Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
Violence

ক্লাবে বোমা-কাণ্ডে পুলিশের নজরে ‘অজ্ঞাতপরিচয়রা’

মঙ্গলবার বেলেঘাটা গাঁধী ভবনের কাছে ফ্রেন্ডস সার্কল নামে ওই ক্লাবে বোমা বিস্ফোরণ হয়। ক্লাবের সদস্যেরা দাবি করেন, বাইরে থেকে দুই যুবক মুখে গামছা জড়িয়ে এসে বোমা ছুড়ে পালিয়েছে। যদিও ফরেন্সিক আধিকারিকেরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেই জানিয়ে দেন, বোমা মজুত ছিল ক্লাবের মধ্যেই।

মঙ্গলবার বিস্ফোরণের পরে সেই ক্লাব। নিজস্ব চিত্র

মঙ্গলবার বিস্ফোরণের পরে সেই ক্লাব। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বেলেঘাটা শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০২০ ০২:৫২
Share: Save:

বেলেঘাটায় গাঁধী ভবনের কাছে ক্লাবঘরে বিস্ফোরণের পরে কেটে গিয়েছে প্রায় ৪৮ ঘণ্টারও বেশি সময়। এখনও এই ঘটনায় কাউকেই গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এর মধ্যেই বিতর্ক উস্কে দিয়ে রাজ্যের ক্রেতা-সুরক্ষা মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে বলেছেন, ‘‘বম্ব স্কোয়াড দিয়ে ওই এলাকায় ভাল করে তল্লাশি চালানো উচিত।’’ অনেকে যদিও বলছেন, সাধন এবং বেলেঘাটার বিধায়ক পরেশ পালের মধ্যে সম্পর্কের রসায়নই এই মন্তব্যের কারণ। পরেশবাবু অবশ্য বোমা বিস্ফোরণ প্রসঙ্গে এ দিন আর মন্তব্য করতে চাননি। বিতর্ক তৈরি হয়েছে পুলিশের রুজু করা মামলার ধরন নিয়েও।

আইনজীবীদের বড় অংশের দাবি, মামলার ধারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে, ক্লাবের মধ্যে যে বোমা মজুত ছিল এবং সেটাই যে ফেটেছে সে ব্যাপারে এক প্রকার নিশ্চিত পুলিশ। তাঁদের প্রশ্ন, সম্পাদক বা সভাপতির বদলে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কেন মামলা রুজু করা হল? বড় নাম গোপন করতেই পুলিশের এই চেষ্টা কি না, সেই প্রশ্নও উঠছে।

মঙ্গলবার বেলেঘাটা গাঁধী ভবনের কাছে ফ্রেন্ডস সার্কল নামে ওই ক্লাবে বোমা বিস্ফোরণ হয়। ক্লাবের সদস্যেরা দাবি করেন, বাইরে থেকে দুই যুবক মুখে গামছা জড়িয়ে এসে বোমা ছুড়ে পালিয়েছে। যদিও ফরেন্সিক আধিকারিকেরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেই জানিয়ে দেন, বোমা মজুত ছিল ক্লাবের মধ্যেই। এর পরে রাতেই পুলিশ ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২০বি (অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র), ২৮৬ (জীবনহানি হতে পারে এমন বিস্ফোরক নিয়ে অবহেলা) এব‌ং এক্সপ্লোসিভ সাবস্ট্যান্সেস অ্যাক্ট-এর পাঁচ নম্বর (সন্দেহজনক পরিস্থিতিতে বিস্ফোরক রাখা) ধারায় মামলা রুজু করে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে।

আরও পড়ুন: বাজারের ভিড় ঠেকাতে মাইকে সচেতনতার পাঠ

আরও পড়ুন: পুলিশ আবাসনের পুজোয় চাই পুরোহিত-রাঁধুনির করোনা রিপোর্ট ​

আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘বিশেষ কোনও ব্যক্তিকে আড়াল করার জন্যই পুলিশ তড়িঘড়ি এই ধারা দিয়ে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছে। আমার বাড়ি থেকে বোমা উদ্ধার হলে বা আমার বাড়িতে বোমা ফেটে গেলে কি পুলিশ অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা রুজু করত? না কি আমায় ডেকে পাঠিয়ে জেরা করে নিশ্চিত হয়ে আমার বিরুদ্ধেই মামলা করা হত! এখানে ক্লাবের মাথারা এতটাই প্রভাবশালী যে তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও কথাই মামলায় রাখা হয়নি।’’

কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী দেবকুমার চন্দ্র আবার বললেন, ‘‘মনে হচ্ছে, সচেতন ভাবে তথ্য গোপন করার চেষ্টা হচ্ছে। কোনও ভাবেই অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে এই মামলা হয় না। যে ক্লাবের মধ্যে বোমা ফেটেছে, সেই ক্লাবের মাথাদের ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা একেবারে বেআইনি।’’ প্রসঙ্গত, পুলিশি তদন্তের নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়ও এই ঘটনায় এনআইএ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। এ দিন বিজেপি নেতা রাহুল সিংহও দুর্গাপুরে ওই ঘটনা নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিয়ে বলেন, ‘‘বেলেঘাটার ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে, এখনও সতর্ক না হলে উপদ্রুত কাশ্মীরের অবস্থায় দাঁড়াবে সমগ্র রাজ্য।’’

আরও পড়ুন: পুরসভায় ফের হানা করোনার, আক্রান্ত চার​

বেলেঘাটা থানা কলকাতা পুলিশের ইস্টার্ন সাবার্বান ডিভিশনের (ইএসডি) অন্তর্গত। সেখানকার ডিসি অজয় প্রসাদ এ ব্যাপারে বলেন, ‘‘বেলেঘাটা নিয়ে যা বলার যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ) বলবেন।’’ যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ) মুরলীধর শর্মাকে বার বার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। উত্তর দেননি টেক্সট মেসেজেরও। বেলেঘাটা থানা সূত্রের খবর, বুধবার রাত পর্যন্ত ওই ক্লাবের কোনও সদস্যকেই ডেকে পাঠিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি। শিয়ালদহ আদালতের সরকারি আইনজীবী অরূপ চৌধুরী যদিও বলছেন, ‘‘ক্লাবের সম্পাদক বা সভাপতির নামে ও ভাবে মামলা করা যায় না। কেউ সম্পাদক বা সভাপতি রয়েছেন মানেই ক্লাবের সব ভাল-মন্দের দায় তাঁর, এটা হতে পারে না। বোমা ফাটার জন্যও তাঁকে সরাসরি দায়ী করা যায় না। তবে পুলিশ নিশ্চয় সেই পদাধিকারীদের ডেকে পাঠিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করবে। সেই প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু হবে।’’৪৮ ঘণ্টা পেরিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ প্রক্রিয়া শুরু হতে এত দেরি কেন? উত্তর মেলেনি কোনও তরফেই।

অন্য বিষয়গুলি:

Beleghata Blast Violence Blast
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE