Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪

‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনির বিরুদ্ধ স্বর কি ‘আজাদি’ স্লোগানই

বিদ্বজ্জনেরা জানাচ্ছেন, উগ্র হিন্দুত্ববাদ থেকে মুক্ত হওয়ার এই ডাক ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে দেশে।

নয়া নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে মিছিল বেঙ্গালুরুতে।—ছবি এএফপি।

নয়া নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে মিছিল বেঙ্গালুরুতে।—ছবি এএফপি।

দেবাশিস ঘড়াই
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০২০ ০২:৫৮
Share: Save:

বিচ্ছিন্ন, অথচ দৃঢ়। এখনও তেমন উচ্চকিত নয়। কিন্তু সম্ভাবনাময়। ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি যখন গ্রাস করছে চারপাশের অনেক কিছুই, তখন নিজের মতো করে আরও একটি স্লোগান তৈরি হচ্ছে ক্রমশ পাল্টে যাওয়া এই দেশে। যে দেশে প্রতিবেশী এখন নিছক প্রতিবেশী নন, তিনি হিন্দু না মুসলিম—সেই পরিচয়টাও গুরুত্ব পাচ্ছে, তখন বিভাজনের সেই সরণির মধ্যেই একটি নতুন স্লোগান আশা দেখাচ্ছে বলে মনে করছেন বিদ্বজ্জনেদের একাংশ। একটি শব্দের সেই স্লোগানটি হল— ‘আজাদি’!

বিদ্বজ্জনেরা জানাচ্ছেন, উগ্র হিন্দুত্ববাদ থেকে মুক্ত হওয়ার এই ডাক ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে দেশে। যদিও ‘জয় শ্রীরামে’র প্রতিস্পর্ধী হিসেবে এই ‘আজাদি’ স্লোগান কতটা জায়গা করে নেবে, তা আগামী ভারতই বলবে বলে মনে করছেন অনেকে।

ইতিহাসবিদ রজতকান্ত রায় মনে করেন, এই মুহূর্তে যাঁরা ‘আজাদি’ স্লোগান দিচ্ছেন তাঁরা মূলত শিক্ষিত, সচেতন মানুষ। কিন্তু ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান যাঁরা ব্যবহার করছেন, সংখ্যায় তাঁরা অনেক বেশি এবং মূলত একটি রাজনৈতিক দলের সমর্থক। ফলে ‘জয় শ্রীরাম’ এবং ‘আজাদি’ স্লোগানের মধ্যে কোনটা শেষ পর্যন্ত জিতবে, তা বলা শক্ত। রজতকান্তবাবুর কথায়, ‘‘আজাদি যাঁরা বলছেন, তাঁরা যদি জয়লাভ না করতে পারেন, তা হলে কিন্তু শ্রীরামের ভারতবর্ষ নষ্ট হয়ে যাবে। রাম যা-যা করতে চাইতেন না, সেই না-করতে-চাওয়াগুলি নিয়েই বর্তমানে একটা কুশ্রী ভারতবর্ষ জন্মাবে। এমনিতে আজাদি ভিন্ন প্রেক্ষিতে ব্যবহার হতে পারে। কিন্তু বর্তমান ভারতের ক্ষেত্রে এই স্লোগানের একটা বড় সম্ভাবনা রয়েছে।’’

আরও পড়ুন: শাহিনবাগের পথে প্রতিবাদ এ শহরেও

ভাষাবিদদের একাংশ আবার জানাচ্ছেন, এটা মূলত ফারসি শব্দ, পরবর্তী কালে উর্দু শব্দভাণ্ডারে তা জায়গা পায়। ভাষাবিদ পবিত্র সরকার জানাচ্ছেন, ১৯৪০-এর সময় থেকে যখন সাম্রাজ্যবাদ আস্তে আস্তে গুটিয়ে যেতে থাকে, তখন থেকেই আজাদ হিন্দ ফৌজ, আজাদি— এই শব্দগুলো এ দেশে জনপ্রিয় হতে থাকে। তাঁর কথায়, ‘‘ব্যবহারগত দিক যদি দেখি, তা হলে বলতে হয় স্লোগানে একটা ক্রিয়াপদ থাকলে তার জোর অনেক বেশি হয়। সেখানে এটা বিশেষ্য, তাই এর জোর কিছুটা কম। তবে বারবার বলতে থাকলে এটা জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারে।’’

বিদ্বজ্জনেদের একাংশ আবার বলছেন, ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি যেখানে উগ্র হিন্দুত্ববাদের প্রতীক হয়ে উঠেছে, সেখানে আদতে ফারসি শব্দ ‘আজাদি’র বহু-ব্যবহার এ দেশের বৈচিত্র্যকেই মনে করিয়ে দিচ্ছে। শিক্ষাবিদ সৌরীন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘জয় শ্রীরাম ধ্বনির মাধ্যমে দেশকে এক বিশেষ দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আর সেই দিকটা আরোপ করা হচ্ছে আমাদের উপরে। এমনিতে রাম নিয়ে তো কোনওকালেই সমস্যা নেই, কিন্তু সমস্যা হচ্ছে রামকে যে ভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে তা নিয়ে। জয় শ্রীরামের মধ্যে একটা উগ্র হিন্দুত্ববাদের আস্ফালন রয়েছে, সেখানে আজাদি কিন্তু দেশের বৈচিত্র্যের কথা বলছে।’’

আরও পড়ুন: মনোবল চুরমার করতেই কি হস্টেলে হামলা

বর্তমান পরিস্থিতিতে ‘আজাদি’ স্লোগানের ব্যবহার যেন দেশের ‘স্বাধীনতা আন্দোলন’ হয়ে উঠেছে, যেখানে ছাত্র-যুবসমাজ বর্তমান ধর্মান্ধতা, সাম্প্রদায়িকতা, উগ্র হিন্দুত্ববাদের হাত থেকে স্বাধীনতা চাইছে। এমনটাই মনে করছেন কবি জয় গোস্বামী। তাঁর কথায়, ‘‘জয় শ্রীরাম ধ্বনি একটা হিংসাত্মক স্লোগান। কিন্তু আজাদি স্লোগানটির মাধ্যমে একটা বড় অভ্যুত্থান হবে বলেই আমি বিশ্বাস করি।’’

‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি যারা বলছে, তারা অনেক সংগঠিত, সংখ্যায় অনেক বেশি। কিন্তু তার মধ্যেই তৈরি হচ্ছে ‘আজাদি’-র বিচ্ছিন্ন ভূখণ্ড। যেগুলি এক হলে দেশ ফিরে যাবে তার পুরনো পরিচয়ে, যেখানে ধর্মান্ধতা বা সাম্প্রদায়িকতা নয়, মুখ্য হয়ে উঠবে বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য— এই বিশ্বাস দৃঢ় হচ্ছে বলেই মনে করছেন অনেকে।

অন্য বিষয়গুলি:

Azadi Jai Shree Ram CAA Protest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy