Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

‘কাউন্সিলরেরা চোখ বুজে থাকলে ফল এমনই হবে’

কাউন্সিলরদের একাংশের ভূমিকা নিয়ে এর আগে একাধিক বার প্রশ্ন তুলেছিলেন অতীনবাবু। ডেঙ্গির বাড়বাড়ন্তে এ বার সরাসরি কাউন্সিলরদের একাংশের ব্যর্থতাকে এ ভাবেই দায়ী করলেন তিনি।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

দেবাশিস ঘড়াই
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৯ ০৪:২৬
Share: Save:

শুধু এলাকার পুরকর্মীদের বদলি নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে কাউন্সিলরেরা বরং এলাকার ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে একটু ভাবুন। বাইরের কেউ নন, এ কথা বলছেন কলকাতা পুরসভার ডেপুটি মেয়র তথা মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ। যে মন্তব্য ঘিরে পুরসভার অন্দরে পড়ে গিয়েছে শোরগোল।

কাউন্সিলরদের একাংশের ভূমিকা নিয়ে এর আগে একাধিক বার প্রশ্ন তুলেছিলেন অতীনবাবু। ডেঙ্গির বাড়বাড়ন্তে এ বার সরাসরি কাউন্সিলরদের একাংশের ব্যর্থতাকে এ ভাবেই দায়ী করলেন তিনি। পুরকর্তাদের একটি অংশ এ বিষয়ে অতীনবাবুকেই সমর্থন করছেন। তাঁদের বক্তব্য, এটা দরকার ছিল। কারণ, হাজার বার বলার পরেও ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে কাউন্সিলরদের কয়েক জনের হুঁশ নজরে আসছে না। অনেকে ডেঙ্গি বিরোধী অভিযানে অংশ নিলেও বহু ক্ষেত্রেই সেটা রাজনৈতিক প্রচারের কথা মাথায় রেখে। ডেঙ্গি রোধে পুরসভার যে পরিকাঠামো রয়েছে, কোনও কাউন্সিলর যদি তার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করেন তা হলে পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকত বলে জানাচ্ছেন পুরকর্তারা।

অতীনবাবু বলেন, ‘‘একটি এলাকায় কোথায় জল-জঞ্জাল জমে আছে, পুর স্বাস্থ্যকর্মীরা পরিদর্শন করে নিয়মিত তা কাউন্সিলরদের জানান। ফলে কোথায় কী জমা আছে সেটা জানতে তাঁদের পরিশ্রম করতে হচ্ছে না। তা সত্ত্বেও বহু জায়গায় ডেঙ্গি পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। স্বাস্থ্যকর্মী কোন ওয়ার্ডে কাজ করবেন, কোথায় বদলি হবেন, তা তো কাউন্সিলরই ঠিক করেন। ডেঙ্গি পরিস্থিতিও তা হলে তাঁর নিয়ন্ত্রণেই থাকা উচিত।’’

পুরকর্তাদের একটি অংশ জানাচ্ছেন, প্রতি বছরই ডেঙ্গি মরসুমে বাড়ি বাড়ি যেতে কাউন্সিলরদের নির্দেশ দেন পুর কর্তৃপক্ষ। কারণ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সূত্রের খবর, সামাজিক অংশগ্রহণ (কমিউনিটি পার্টিসিপেশন) ছাড়া ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণ অসম্ভব। সংশ্লিষ্ট পুরকর্মীরা কাজ করছেন, অথচ বাসিন্দারা বাড়িতে জঞ্জাল বা জল জমিয়ে রাখছেন, সে ক্ষেত্রে ফল মিলবে না। ফলে কাউন্সিলরের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, কেন্দ্রীয় পুর ভবন থেকে স্থানীয় স্তরে সেই যোগাযোগ তৈরি করা অসম্ভব। এ জন্য স্থানীয় জনসংযোগ জরুরি বলে মনে করিয়ে দিচ্ছেন পুরকর্তারা। অতীনবাবু বলছেন, ‘‘কাউন্সিলর হিসেবে আমার কী কাজ? আমার কাজ হল, ওয়ার্ডের কোন কোন জায়গায় অসুবিধা রয়েছে, কোথায় জঞ্জাল জমছে, জল জমছে, সে সব কর্তৃপক্ষকে জানানো। তার পরেও যদি কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা না নেন, সে ক্ষেত্রে অভিযোগ করা যাবে।’’

কাউন্সিলরেরা সক্রিয় হলে এলাকায় ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে থাকে, তা মানছেন একাধিক বরো চেয়ারম্যানও। যেমন দু’নম্বর বরোর চেয়ারম্যান সাধন সাহা বলছেন, ‘‘কোন এলাকায় ডেঙ্গির প্রভাব কতটা থাকবে, তা নিঃসন্দেহে নির্ভর করে সেই এলাকার কাউন্সিলর কতটা সক্রিয়, তার উপরে।’’ কিছু দিন আগে পুর বৈঠকে ডেঙ্গি পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে বলে যে কয়েকটি বরোর উল্লেখ করা হয়েছিল, তারই একটি সাত নম্বর বরো। ওই বরোর চেয়ারম্যান জীবন সাহা যদিও বলছেন, ‘‘কাউন্সিলরেরা নিজেদের কাজ ঠিকই করছেন। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দারা সচেতন না হলে কে, কী করবেন?’’

কাউন্সিলরদের সক্রিয়তায় ফাঁক থাকা প্রসঙ্গে পুরকর্তারা দৈনন্দিন রিপোর্টের বিষয়টিও তুলে এনেছেন। এক কর্তার কথায়, ‘‘কাউন্সিলরেরা চোখ বুজে থাকলে ফল এমনই হবে। ওয়ার্ড ঘুরে কোথায় কী অবস্থা, প্রতিদিন সেই সংক্রান্ত রিপোর্ট তৈরি করে সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলরকে দেওয়া হয়। ফলে কেউ এটা বলতে পারবেন না যে তিনি জানতেন না। জেনেও হাত গুটিয়ে বসে থাকলে কিছু করার নেই।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Dengue Deputy Mayor Atin Ghosh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy