কান্না: নাতি আদির ছবি হাতে ঠাকুরমা চম্পা দাস। বুধবার, বেহালার বাড়িতে। নিজস্ব চিত্র
গত বছর কালীপুজোর সন্ধ্যায় ঠাকুরমার হাত ধরে ঘুরতে বেরিয়েছিল বেহালার শীলপাড়ার বাসিন্দা পাঁচ বছরের আদি দাস। ওদের ভাড়াবাড়ির কাছেই রাস্তায় তখন তুবড়ি ফাটানো হচ্ছিল। আচমকাই সেই তুবড়ির ভাঙা খোল ছিটকে এসে স্প্লিন্টারের মতো তার আদির গলায় বিঁধে যায়। ছিঁড়ে যায় ক্যারোটিড আর্টারি। সঙ্গে সঙ্গে প্রবল রক্তপাত হতে শুরু করে। চেষ্টা করেও যা আটকানো যায়নি।
ওই অবস্থায় তড়িঘড়ি আদিকে বিদ্যাসাগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। ২৭ অক্টোবরের সেই সন্ধ্যার ঘটনা প্রতি ক্ষণে তাঁকে তাড়া করে যায়। তিনি আদির ঠাকুরমা চম্পা দাস। একমাত্র সন্তানকে হারানোর শোক সামলাতে পারেননি আদির বাবা, পেশায় বেসরকারি সংস্থার নিরাপত্তারক্ষী কাজল দাস। ছেলের শোকে অবসাদগ্রস্ত হয়ে মাস ছয়েক আগে আত্মঘাতী হন তিনি। এর পরে আদির মা-ও বিয়ে করে অন্যত্র চলে গিয়েছেন।
যন্ত্রণার স্মৃতি আঁকড়ে একা পড়ে আছেন ষাটোর্ধ্বা চম্পা। “বাজি আমার গোটা পরিবারকে ধ্বংস করে দিল। প্রশাসনের কাছে একটাই অনুরোধ, বাজি বিক্রি বন্ধ হোক। আমার গোপালকে (নাতিকে এই নামে ডাকতেন) কেড়েছে বাজি, এর বিক্রি নিষিদ্ধ হোক। যাতে গোপালের মতো পরিণতি আর কারও না হয়।” বলতে বলতে বুজে আসে চম্পাদেবীর গলা।
আরও পড়ুন: ‘ভয়েই’ বেপরোয়া দৌড় লরির, বলছেন চালকেরা
আরও পড়ুন: গানের দ্বার ফের বন্ধ পানশালায়, বিভ্রান্তি চরমে
প্রশাসনের কাছে বৃদ্ধার আবেদন, এ বার তো করোনার জন্য অবশ্যই বাজি বিক্রি বন্ধ রাখা উচিত। তবে সব সময়ের জন্যই বাজি নিষিদ্ধ করুক সরকার। এটা তো কোনও জরুরি জিনিস নয়, অথচ এতে পদে পদে বিপদ। কিছু মানুষের সাময়িক আনন্দে কত মানুষের ক্ষতি হয়ে যায়। প্রশাসনই একমাত্র নিয়ম করে সেটা বন্ধ করতে পারে।
ছোট থেকেই ঠাকুরমার কোলেপিঠে বেড়ে ওঠা আদির। বুধবার বিকেলে নিজের ঘরে বসে চম্পাদেবী বলেন, “সে দিন আমার হাত ধরেই হাঁটছিল। তুবড়ি ফাটানো দেখে রাস্তার এক পাশে দাঁড়িয়ে পড়েছিল। নিমেষের মধ্যেই আগুনের মতো কী একটা আমার গায়ে পড়ল। তার পরেই দেখি, গোপালের গলা থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরোচ্ছে।” কথা শেষ করার আগেই ডুকরে কেঁদে উঠলেন আদির ঠাকুরমা। নাতি-ছেলেকে হারিয়েছেন। বৌমাও কাছে নেই। সম্প্রতি তাই বাড়ি বদলেছেন বৃদ্ধা।
এখন পূর্ব বড়িশায় ঘর ভাড়া নিয়ে মেয়ের সঙ্গে থাকেন। স্বামীর পেনশনের টাকায় কোনও রকমে সংসার চলে। সম্পত্তি বলতে একরাশ দুঃখ আর গোপালের স্মৃতি। যার হাত ধরে বার্ধক্যজীবন কাটানোর স্বপ্ন দেখতেন তিনি, দিনে বার কয়েক সেই নাতির ছবি কোলে নিয়ে আঁচল দিয়ে সযত্নে মোছেন তিনি। এখন এটাই তাঁর রোজকার অভ্যাস।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy