E-Paper

কাঁদানে গ্যাসের শেল আমার চোখে ঢুকে গেলে কী হত? প্রশ্ন বেহালায় পুলিশি অভিযানে আহতের

বাস থেকে নেমেই দেখি, লোকজন ছুটছেন। তাঁদের তাড়া করেছেন পুলিশকর্মীরা। এরই মধ্যে শুরু হল পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাথর ছোড়া।

হাসপাতালে পূজা। শুক্রবার।

হাসপাতালে পূজা। শুক্রবার। —নিজস্ব চিত্র।

পূজা সর্দার (বেহালায় পুলিশের ছোড়া কাঁদানে গ্যাসের শেলে আহত)

শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০২৩ ০৬:১৫
Share
Save

হঠাৎ করেই কিছু একটা মুখে এসে লাগল। সঙ্গে সঙ্গে গালে তীব্র জ্বালা। চোখেও কিছু দেখতে পাচ্ছি না। কী ঘটল, জানি না। মাটিতে পড়ে গিয়েছিলাম। এর পরে আর হুঁশ ছিল না। যখন জ্ঞান হল, দেখি, অটোর পিছনের আসনে বসে আছি। আমাকে ধরে আছেন এক
মহিলা। অটোচালককে তিনি বলে চলেছেন, ‘‘তাড়াতাড়ি চালাও।’’ গালের জ্বালাটা তখন যেন আরও বেড়েছে। হাত দিয়ে দেখি, রক্ত ঝরছে। গায়ের পোশাকও ভিজে গিয়েছে সেই রক্তে!

আমার বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনার আমতলায়। স্বামী আশিস সর্দার পেশায় দিনমজুর। আমি বেশ কয়েক বছর ধরে বেহালার কয়েকটি বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করি। সেই রোজগারেই দুই ছেলে আর এক মেয়েকে নিয়ে আমাদের সংসার চলে। বড় ছেলেটা সদ্য কাজে ঢুকলেও আমার আয়ই সংসারের মূল ভরসা। প্রতিদিনের মতো শুক্রবারও কাজে যাব বলে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলাম সকাল সাড়ে ৬টায়। সওয়া ৭টা নাগাদ বেহালা চৌরাস্তায় বাস থেকে নামা মাত্র যা অভিজ্ঞতা হল, তা ভোলার নয়। মনে হচ্ছে, বেঁচে যে আছি, এটাই যেন বড় কথা। এসএসকেএম হাসপাতালে আমার অস্ত্রোপচার হয়েছে। তার পরে একটা শয্যায় রাখা হয়েছে আমাকে। বাড়ির লোকের মুখে শুনেছি, একটি বাচ্চা ছেলে আর তার বাবাকে লরি পিষে দিয়ে গিয়েছিল। সেই রাগেই এলাকার মানুষ রাস্তা অবরোধ করেছিলেন। যা নিয়ে পুলিশের সঙ্গে তাঁদের সংঘর্ষ শুরু হয়। আমি গিয়ে পড়েছিলাম সেই সংঘর্ষের মধ্যে।

বাস থেকে নেমেই দেখি, লোকজন ছুটছেন। তাঁদের তাড়া করেছেন পুলিশকর্মীরা। এরই মধ্যে শুরু হল পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাথর ছোড়া। পুলিশও পাল্টা লাঠি চালাতে শুরু করে। তা দেখেই এক জন পাশের দোকান থেকে পাত্র ভরা কিছু একটা নিয়ে এসে রাস্তায় পড়ে থাকা পুলিশের মোটরবাইকে ঢেলে দিলেন। তার পরে তাতে ধরিয়ে দেওয়া হল আগুন! কিছুটা দূরে পড়ে থাকা পুলিশের আর একটি মোটরবাইকেও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে তত ক্ষণে। পুলিশের একটি ভ্যান ভাঙচুর করে তত ক্ষণে উল্টে দিয়েছে উন্মত্ত জনতা। তার উপরে উঠে লাফাচ্ছেন কিছু মানুষ। তাতেও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হল কিছু ক্ষণেই।

কোন দিকে পালাব, বুঝে উঠতে পারছিলাম না। রাস্তার এক পাশ ধরে ছুটতে শুরু করি। তার
মধ্যেই হঠাৎ গালের কাছে কিছু একটা এসে লাগে। এর পরে আর জ্ঞান ছিল না। যখন হুঁশ ফেরে, তখন আমি অটোয়। চোখ, নাক প্রবল জ্বলছে। পরে শুনেছি, যে স্কুলের ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে, সেখানকারই এক শিক্ষিকা আমাকে উদ্ধার করে অটোয় তুলে বিদ্যাসাগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ব্যান্ডেজ করে দিয়ে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলা হয়। আমার ফোন থেকে ওই শিক্ষিকাই আমার স্বামীকে খবর দেন। ওই শিক্ষিকাই আমাকে এসএসকেএমে নিয়ে আসেন। এই যাত্রায় বেঁচে গেলেও মনে হচ্ছে, পুলিশ ওই ভাবে এলোপাথাড়ি কাঁদানে গ্যাস ছুড়ল কেন? গালে লাগার বদলে কাঁদানে গ্যাসের ওই শেল আমার চোখে লাগলে কী হত? উত্তর দেওয়ার কেউ নেই। আপাতত আমার পরিবারের চিন্তা, কবে আবার আমি কাজে ফিরব। নয়তো সংসার অচল।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Death Kolkata police

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।