অবহেলিত: পাকা রাস্তাই তৈরি হয়নি কলকাতা পুরসভার ১৪২ নম্বর ওয়ার্ডে। নেই নিকাশি ব্যবস্থাও। ছবি: অরুণ লোধ
পরিচিতি কলকাতা পুরসভার ওয়ার্ড হিসেবে। কিন্তু মহানগরীর বহু সুযোগ-সুবিধাই এখনও পৌঁছয়নি সেখানে। কলকাতার ১৪৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে অন্তত গোটা পনেরো ওয়ার্ড এখনও পড়ে আছে অনুন্নয়নের আঁধারে। সেখানে পরিস্রুত পানীয় জলই হোক বা আধুনিক নিকাশি ব্যবস্থা, মসৃণ রাস্তাই হোক বা পথের আলো— অভাব সব কিছুরই। ৫৮, ১০৮, ১১৩, ১১৪, ১৩৯, ১৪২, ১৪৩ ও ১৪৪-সহ সংযোজিত এলাকার আরও কয়েকটি ওয়ার্ডের এমনই অবস্থা। পরিষেবা না পেলেও ওই সমস্ত ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের কিন্তু সব ধরনের পুর কর দিতে হয়। ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা তাই প্রশ্ন তুলেছেন, এই বৈষম্য কেন এবং তা আর কত দিন চলবে?
১৪২ নম্বর ওয়ার্ডের মিথিরচক-জিয়াদারগোট-মালপাড়া-মাগুরখালি, ১৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের রঞ্জিত পার্ক-বিদ্যাসাগরপল্লি-কাজির চক বা ১২৬ নম্বর ওয়ার্ডের বসুন্ধরা পার্ক-সহ আরও কয়েকটি এলাকার বাসিন্দারা এখনও যেন গ্রামেই বসবাস করছেন। কাঁচা রাস্তার পাশেই খোলা নর্দমা। কোথাও আবার তা-ও নেই। সেখানে মাটির রাস্তার উপর দিয়েই বয়ে চলেছে দুর্গন্ধে ভরা বর্জ্য জল। বছর কয়েক হল জোকার কিছু গ্রাম কলকাতা পুরসভার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তার পর থেকেই সেখানে হুহু করে বেড়েছে জমির দাম। কিন্তু পরিষেবা বা সুযোগ-সুবিধায় তেমন কোনও পরিবর্তন আসেনি। জমির দাম বাড়ায় বাসিন্দারা খুশি হলেও তাঁরা মনে করেন, পানীয় জল, নিকাশি এবং রাস্তাঘাটের উন্নতি না হলে ওই জায়গা কোনও দিনই কলকাতা হয়ে উঠবে না।
সম্প্রতি ১১ নম্বর বরোয় পুরসভার প্রশাসনিক বৈঠকে এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এমন একাধিক কাউন্সিলর, যাঁদের ওয়ার্ডে অনুন্নয়নের এই চেহারাটা সব চেয়ে বেশি প্রকট। ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, কলকাতা পুরসভার এলাকা হওয়া সত্ত্বেও যে সব ওয়ার্ডে এখনও শহুরে সুযোগ-সুবিধা বিশেষ পৌঁছয়নি, সেখানে উন্নয়নের জন্য ‘কম্প্রিহেনসিভ ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান’ তৈরি করা হবে। অর্থাৎ, ওই সব এলাকায় শহরের মতো রাস্তাঘাট তৈরি করা হবে, খোলা নর্দমার বদলে তৈরি হবে কংক্রিটের নিকাশি নালা, অলিগলিতে লাগানো হবে এলইডি আলো। মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানান, এর জন্য পুরসভার সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, রাস্তা, আলো এবং নিকাশি দফতরকে প্রকল্প রিপোর্ট তৈরি করতে বলা হয়েছে। তবে পানীয় জল এবং নিকাশির পরিকাঠামো গড়ে তোলার জন্য যে ব্যয় হবে, তার একটা বড় অংশ নেওয়া হবে এশীয় উন্নয়ন ব্যাঙ্কের আর্থিক সহায়তার তহবিল থেকে।
জেলায় জেলায় মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠকের ধাঁচে সম্প্রতি কলকাতা পুর প্রশাসনও বরো-ভিত্তিক বৈঠক শুরু করেছে। পুরসভার অন্দরের খবর, আগামী বছরের পুর নির্বাচনের কথা ভেবেই শহরবাসীর ক্ষোভ মেটাতে এ ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছেন কর্তারা। ইতিমধ্যেই চারটি বরোয় ওই প্রশাসনিক বৈঠক শেষ হয়েছে। শুধু কলকাতা পুরসভার পদস্থ আধিকারিকেরাই নন, ওই সব বৈঠকে সেচ ও জলপথ, কেএমডিএ, পূর্ত, সিইএসসি এবং মৎস্য দফতরের অফিসারেরাও হাজির থাকছেন। পুরসভার এক আধিকারিক জানান, বৈঠকে যে সব সমস্যার কথা উঠছে, তা লিপিবদ্ধ করে পাঠানো হচ্ছে সংশ্লিষ্ট দফতরের কাছে। এবং প্রতিটি ক্ষেত্রেই কী পদক্ষেপ করা হচ্ছে, তার রিপোর্ট পুর প্রশাসনকে জানাতে বলা হয়েছে।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই চারটি বৈঠকে ১১২টি সমস্যার কথা তোলা হয়েছে। তার মধ্যে রাস্তা সারাই, জঞ্জাল সাফাই, নিকাশি নালা তৈরি থেকে পানীয় জল সরবরাহ—সব ধরনের সমস্যাই রয়েছে। এমনকি, কেইআইআইপি-র ‘অবৈজ্ঞানিক কাজ’ নিয়েও অভিযোগ তোলা হয়েছে বৈঠকে। শোভন চট্টোপাধ্যায় মেয়র থাকাকালীন কেইআইআইপি-র ওই সব কাজ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। তাতেও অবশ্য হুঁশ ফেরেনি কেইআইআইপি কর্তৃপক্ষের। পুরসভার প্রশাসনিক বৈঠকে ফের সেই সব প্রসঙ্গ উঠলেও কাজ কত দূর হবে, তা নিয়ে ধন্দ রয়েছে পুর মহলেই।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy