Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
car

Rakhi Poddar: মেয়ে চালাবে ভারী গাড়ি! থমকে চাকরির ফর্ম পূরণ

ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা করেছেন। লাইসেন্স আছে হেভি মোটর ভেহিক্‌ল চালানোর।

কর্মক্ষেত্রে সমানাধিকারের দাবিতে মৌলালি থেকে কলকাতা পুরভবন পর্যন্ত মিছিল। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র

কর্মক্ষেত্রে সমানাধিকারের দাবিতে মৌলালি থেকে কলকাতা পুরভবন পর্যন্ত মিছিল। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০২২ ০৪:৪১
Share: Save:

ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা করেছেন। লাইসেন্স আছে হেভি মোটর ভেহিক্‌ল চালানোর। সাঁতারের ডাইভিং প্রতিযোগিতায় রয়েছে একাধিক মেডেল। তবু সরকারি গাড়িচালকের পরীক্ষার ফর্ম পূরণ করতে গিয়ে নাজেহাল অবস্থা নিমতার রাখি পোদ্দারের। ওয়েবসাইটে নাম-ধাম, যোগ্যতা লেখার পরেও ফর্ম জমা করা যাচ্ছে না। কারণ, ওয়েবসাইট জানিয়ে দিচ্ছে, এই পেশায় মহিলা নেওয়া হয় না। শুধু পুরুষরাই আবেদন করতে পারেন!

চাকরির পরীক্ষা দিতে গিয়ে গত কয়েক বছরে এমনই নানা অভিজ্ঞতা হয়েছে বলে দাবি করেছেন বছর চব্বিশের রাখি। মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক নারী দিবসে তিনি বললেন, ‘‘মেয়ে হয়ে হেভি মোটর ভেহিক্‌ল চালাব! এটাই বোধহয় সমস্যা। সরকারি কোনও দফতরে গাড়িচালক হিসেবে কাজ পাওয়া তো দূর, আবেদন পর্যন্ত করতে পারিনি। ঘটা করে নারী দিবস পালন করা হয়, কিন্তু স্রোতের বিপরীতে ভেসে কিছু করতে চাইলে পাশে কেউ নেই।’’

একই ধরনের অভিযোগ করছেন রাখির মা প্রতিমা পোদ্দার। প্রতিমা কলকাতার মহিলা বাসচালক। স্বামী শিবেশ্বরকে নিয়ে প্রতিদিন রাত সাড়ে তিনটেয় বেরিয়ে পড়েন। নিমতা-হাওড়া রুটের বাসে তিনি বসেন স্টিয়ারিংয়ে আর স্বামী থাকেন কন্ডাক্টরের ভূমিকায়। সকাল ১০টা পর্যন্ত বাস চালানোর পরে কয়েক ঘণ্টার বিরতি। ওই সময়ে বাড়ি ফিরে স্বামী-স্ত্রী লেগে পড়েন সংসারের কাজে। রান্না-খাওয়া সেরে ফের দম্পতি বেরিয়ে পড়েন বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ। ফিরতে ফিরতে রাত ১০টা। গত দশ বছর ধরে এ ভাবেই চলেছে পেশা এবং সংসার সামলে দুই মেয়েকে বড় করা। প্রতিমার থেকেই বড় গাড়ি চালানো শিখেছেন মেয়ে রাখি।

প্রতিমা বললেন, ‘‘স্বামী-স্ত্রী যে বাসটা এত দিন ধরে চালাচ্ছি, সেটা আর চার বছর পরে কাটাইয়ে চলে যাবে। নতুন বাস বার করতে প্রচুর খরচ। সরকারি স্তরে ইলেকট্রিক বাস নিয়ে অনেক ভাবনাচিন্তা চলছে শুনছি। কিন্তু আমাদের মতো মহিলা চালকদের নিয়ে কোনও ভাবনা শুনি না।’’

পেশায় অটোচালক, রবীন্দ্র সরোবরের তন্দ্রা সাধুখাঁর আবার অভিযোগ, ভাবনা তো নেই-ই, বরং বছরের পর বছর পেরোলেও মহিলা চালকদের নিয়ে ঘোষিত প্রকল্প বাস্তবায়িত হয় না। ২০১৮ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ঘোষণা হয়, শহরের প্রথম মহিলা-চালিত অটোর রুট হবে টালিগঞ্জ-হাজরা। লাইসেন্সের আবেদন করেন ১৬ জন মহিলা। প্রশিক্ষণের পরে তাঁদের বেশির ভাগ লাইসেন্স পেলেও অটো রাস্তায় নামেনি। অনেকে ছেড়ে দিলেও সেই সময়ে অটো চালানোর প্রশিক্ষণ নেওয়া তন্দ্রা এখনও দিনের কয়েক ঘণ্টা ভাড়ায় নেওয়া অটো চালান রবীন্দ্র সরোবরের একটি রুটে। সংসার টানতে বাড়ি বাড়ি খবরের কাগজও পৌঁছে দেন।
তন্দ্রার মা রীনাদেবী বললেন, ‘‘করোনার জন্য এক সময়ে যাত্রীই হচ্ছিল না। লকডাউনে সব বন্ধ ছিল। তন্দ্রার অটোর মালিক বলে দিয়েছিলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ডাকা হবে।’’ রীনাদেবীর ক্ষোভ, ‘‘শুধু কি প্রচার পাওয়ার জন্য মহিলাচালিত অটো নামানোর ঘোষণা করা হয়েছিল? কয়েক দিন খুব শোরগোল হল, কাজ হল না। গত দুর্গাপুজোয় এক পুজো কমিটি তন্দ্রাকে ডেকে নিয়ে গেল, মহিলা অটোচালক হিসেবে সংবর্ধনায় দশ হাজার টাকা দেবে বলে। পুজোর পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও একটি টাকাও দেয়নি।’’

তবে এমন পরিস্থিতির মধ্যেও লড়াই না ছাড়ারই পরামর্শ দিলেন শহরের মহিলা পুরোহিত নন্দিনী। হাজার সমালোচনা এবং প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও নিজের কাজ চালিয়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতা শুনিয়ে তিনি বলেন, ‘‘লেডি ব্রেবোর্ন কলেজে পড়াশোনা করেছি। অধ্যাপিকা গৌরী ধর্মপাল আমাদের দীক্ষা দিয়েছিলেন। তাঁর প্রেরণায় পৌরোহিত্যের দায়িত্বে আসা। শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিক আচারের বদলে সাহিত্য এবং দর্শন-নির্ভর পৌরোহিত্যের পথ প্রশস্ত করতে চেয়েছি। এ নিয়ে প্রতিদিন আক্রমণের মুখে পড়তে হয়। কিন্তু আমরা এক বিভেদহীন সমাজের স্বপ্ন দেখি। নারী-পুরুষের সমান অধিকার ছাড়া যা সম্ভব নয়। যতই প্রতিবন্ধকতা আসুক, এই স্বপ্ন দেখা কি থামিয়ে দেব?’’

এই স্বপ্নেরই কথা শোনালেন কলকাতার প্রথম মহিলা ফুড ডেলিভারি কর্মী রূপা চৌধুরী। তিনি বললেন, ‘‘নারীর জন্য নির্ধারিত একটি দিনেই নয়, প্রতিদিন নিজের কাজ দিয়ে প্রমাণ করতে হবে যে, আমাদের কেউ দমাতে পারবে না।’’

অন্য বিষয়গুলি:

car
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy