রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ উব্র পুলে একটি অ্যাপ-ক্যাব বুক করেন বেলগাছিয়ার এক মহিলা।
রাতের শহরে অ্যাপ-ক্যাবে হয়রানির অভিযোগ তুললেন এক মহিলা। তাঁর অভিযোগ, সাহায্য চাইতে তিনি মহিলাদের হেল্পলাইন নম্বরে বারবার ফোন করলেও কেউ ধরেননি। তাঁর আরও দাবি, পুলিশের ১০০ নম্বরে ফোন করলে বলে দেওয়া হয়, ‘‘তেমন কোনও সমস্যা তো হয়নি। সমস্যা হলে ফোন করবেন!’’ নিজের ও কলকাতা পুলিশের সোশ্যাল মিডিয়া পেজে এই অভিজ্ঞতার কথা লিখে ওই মহিলা প্রশ্ন তুলেছেন, ‘আমাকে খুন বা ধর্ষণ করা হলে তবেই কি সাহায্য পাওয়া যেত?’ কলকাতা পুলিশ অবশ্য দাবি করেছে, এমন কিছু ঘটেনি। তাদের তরফে সাধ্যমতো সাহায্যের চেষ্টা করা হয়েছিল।
বেলগাছিয়ার বাসিন্দা ওই মহিলা ইএম বাইপাসের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চাকরি করেন। গত ১৭ এপ্রিল রাতে দক্ষিণ কলকাতার রামগড় এলাকায় এক বন্ধুর বাড়িতে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন তিনি। রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ উব্র পুলে একটি অ্যাপ-ক্যাব বুক করেন তিনি। গাড়িতে ওঠার পরে মহিলা একাই ছিলেন। তাঁর অভিযোগ, কিছু দূর এগিয়েই চালক গাড়ি থামিয়ে দাবি করেন, তাঁর ‘আইডি’ যে মোবাইলের সঙ্গে সংযুক্ত, সেটি কাজ করছে না। মহিলা বলেন, ‘‘আমি ট্রিপ বাতিল করলে যে অনলাইন সংস্থার মাধ্যমে টাকা মেটাতাম, তারা পুরো টাকাই কেটে নিত। চালককে তাই বলি, আমাকে ফোনটা দিন। সংস্থার হেল্পলাইন নম্বরে আমি কথা বলছি।’’ কিন্তু চালক তা না করে গাড়িটি পঞ্চান্নগ্রাম এলাকার একটি গলিতে ঢুকিয়ে দেন বলে অভিযোগ। মহিলা বলেন, ‘‘অত রাতে ফাঁকা গলিতে একা। ভয় পেয়ে যাই।’’
সেই সময়েই মহিলা পুলিশের ১০০ নম্বরে ফোন করেন। তাঁর দাবি, পুলিশ বলে, সমস্যা হলে তবে ফোন করতে। পাশাপাশি অ্যাপ-ক্যাব সংস্থার একটি হেল্পলাইন নম্বর দেয় পুলিশ। কিন্তু মহিলার দাবি, ওই নম্বরে ফোনই যায়নি। আরও বেশ কিছু ক্ষণ অপেক্ষার পরে ওই ক্যাবচালকের সঙ্গে কয়েক জন যুবক দেখা করতে আসেন। তাঁদের থেকে নতুন একটি ফোন নিলেও তাতে ক্যাব সংস্থার ‘অ্যাপ্লিকেশন’ নেই বলে জানান চালক। মহিলা বলেন, ‘‘ওই চালক অদ্ভুত ব্যবহার করছিলেন। অত রাতে গলির মধ্যে নিয়ে গিয়ে বলছেন, নেমে যান! বাধ্য হয়ে ক্যাব বাতিল করে হাঁটতে শুরু করি।’’ সোশ্যাল মিডিয়ায় মহিলা লিখেছেন, ‘তখন রাত সাড়ে ১১টা পেরিয়ে গিয়েছে। কয়েক জন যুবক আমার পিছু নেয়। কোনও মতে বাইপাস পর্যন্ত পৌঁছই।’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
সোশ্যাল মিডিয়ায় অভিযোগকারিণীর পোস্ট।
মহিলার দাবি, ওই সময়ে সেখান দিয়ে পুলিশের স্টিকার লাগানো একটি গাড়ি যেতে দেখে তিনি হাত দেখালে সেটি দাঁড়িয়ে যায়। কিন্তু গাড়ির কাছে তিনি পৌঁছনোর আগেই সেটি চলতে শুরু করে। মহিলার কথায়, ‘‘পরে বুঝলাম, সিগন্যালে দাঁড়িয়েছিল গাড়িটি। অত রাতে ওই ভাবে হাত দেখাতে দেখেও দাঁড়াল না!’’
মহিলা এর পরে তাঁর এক বন্ধুর পরামর্শে নতুন করে অ্যাপ-ক্যাব বুক করেন। কিন্তু তিনি বেলগাছিয়া যাবেন শুনেই বুকিং বাতিল করে দেন চালক। শেষে ওই বন্ধুই গিয়ে মহিলাকে উদ্ধার করেন। পরে অ্যাপ-ক্যাব সংস্থা এবং কলকাতা পুলিশের সোশ্যাল মিডিয়ার পেজ-এ বিষয়টি লেখেন ওই মহিলা। উব্রের এক আধিকারিক জানান, ওই মহিলার খারাপ অভিজ্ঞতার জন্য তাঁরা আন্তরিক ভাবে দুঃখিত। যাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়টি তাঁরা সব সময়েই সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেন। অভিযোগ পেয়ে ওই যাত্রীর টাকা ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। চালকের ফোনে সমস্যা ছিল কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মহিলার প্রশ্ন, ‘‘টাকা ফেরত দিয়ে কী হবে? সে দিন তো খারাপ কিছুও হতে পারত! পুলিশও যদি সাহায্য না করে, তা হলে মেয়েরা একা চলাফেরা করবেন কী করে?’’
বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হলে কলকাতা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (১) জাভেদ শামিম ১০০ নম্বরের দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ আধিকারিককে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলেন। ওই আধিকারিক জানান, ১০০ নম্বরের রেকর্ডিং শুনে তাঁরা দেখেছেন, ওই সময়ে যা প্রয়োজন ছিল, মহিলাকে সেই মতোই সাহায্য করা হয়েছিল। মহিলাকে পুলিশই ওই অ্যাপ-ক্যাব সংস্থার হেল্পলাইন নম্বর দেয়। তার পরে ধন্যবাদ জানিয়ে মহিলা ফোন রাখেন। তবে ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ কেন সাহায্য করল না, তার কোনও উত্তর পুলিশ দেয়নি। মহিলা বলেন, ‘‘পুলিশ যে নম্বরটা দিয়েছিল, সেটা কাজ করেনি। কিছু ঘটলে তবে ফোন করতে বলা হয়েছিল। সাহায্য না পেয়েই ধন্যবাদ বলে ফোন রেখে দিয়েছিলাম।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy