Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
Raksha Bandahn

রবির রাখিবন্ধন  আমেজে সাম্যের ডাক 

রাখির আগে ২০২৩-এর কলকাতাতেও আশ্চর্য বন্ধনেই ধরা পড়লেন নজরানা, সঞ্জু বা বর্ণশ্রী, বিশাল, প্রমীলার মতো তরুণ-তরুণীর ঝাঁক।

An image of Rakhi

—প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০২৩ ০৬:০৩
Share: Save:

স্কুলের ইতিহাস ক্লাসে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন বা রবীন্দ্রনাথের রাখিবন্ধনের কথা ভাসা ভাসা পড়েছিল ওরা। কিন্তু তিলজলার একাদশ শ্রেণির নজরানা খাতুন বা ট্যাংরার নবম শ্রেণির সঞ্জু সিংহেরা এর গুরুত্ব মোটেও বোঝেনি এত দিন। রাখিপূর্ণিমার প্রাক্কালে, রবিবারের সকালে নাখোদা মসজিদ লাগোয়া এক উঠোনে বসে তারা শুনছিল ইতিহাসের সেই উত্তাপ-কাহিনি। “রাখি তো এত দিন ভাই-বোনের বিষয় বলে জানতাম। রাখির মধ্যেও বন্ধুত্ব, সম্প্রীতির কথা বলা যায়, এত দিন বুঝিইনি”— আলোচনা শেষে নজরানা বলে ওঠে। সেই মুহূর্তে তার ডান হাতের কব্জিতে ঝকমক করছে ‘সাম্যের রাখি’!

রাখির আগে ২০২৩-এর কলকাতাতেও আশ্চর্য বন্ধনেই ধরা পড়লেন নজরানা, সঞ্জু বা বর্ণশ্রী, বিশাল, প্রমীলার মতো তরুণ-তরুণীর ঝাঁক। ধর্ম, জাতের ঊর্ধ্বে চিরসবুজ বন্ধুতার গল্প তাঁদের সামনে মেলে ধরলেন ‘দোস্তজী’ ছবির পরিচালক প্রসূন চট্টোপাধ্যায়। ‘নো ইয়োর নেবার’ এবং ‘আজ়াদ ফাউন্ডেশন’ নামে শহরের তরুণদের দু’টি সম্প্রীতি মঞ্চের উদ্যোগে হইহই করে রাখির আগের রবিবারে এক অন্য রকম রাখির অনুষ্ঠান সম্পন্ন হল।

নাখোদা মসজিদের পাশে যেখানে এই নবীনেরা জড়ো হয়েছিলেন, তার পাশেই রাখি হাতে সম্প্রীতির ডাক দিয়েছিলেন যুবক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। অবাংলাভাষী মুসলিমদের সঙ্গে বাঙালিদের মেলামেশা সে সময়ের কলকাতায় মোটেও অবাধ ছিল না। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখায় তাঁর ‘রবিকা’র রাখি পরানোর কাণ্ড শুনছিল তরুণ-বাহিনী। বিশাল, বর্ণশ্রীরা অস্ফুটে বললেন, “কীই আশ্চর্য, বাংলার এই সব আদর্শই তো বার বার সবাইকে শোনানো উচিৎ।” উত্তরপ্রদেশের স্কুলে ৮ বছরের একটি মুসলিম ছাত্রের বিরুদ্ধে ঘৃণার বিষ ছড়ানো ভাইরাল ভিডিয়োর ছায়াও ছাপ ফেলেছিল এ দিনের অনুষ্ঠানে। রাজাবাজারের স্বামী-বিচ্ছিন্না একলা মা তসলিমা বেগম বললেন, “বাংলার পরিবেশ অন্য রকম! কিন্তু অন্যত্র যা ঘটছে, সংখ্যালঘু মুসলিম পরিবারে সর্বত্রই নানা ভয় ঢুকে পড়ছে।” বাবরি মসজিদ ভাঙার পটভূমিতে মুর্শিদাবাদে একটি হিন্দু ও মুসলিম বালকের অমলিন বন্ধুতা নিয়ে প্রসূনের ছবি দেশেবিদেশে সাড়া ফেলেছে। তিনি বললেন, “ধর্ম বা গায়ের রং নিয়ে সংখ্যাগুরুবাদ অন্য দেশেও প্রকট। আমাদের ছবিটা তাই অনেকের মনে ধরেছে।”

এই দুঃসময়ে গোটা দেশেই বাংলার সমন্বয়ী আদর্শ পথ দেখাতে পারে বলে মনে করেন অনুষ্ঠানটির আহ্বায়কেরা। সাবির আহমেদ বললেন, “রবীন্দ্রনাথের রাখিবন্ধন, শান্তিনিকেতনে ক্ষিতিমোহন সেনদের যুক্তসাধনা বা সুভাষচন্দ্রের ধর্মে ধর্মে সাংস্কৃতিক অন্তরঙ্গতার ভাবনার কাছেই তাই আমরা দেশের সঙ্কটকালে হাত পাতছি!’’

অন্য বিষয়গুলি:

Raksha Bandahn Rakhi Equality
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE