পুলিশ আধিকারিকের কাছে দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি জানালেন অভিষেকের বাবা। নিজস্ব চিত্র।
টেবিলে রাখা ছেলের ছবি। তার সামনে বসে ছবির দিকে বার বার তাকিয়ে অঝোরে কেঁদে চলেছেন বাগুইআটির নিহত দশম শ্রেণির ছাত্র অভিষেকের বাবা হরি নস্কর। শুধু ফাঁসি নয়, তার আগে যে হাত দিয়ে তাঁর ছেলেকে খুন করা হয়েছে, সত্যেন্দ্রের সেই দুই হাত কেটে দেওয়া হোক। কাঁদতে কাঁদতে মূল অভিযুক্তের কঠোর শাস্তির দাবি জানালেন পুত্রশোকে বিহ্বল হরি।
শুক্রবার সকাল ৯টা নাগাদ হাওড়া স্টেশন চত্বর থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে দুই ছাত্র অতনু দে ও অভিষেক নস্কর খুনে মূল অভিযুক্ত সত্যেন্দ্র চৌধুরিকে। গ্রেফতারি প্রসঙ্গে অভিষেকের বাবা বলেন, ‘‘আমরা শাস্তি চাই। শুধু ফাঁসি দিলে হবে না। প্রথমে দুটো হাত কেটে দিতে হবে। যে হাত দিয়ে এই কাজ করেছে, এর পর জনগণ দেখবে জ্বালার কী মর্ম। এর থেকেও যদি কঠিন শাস্তি থাকে, সব থেকে কঠিন শাস্তি দেওয়া হোক। যাতে সারা দেশে এই কাজ করার আর কেউ সাহস দেখাতে না পারে।’’
সত্যেন্দ্রকে গা-ঢাকা দিয়ে থাকতে যাঁরা সাহায্য করেছেন, তাঁদেরও শাস্তির দাবি করেছেন হরি। তিনি বলেছেন, ‘‘সত্যেন্দ্র এত দিন কোথায় ছিল? কারা মদত দিয়েছে? এত দিন কোন বাড়িতে ছিল? যে পয়সা দিয়েছে, শুনলাম টিকিট কাটার জন্য পয়সা দিয়েছে। যারা ওকে সাহায্য করেছে, তাদের আগে শাস্তি দেওয়া হোক। পায়ে ইট বেঁধে যে ভাবে আমাদের সন্তানকে মেরেছে, ওই জায়গায় জলে ফেলে দিক, জনগণ দেখুক। অন্য জায়গাতেও ফেলতে পারেন। তখন বুঝবে যে এই কষ্ট পেয়ে ওরা মরেছে, আমরাও মরছি। তা হলে আমাদের ছেলের আত্মা শান্তি পাবে।’’ সত্যেন্দ্র প্রসঙ্গে অভিষেকের বাবা বলেন, তিনি তাঁকে চিনতেন না। আগে কখনও দেখেনওনি।
অভিষেককে কেন খুন করা হল, এর কারণ বুঝতে পারছেন না সন্তান হারানো বাবা। তিনি বলেছেন যে, অতনুর সঙ্গে বাইক নিয়ে দোষীদের কথাবার্তা হয়। কিন্তু অভিষেক তো এর মধ্যে ছিল না। শুধু অতনুর কথায় তার সঙ্গে সে গিয়েছিল। দাদা ডেকেছে, ভাই গিয়েছে। গলায় একরাশ আক্ষেপ নিয়ে হরি বললেন, ‘‘এটা কী ধরনের কাজ হল জানি না। শুনেছি অপহরণ করলে বলে, তোমার ছেলেকে রাখা আছে এখানে, এই চাই, তোমার ছেলেকে নিয়ে যাও। কিংবা বলে, তুমি এই অন্যায় করেছ তার জন্য তোমার ছেলেকে অপহরণ করলাম। এগুলো আমরা সিনেমায় দেখেছি। কিন্তু এটা কী ধরনের কাজ হল? আমাদের টাকাও চেয়ে পাঠানো হয়নি। ফোনও করা হয়নি।’’ অভিষেকের বাবা আরও বলেন যে, অতনুর উপর যদি ক্ষোভই থাকত দোষীদের, তা হলে তারা অভিষেককে ছেড়ে দিতে পারত। তাকে বাড়ি পাঠিয়ে দিতে পারত।
শুক্রবার অভিষেকের বাড়িতে যান এসিপি (এয়ারপোর্ট জোন) সুরজিৎ দে। তাঁর সামনে দোষীদের কঠোর সাজার দাবি জানান হরিবাবু। পুলিশের তরফে পরিবারকে আশ্বস্ত করা হয়েছে।
অভিষেকের মতোই অতনুর পরিবারও সত্যেন্দ্রের ফাঁসির দাবি করেছে। বার বারই কান্নায় ভেঙে পড়ছেন অতনুর মা। কাঁদতে কাঁদতেই সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেন, ‘‘ওকে (সত্যেন্দ্রকে) ফাঁসি দেওয়া হোক। পুলিশের গাফিলতিতে আমার ছেলেকে দেখতেও পারিনি।’’ পুলিশের গাফিলতির অভিযোগ করেছেন অভিষেকের বাবাও। তিনি বলেছেন, ‘‘বাগুইআটি থানা সহযোগিতা করেনি। খুন যে হয়েছে তা তো আমরা জানতেই পারিনি।’’
গত ২২ অগস্ট থেকে নিখোঁজ ছিল বাগুইআটির হিন্দু বিদ্যাপীঠের দশম শ্রেণির ওই দুই ছাত্র। গত ২৫ অগস্ট হাড়োয়া থানার কুলটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় নয়ানজুলি থেকে উদ্ধার করা হয় অভিষেকের দেহ। এর আগে, গত ২৩ অগস্ট ন্যাজাট থানা এলাকা থেকে উদ্ধার হয় অতনুর দেহ। ১০-১২ দিন দেহ মর্গে থাকার পরও পুলিশ জানতে পারেনি বলে অভিযোগ। গত ৬ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার এই ঘটনার কথা প্রকাশ্যে আসতেই শোরগোল পড়ে যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy