প্রতীকী ছবি
জ্বালানির দাম বৃদ্ধির সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়েছে পরিবহণে। বাড়তে বাড়তে কলকাতায় পেট্রলের দাম ছাড়িয়েছে ১০০ টাকা। ডিজেলও সেঞ্চুরি করার পথে। যদিও রাজ্যের কয়েকটি জেলায় আগেই সেঞ্চুরি করেছিল পেট্রল। জ্বালানির দাম বৃদ্ধির জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের প্রবল সমালোচনা করছে বিরোধীরা। বিরোধী দলের অনেক নেতা-নেত্রী আবার সাইকেল চড়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। সেই তালিকাতে আছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। বুধবার জ্বালানির দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদ হিসেবে সাইকেল চড়ে বিধানসভায় আসেন মন্ত্রী বেচারাম মান্না।
গত বছর প্রথম লকডাউনের সময় থেকেই সাইকেলের গুরুত্ব ও ব্যবহার বাড়ে গোটা বিশ্বে। বাদ যায়নি তিলোত্তমা কলকাতাও। লকডাউনে সরকারি, বেসরকারি পরিবহণ বন্ধ থাকায় গরিব, খেটে খাওয়া মানুষের যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম হয়ে ওঠে সাইকেল। কাজে যোগ দিতে হোক বা জরুরি প্রয়োজনে কোথাও যাওয়া, অনেক ক্ষেত্রেই সাধারণ মানুষের ভরসা হয়ে দাঁড়ায় সাইকেল। তবুও সাইকেলের প্রতি এক ধরনের অবজ্ঞার বাতাবরণও প্রশ্রয় পেয়ে চলেছে কয়েক বছর ধরেই। জ্বালানির দাম বৃদ্ধি নিয়ে রাজনীতিবিদদের সাইকেল চড়া যেন কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে দেওয়ার মতোই। এই 'কাটা ঘা' আসলে সাইকেল সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা। প্রায় ১২-১৩ বছর ধরে কলকাতার কমপক্ষে ৭০টি রাস্তায় সাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। অভিযোগ, মহানগরের অনেক জায়গাতেই সাইকেল-আরোহীদের সাইকেলের চাকার হাওয়া খুলে দেওয়া হয়, জরিমানা আদায় করা হয়। এমনকি নিগ্রহের অভিযোগও উঠেছে বহু বার। লক্ষ্য, যে ভাবেই হোক শহরের পরিবহণ-ব্যবস্থায় সাইকেলকে ব্রাত্য করে রাখা। আমাদের রাজ্যে সেটা যেন আরও বেশি করেই প্রকট।
সাইকেলের প্রতি এই অবমাননা বা অবজ্ঞা নিয়ে সরব হয়েছেন কলকাতার 'বাইসাইকেল মেয়র' হিসেবে পরিচিত শতঞ্জীব গুপ্ত। প্রাণের শহরে যাতায়াতের জন্য সাইকেল ব্যবহারের উপযোগিতা নিয়ে কয়েক বছর ধরেই লাগাতার প্রচার করে চলেছে ‘কলকাতা সাইকেল সমাজ’ নামে একটি সংগঠন। শতঞ্জীব এই সংগঠনেরই সদস্য। তাঁর বক্তব্য, ‘করোনাকালে লকডাউনের সময় সাইকেলের গুরুত্ব বেড়েছে। যদিও, কলকাতায় প্রায় ৭০টি বড় রাস্তায় সাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে। সেই সব রাস্তায় সাইকেল চালালে জরিমানা আদায় করা হয়।’
কলকাতার ‘বাইসাইকেল মেয়র’ জানান, বিশ্বের উন্নত শহরগুলিতে সাইকেলকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। কোপেনহেগেন, আমস্টারডাম, বার্লিন, প্যারিস-সহ বিশ্বের বিভিন্ন বড় শহরে সাইকেলের জন্য আলাদা রাস্তা রয়েছে। সেই লেন ধরে স্বাচ্ছন্দে সাইকেল চালিয়ে যাতায়াত করা যায়। পাশাপাশি আমাদের দেশেও এ নিয়ে উদ্যোগের কথা তুলে ধরেছেন তিনি। শতঞ্জীব জানান, দেশের মধ্যে চেন্নাই, কোচি, নাগপুর মেট্রোতে সাইকেল নিয়ে ওঠা যায়। বেঙ্গালুরু মেট্রো কর্তৃপক্ষও এ নিয়ে ভাবছে। দুর্ভাগ্য, আমাদের কলকাতা মেট্রোতে এই সুবিধা নেই। কলকাতায় সাইকেলের জন্য রাস্তা করা নিয়ে কেএমডিএ একটি পরিকল্পনা করেছিল জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশের পর। যদিও, সেই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন হয়নি। শতঞ্জীব বলেন, আগে কলকাতায় ১০ শতাংশ মানুষ যাতায়াতের জন্য সাইকেল ব্যবহার করতেন। কোভিড আবহে এই হার আরও বেড়েছে। তাই আমাদের দাবি, সাইকেল চালানোয় নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হোক।
জ্বালানির দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে সাইকেলের ব্যবহার নিয়ে কলকাতার 'বাইসাইকেল মেয়র' বলেন, ‘‘এই বিষয়ে যে কেউ প্রতিবাদ জানাতেই পারেন। এটা নিয়ে আমাদের কিছু বলার নেই। তবে সাইকেলকে আরও গুরুত্ব দিতে হবে। রাস্তা অন্য যানবাহনের দখলে। সাইকেল কী দোষ করল? কম দূরত্বের জন্য সাইকেল ব্যবহার করতে দেওয়া হোক। সাইকেলের সম্ভাবনাকে কম গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy