আগুন-যুদ্ধ: বাগড়ি মার্কেটের যে-অংশে আগুন লেগেছিল, তৃতীয় দিনে সেখানকার ছাদে পৌঁছল দমকল। পাশের ভবন থেকেও চলছে আগুন নেভানোর কাজ। মঙ্গলবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
সেই পরম্পরা সমানে চলছে!
স্টিফেন কোর্টের অগ্নিকাণ্ডের পরে শহরের বিপজ্জনক ও অগ্নিপ্রবণ বাড়িগুলিতে ব্যবসার জন্য নতুন ট্রেড লাইসেন্স ও তার পুনর্নবীকরণের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি করেছিল রাজ্য সরকার। কড়াকড়ির অবসান ঘটে ২০১৩ সালের এপ্রিলে। ২০১৩-’১৪ আর্থিক বর্ষে নতুন ট্রেড লাইসেন্স (সার্টিফিকেট অফ এনলিস্টমেন্ট) এবং তা পুনর্নবীকরণের ক্ষেত্রে বাগড়ি মার্কেটকে ছাড় দিয়েছিল দমকল দফতর। তাদের ওই ‘এনওসি’র (মেমো নম্বর:ডব্লুবিএফইএস/৯১৫/১৩/কল-নোটিস/১২/১০) উপরে ভিত্তি করে সেই বছর জুলাইয়ে বাগড়ি মার্কেটে ব্যবসায়ীদের নতুন ট্রেড লাইসেন্স ও পুনর্নর্বীকরণের ছাড়পত্র দেয় পুরসভা। যার মেয়াদ ছিল এক বছর। শোভন চট্টোপাধ্যায় দমকল দফতরের দায়িত্ব পাওয়ার পরেও সেই পরম্পরা বজায় থেকেছে।
কিন্তু বছরের পর বছর কীসের ভিত্তিতে সেই ছাড়পত্র দেওয়া হল, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েই। বিশেষত, বাগড়ি মার্কেট তো বটেই, শহরের আরও ৩৬টি বিপজ্জনক ও অগ্নিকাণ্ডপ্রবণ বিল্ডিংয়ে সুরক্ষা ব্যবস্থা আদৌ আছে কি না, তা নিয়ে যখন প্রশাসনের অন্দরেই প্রশ্ন উঠেছে।
পাঁচ বছর আগে বাগড়ি মার্কেটকে ‘ক্লিনচিট’ দিয়ে দমকল দফতর জানিয়ে দিয়েছিল, সেখানে নতুন ব্যবসা খোলা ও ইতিমধ্যেই ব্যবসা চলছে, এমন ক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্সের (সার্টিফিকেট অব এনলিস্টমেন্ট) ছাড়পত্র দিতে পারে কলকাতা পুরসভা। সেই সময়ে দমকল দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ছিলেন জাভেদ খান।
কীসের ভিত্তিতে তাঁর দফতর বাগড়ি মার্কেটে ছাড়পত্র দিয়েছিল? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে জাভেদ বলেন, ‘‘অগ্নি সুরক্ষা ব্যবস্থা ছাড়া তখন কাউকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি। তা হলে নিশ্চয় অগ্নি সুরক্ষা ব্যবস্থা ছিল বলেই ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছিল। তবে ঠিক কী হয়েছিল, সেটা মনে নেই। দেখে বলতে হবে।’’
কিন্তু বাগড়ি মার্কেটে যে সে ব্যবস্থা ছিল না, তা সাম্প্রতিক সময়ের পুর তালিকাই বলছে।
কারণ, শহরের ৩৭টি ‘এনডেঞ্জারড’ ও ‘ফায়ার-প্রোন’ বিল্ডিংয়ের মধ্যে বাগড়ি মার্কেটের নাম জ্বলজ্বল করছে। এ নিয়ে এক পুর আধিকারিকের কথায়, ‘‘দমকল দফতরের ছাড়পত্র ছিল বলেই আমরা শর্তসাপেক্ষে ট্রেড লাইসেন্সের ছাড়পত্র দিয়ে এসেছি।’’
কিন্তু সেই ছাড়পত্রের সময়সীমার মেয়াদ তো এক বছর ছিল।
তার পর?
প্রশাসনের কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, ২০১৬ সালে শোভনবাবুকেই দমকল দফতরের দায়িত্ব দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর এখানেই প্রশ্ন উঠছে, জাভেদ খানের সময়ে যদি কোনও ‘ভুল’ হয়ে থাকে, তা শোধরানোর দায়িত্ব শোভনবাবু কেন নিলেন না?
বরং একইসঙ্গে মেয়র এবং দমকলমন্ত্রী হওয়ার তো বাড়তি সুবিধা রয়েছে— শহরের কোন-কোন বাড়ি অগ্নিপ্রবণ হয়ে রয়েছে, তার সরাসরি হিসেব রাখা এবং সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ করা! প্রশাসনের এক পদস্থ কর্তার কথায়, ‘‘দুই দফতর তো আলাদা নয় যে এনডেঞ্জারড ও ফায়ার-প্রোন বিল্ডিংগুলির অবস্থা কেমন, তা নিয়ে ধোঁয়াশা থাকবে। সব ফাইল তো একজনই দেখছেন।’’ যদিও প্রশাসনের আরেক অংশের দাবি, ছাড়পত্র দেওয়ার নির্দেশ যে জায়গা থেকে এসেছিল, সেখানে কারও কিছু করার ছিল না।
এ বিষয়ে শোভনবাবুর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘‘কখন, কীসের ভিত্তিতে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছিল, সেটা দেখে বলতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy