নি লেক শিবমন্দির পুজো কমিটির। কমিটির সভাপতি পার্থ ঘোষ বলেন, ‘‘অর্থনৈতিক ভাবে কেউই ভাল অবস্থায় নেই। আর তৃতীয় ঢেউয়ের কথা ভেবে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ছোট করেই পুজো করব।’’ তবে থিমের পুজো হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। গত রবিবার খঁুটিপুজোও হয়ে গিয়েছে তাঁদের।
উত্তরের কুমোরটুলি পার্ক সর্বজনীন দুর্গোৎসব সমিতির তরফে অনুপম দাস জানান, প্রতিমার বায়না তাঁদের এখনও দেওয়া হয়নি। বাজেটে ঘাটতি ও সংক্রমণের জন্য তাঁরা আড়ম্বরহীন ভাবে পুজো করছেন।
এ বছরেও পুজোয় জনসমাগম এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। বাইপাসের একটি হাসপাতালের মেডিসিনের চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাসের কথায়, ‘‘লেখচিত্র নিম্নমুখী মানে সংক্রমণ নির্মূল হয়ে যায়নি। সকলের প্রতিষেধক পেতেও বেশ কিছুটা সময় লাগবে। তাই এ বছরটা যতটা সম্ভব বাড়িতে থাকতে হবে।’’ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই বলছেন, ‘‘সংক্রমণের প্রকোপ কমেছে ধরে নিয়ে মানুষ যদি পুজোর কেনাকাটা করতে এবং ঠাকুর দেখতে বেরিয়ে পড়েন, সেটা তৃতীয় ঢেউকে অবশ্যম্ভাবী করে তোলা হবে। গত বছর অনেক কমিটিই ভার্চুয়াল মাধ্যমে পুজো করেছিল। সে পথেই হাঁটুন উদ্যোক্তারা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy