গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
আলিয়ার পর যাদবপুর। এক ছাত্রনেতার অডিয়ো ক্লিপ ভাইরাল। যেখানে তাঁকে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘কোন টিচারের কলার ধরতে হবে, আমাকে বলুন।’ যদিও এই অডিয়ো ক্লিপটির সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন।
অভিযুক্তের নাম সঞ্জীব প্রামাণিক। তিনি তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতা। তিনি বলেন, “কোন পরিস্থিতিতে কথাটা বলেছি, তার আগে কী বলেছি, পরে কী বলেছি, সব বিচার করতে হবে।” অর্থাৎ তিনি অস্বীকারও করেননি যে ওই অভিডো ক্লিপটি তাঁর নয়।
সঞ্জীবকে বলতে শোনা যায়, ‘‘আমরা ছাগলের তৃতীয় সন্তান হয়ে রয়েছি যাদবপুর ইউনিভর্সিটিতে। কেন...কেন? আমি আজকে দাঁড়িয়ে বলছি, কোন টিচারের কলার ধরতে হবে সঞ্জীব প্রামাণিককে বলো। এত বড় ক্ষমতা রাখে সঞ্জীব প্রামাণিক। আমার হিস্ট্রি, অ্যাক্টিভিটি অনেকে জানো না।’’
তাঁকে আরও বলতে শোনা যায়, ‘‘আমি কাউকে নিজের ফুটেজ বা আমার বিষয়ে কিছু বলি না। যারা এই মিটিংয়ে প্রেজেন্ট আছো, তারা খুব কম জনই জানো আমার অওকাত সম্পর্কে। আজকে দাঁড়িয়ে জুটার কোন লোকের কলার ধরতে হবে, সঞ্জীব প্রামাণিক ধরে দেবে। কিন্তু বাকি কেউ পারবে না।’’
সঞ্জীবের অবশ্য দাবি, ‘‘কোন প্রসঙ্গে কথাগুলি বলা হয়েছে, সেটা আগে দেখতে হবে। গত ১২ বছর ধরে আমি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছি। যে ভাবে টিএমসিপির সদস্যদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়, ফেল করিয়ে দেওয়া হয়, যে ভাবে উচ্চশিক্ষায় তাঁদের বঞ্চিত করা হয়, যে ভাবে ক্লাসে একঘরে করে রাখা হয়— এ সব বিষয় নিয়ে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে আমাদের।’’ এর পর তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূল ছাত্র পরিষদ এবং আমি নিজে প্রকাশ্যে এ ধরনের কোনও মন্তব্য সমর্থন করি না।’’
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএফআই সভাপতি তর্পণ সরকার তৃণমূল ছাত্রনেতার বক্তব্য প্রসঙ্গে বলেন, “এর আগেও তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতারা শিক্ষকদের হেনস্থা করেছেন, তাঁদের উপর চড়াও হয়েছেন। যাদবপুরে ছাত্র-শিক্ষকদের মধ্যে কলার ধরার সম্পর্ক ছিল না। তৃণমূল এখানে ছাত্র-শিক্ষকদের কলার ধরার সম্পর্ক আনতে চাইছে।আমরা তৃণমূল ছাত্রনেতার এই বক্তব্যের নিন্দা করছি। একই সঙ্গে তাঁর যথাযথ শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।”
যাদবপুরের সহ-উপাচার্য চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য বলেন, “অডিয়ো ক্লিপিংটা আমার কাছেও এসেছে। আমিও শুনেছি। অডিয়ো বা ভিডিয়ো ক্লিপিং যাই হোক না কেন, প্রথমে তার সত্যতা যাচাই করা দরকার। ঘটনাটি যদি সত্যিই হয়ে থাকে সেটা দুর্ভাগ্যজনক। এ ধরনের ঘটনা কখনও কাম্য নয়। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে এই সংস্কৃতি এই ধরনের ঘটনা কখনওই মামানসই নয়। অডিয়ো ক্লিপিং যাচাই করার পর কর্তৃপক্ষ যথাযথ পদক্ষেপ করবে।”
সম্প্রতি আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃণমূলের দুই ছাত্রনেতার ফোনালাপের অডিয়ো ক্লিপ প্রকাশ্যে আসার পর শোরগোল পড়ে গিয়েছিল। সেই ফোনালাপের রেকর্ডিং প্রকাশ্যে এনেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের একাংশ।
পড়ুয়াদের দাবি ছিল, ওই ফোনালাপে অংশ নেওয়া দুই ব্যক্তি তৃণমূলের ছাত্রনেতা। এক জন আলিয়ার প্রাক্তনী এবং অন্য জন তৃতীয় বর্ষের পড়ুয়া। ফোনের এক প্রান্ত থেকে বলতে শোনা যায়, উপাচার্যকে তিনি নিজেই বের করে দেবেন। শুধু সঙ্গে এক জন লাগবে। এ-ও বলা হয়, এ নিয়ে ফিরহাদ হাকিম, গোলাম রব্বানির মতো রাজ্যের মন্ত্রী ও তৃণমূলের শীর্ষ নেতাদের কথাও হয়েছে।
এর পর দু’জন ‘স্ট্র্যাটেজি’ তৈরির কথা বলেন। জিম নওয়াজ, নাদিমুল শেখ প্রমুখ তৃণমূল নেতার নামও শোনা যায় এই ফোনালাপে। এই অডিয়ো ক্লিপ প্রকাশ্যে এনেই আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের একাংশের অভিযোগ ছিল, এটা তৃণমূলেরই গোষ্ঠীকোন্দল।
ওই অডিয়ো প্রকাশের আগে একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হয়। যেখানে দেখা যায়, আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের ঘরে ঢুকে তাঁকে চড় মারার হুমকি দিয়েছিলেন তৃণমূল ছাত্রনেতা গিয়াসুদ্দিন মণ্ডল (তৃণমূলের দাবি, তিনি দলের কেউ নন)। উপাচার্যের ঘরে রীতিমতো তাণ্ডব করেন গিয়াসুদ্দিন-সহ আরও কয়েকজন যুবক। এই ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসতে শিক্ষামহলে নিন্দার ঝড় ওঠে। এর পর রবিবার অভিযুক্ত ছাত্রনেতাকে গ্রেফতার করে টেকনো থানার পুলিশ। ভাইরাল ভিডিয়োয় উপাচার্য মহম্মদ আলির গিয়াসুদ্দিনকে বলতে শোনা যায়, ‘‘‘‘ওই গালে দুটো চড়িয়ে দেব। আমার চড়ে প্রচুর লাগে। যে ক’টা তোর ছেলে আছে জিজ্ঞেস করে নিবি।’’
এর পর আবার তেমনই অডিয়ো ক্লিপ ছড়িয়ে পড়ল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy