সেরা অভিনেতার পুরস্কার পেলেন ঋত্বিক চক্রবর্তী এবং সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পেলেন পরীমণি। নিজস্ব চিত্র।
বেড়া ভেঙে নতুন ঐতিহ্য স্থাপনের পথেই বরাবর হেঁটে এসেছে আনন্দবাজার অনলাইন। সেই পথচলার দৃপ্তভঙ্গিতে গাঁথা রয়েছে তার শ্রেষ্ঠত্বের অন্বেষণও। ভৌগোলিক থেকে সামাজিক বেড়া ভাঙার সাহসে আলোকিত হয়ে রইল আনন্দবাজার অনলাইনের ‘বছরের বেস্ট সন্ধ্যা’। অতিমারি আবহে সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠান দিয়ে যে যাত্রার সূত্রপাত, তা এ বছর তিনে পা দিল! আড়ে-বহরে চোখ টেনে সপ্তাহশেষের ঝলমলে সন্ধ্যায় আইটিসি রয়্যাল বেঙ্গলে শিরোপা পেলেন ‘বছরের বেস্ট’ দশ জন। গত ১২ মাসের এই ১০ জন কৃতী বঙ্গভাষী, বঙ্গবাসীকে খুঁজে নিয়েছে আনন্দবাজার অনলাইন। তাতেই মিলে গেল গঙ্গা-পদ্মা!
অনুষ্ঠানের শুরুতেই সঙ্গীতশিল্পী রূপম ইসলামের উদাত্ত কণ্ঠে ‘ঋকবেদের গানে’ বাঁধা হয়ে গিয়েছিল অনুষ্ঠানের মূল সুর। আনন্দবাজার ডিজিটালের প্রধান সম্পাদক স্বয়ং অভীক সরকারও বলেন, ‘‘আমরা স্বভাবকৌতুক, আমরা বেড়া ভাঙি। কত দূর ভাঙতে পেরেছি, তা বলবেন আপনারা। কিন্তু গত এক বছরে আমাদের পাঠকেরা ৩০০ কোটি মিনিট ব্যয় করেছেন আমাদের লেখা পড়ার জন্য। এটাই আমাদের প্রাপ্তি।’’
এর পরেই কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে দুই বাংলার মানুষের মধ্যে থেকে ‘বছরের বেস্ট’-কে খুঁজে নেওয়ার পালা। যাঁর সঞ্চালনায় আনন্দবাজার অনলাইনের সম্পাদক অনিন্দ্য জানা এবং নাট্যপরিচালক-অভিনেত্রী সোহিনী সেনগুপ্ত। এই বছর সেরা অভিনেত্রী হিসাবে পুরস্কৃত হলেন চলচ্চিত্র জগতের অন্যতম মুখ পরীমণি। পুরস্কার নিতে মঞ্চে এসে বাংলাদেশের এই অভিনেত্রীর মত, চলচ্চিত্র শিল্পে আরও এক হয়ে কাজ করা উচিত দুই বাংলার। তাঁর কথায়, ‘‘দুই বাংলার সিনেমা দু’জায়গাতেই দেখানো উচিত।’’
২০১৫ সালে পর্দায় আবির্ভাবের পর থেকে গতি কমতে দেখা যায়নি পরীমণির কর্মজীবনে। ‘ভালবাসা সীমাহীন’ ছবি দিয়ে পথ চলা শুরু। তার পরেই দৌড়। একই বছর পর পর মুক্তি পায় ছ’টি ছবি। অল্প সময়েই সে দেশে মিষ্টি প্রেমের ছবির জনপ্রিয় মুখ হয়ে ওঠেন পরীমণি। ‘আরও ভালবাসব তোমায়’, ‘নগর মস্তান’, ‘রক্ত’, ‘পুড়ে যায় মন’, ‘আপন মানুষ’, ‘সোনা বন্ধু’, ‘স্বপ্নজাল’, ‘গুণিন’-এর মতো একের পর এক ছবিতে তাঁর মুখ্য ভূমিকায় মুগ্ধ হয়েছেন বহু দর্শক। দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে পরীমণিকে নিয়ে উৎসাহ গড়িয়েছে এ বঙ্গেও। এখন কাজের সূত্রে প্রায়ই কলকাতায় আসেন অভিনেত্রী। তিনি জানান, আগে এই শহরকে ‘বিদেশ’ মনে হলেও এখন আর তা হয় না। টান এখন এতটাই বেড়ে গিয়েছে যে, ফ্লাইটও মিস করেছেন! তাঁর কথায়, ‘‘কলকাতাকে আগে বিদেশ মনে হত। এখন হয় না। এ রকমও হয়েছে, আমার ফ্লাইট আজ। কিন্তু আমি দু’পাঁচ দিন পরে গিয়েছি।’’ পরীমণির হাতে পুরস্কার তুলে দেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম এবং টলিপাড়ার অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত।
এ বছর আনন্দবাজার অনলাইনের ‘বছরের বেস্ট’-এ সেরা অভিনেতা হলেন ঋত্বিক চক্রবর্তী। বড় পর্দা থেকে ওটিটি— সর্বত্র অনায়াস বিচরণ তাঁর। কখনও তিনি গোয়েন্দা, কখনও আবার এ কালের খেটে খাওয়া মানুষের মুখ। তাঁর হাতে সেরা-র সম্মান তুলে দিলেন অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় এবং অনির্বাণ ভট্টাচার্য। ঘটনাচক্রে, গত বছর এই সম্মান পেয়েছিলেন অনির্বাণ। সে বার তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, শাশ্বত না ঋত্বিক, কে বড় অভিনেতা? তার জবাব এসেছিল— ঋত্বিক। এ বার ঋত্বিককেও একই প্রশ্ন করেন সঞ্চালক। প্রশ্ন ছিল, কে বড় অভিনেতা— শাশ্বত না অনির্বাণ? উত্তর এসেছে, অনির্বাণ!
ঋত্বিককে প্রশ্ন করা হয়, বাংলায় অভিনেতাদের যে নবজাগরণ হয়েছে, অভিনেত্রীদের ক্ষেত্রে কি তা হয়েছে? উত্তরে অভিনেতা বলেন, ‘‘অভিনেত্রীদের ক্ষেত্রে আমাদের নবজাগরণ আগেই ঘটেছে। এখন যাঁরা কাজ করছেন, তাঁরা সেই ধারা বহন করছেন। নবজাগরণ আমাদের অনেক আগেই ঘটে গিয়েছে।’’
সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বছরভরের সাফল্যে যাঁরা নজর কেড়ে থাকেন, প্রতি বছর ‘বছরের বেস্ট’ অনুষ্ঠানে তাঁদেরই পুরস্কৃত করে আনন্দবাজার অনলাইন। তাঁদের কেউ তারকা। কেউ খ্যাতনামী। কেউ শিক্ষা, কেউ প্রযুক্তিতে, কেউ বিজ্ঞান, কেউ বিনোদনে তাক লাগিয়েছেন। তাঁদের ভিড়ে জায়গা করে নিয়েছেন সাধারণ হয়েও ‘অ-সাধারণ’ এক মানুষ। গ্ল্যামারের দ্যুতি থেকে ঢের দূরে থেকেও তিনিই প্রথম বছরের বেস্ট। পেশায় শিক্ষাকর্মী তিমির মল্লিক গত বছরে আনন্দবাজার অনলাইনের খুঁজে নেওয়া ১২ জন ‘অ-সাধারণ’-এর এক জন। তাঁর হাতে সম্মান তুলে দেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।
অণু-পরমাণু নিয়েই ব্যস্ততা। সেই জগতে ডুব দিয়ে নানা রহস্য উদ্ঘাটনে মত্ত থাকেন দেবশ্রী। যাদবপুরের আপাতত ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অফ সায়েন্স’-এ অধ্যাপিকা। কোয়ান্টাম কেমিস্ট্রি নিয়ে গবেষণা করেন। ‘কোয়ান্টাম কেমিস্ট্রি’ বুঝতে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের ব্যবহারের যে চেষ্টা তিনি চালিয়ে যাচ্ছেন, তা সাড়া ফেলেছে বিশ্বজুড়ে। স্বীকৃতিও পেয়েছেন নতুন ধরনের এই উদ্যোগের জন্য। দেশবিদেশের নানা প্রান্তে বিজ্ঞানচর্চায় যুক্ত আছেন বাঙালিরা। তবে এই বাঙালি কন্যা অনেকের মধ্যে আলাদা। চল্লিশে পা রাখার আগেই তাঁর অবাধ যাতায়াত বিজ্ঞানের কমচর্চিত কিছু পথে। তাঁর হাতে পুরস্কার তুলে দেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু।
এ ছাড়াও খেলা বিভাগে পুরস্কার পেলেন তিতাস সাধু। মেয়েদের প্রথম অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে যে তিন বঙ্গকন্যা ব্যাটে-বলে কেল্লাফতে করে ময়দান কাঁপিয়েছেন, তাঁদেরই এক জন হলেন চুঁচুড়ার তিতাস। শিল্পপতি হিসাবে সেরার সম্মান পেলেন রবি মোদী। লেখিকা হিসাবে সম্মান পেলেন ‘টেগোর্স ইউনিভার্সিটি: আ হিস্ট্রি অফ বিশ্বভারতী (১৯২১-১৯৬১)’ গ্রন্থের রচয়িতা স্বাতী গঙ্গোপাধ্যায়। পুরস্কৃত করা হয়েছে রূপটানশিল্পী সোমনাথ কুন্ডুকে। পরিচালক হিসাবে সম্মান পেলেন ‘অল দ্যাট ব্রিদস’ ছবির পরিচালক শৌনক সেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy