Advertisement
০৮ নভেম্বর ২০২৪
Tala Bridge

বন্ধ সেতু, হাসপাতালে পৌঁছতে নাকাল রোগীরা

টালা সেতু ভাঙার কাজ শুরু হওয়ায় শনিবার থেকেই উত্তর কলকাতার ওই অংশের পরিস্থিতি খারাপ হবে বলে আশঙ্কা ছিল।

ভোগান্তি: আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কাছে তীব্র যানজট। তার মধ্যেই চলছে রাস্তা পারাপার। শনিবার দুপুরে। নিজস্ব চিত্র

ভোগান্তি: আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কাছে তীব্র যানজট। তার মধ্যেই চলছে রাস্তা পারাপার। শনিবার দুপুরে। নিজস্ব চিত্র

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০১:৫৩
Share: Save:

এক হাতে শক্ত করে ধরা বৃদ্ধা মায়ের বাঁ হাত। অন্য হাতে প্লাস্টিকে ভরা হাসপাতালের দিস্তা দিস্তা কাগজ, জলের বোতল। বগলদাবা করা হাত-ব্যাগ। সেই অবস্থাতেই অশক্ত শরীরে কাঁপতে থাকা মাকে টেনে নিয়ে শনিবার দুপুরে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে রাস্তা পার হওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন অশোকনগরের বাসিন্দা নূপুর হালদার। এক পা এগোচ্ছেন, পরক্ষণেই তড়িদাহতের মতো ফিরে আসছেন। এক বার হঠাৎই গতি বাড়িয়ে আসা একটি বাসের সামনে পড়তে পড়তে বাঁচলেন।

এত তাড়াহুড়ো করছেন কেন? কাছেই দাঁড়ানো পুলিশকর্মীর প্রশ্ন শুনে প্রবল বিরক্ত নূপুর বললেন, ‘‘আধ ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছি। সামান্য রাস্তাটুকু পার করতে পারছি না। মা এ ভাবে কত ক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন?’’ কী হয়েছে ওঁর? প্রথমে ইশারা করে প্রশ্নটা না করার অনুরোধ জানিয়ে, পরে কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে নূপুর বললেন, ‘‘ক্যানসার। ফুসফুসে টিউমার ছিল, তা থেকে ছড়িয়ে পড়েছে। এক মাস হাসপাতালে রাখার পরে আজই ছুটি দিয়েছে। সামনের সপ্তাহে ফের আসতে বলেছে। কিন্তু রোগীকে নিয়ে রাস্তাই তো পেরোতে পারছি না।’’

টালা সেতু ভাঙার কাজ শুরু হওয়ায় শনিবার থেকেই উত্তর কলকাতার ওই অংশের পরিস্থিতি খারাপ হবে বলে আশঙ্কা ছিল। বেলগাছিয়া সেতু দিয়ে বেশ কিছু গাড়ি ঘুরিয়ে দেওয়ায় আর জি কর হাসপাতালেও এর সরাসরি প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করেছিলেন অনেকে। ছুটির দিনেই আর জি কর হাসপাতাল চত্বরের পরিস্থিতি সেই আশঙ্কাকে সত্যি বলে প্রমাণ করল। সেখানে কর্তব্যরত এক পুলিশকর্মী বলেন, ‘‘ছুটির দিনেই এই অবস্থা হলে সোমবার থেকে কী হবে? বহু রোগী তো অ্যাম্বুল্যান্সেই আটকে থাকবেন। এখনই বিকল্প না ভাবলে খুব খারাপ পরিস্থিতি হতে চলেছে।’’

এ দিন সকাল থেকেই গাড়ির লম্বা লাইন দেখা গিয়েছে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনের রাস্তায়। বেশ কয়েকটি অ্যাম্বুল্যান্সকেও আটকে থাকতে হয়েছে গাড়ির জটে। এখনও বহু রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় ট্যাক্সি বা ভাড়ায় নেওয়া অটোয়। আলাদা করে মানুষকে সচেতন করার জন্য কোনও সাইরেন না থাকায় সেগুলিকেও আটকে থাকতে হয়েছে এ দিন। যেমন বৃদ্ধ বাবাকে নিয়ে ট্যাক্সিতে হাসপাতালে এসেছিলেন ডানলপের বাসিন্দা সত্যজিৎ সেন। অভিযোগ, হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হওয়া বছর বাহাত্তরের সুনীল সেন ২০ মিনিটেরও বেশি সময় আটকে ছিলেন গাড়ির জটে। সত্যজিৎ বলেন, ‘‘লকগেট উড়ালপুল দিয়ে অন্তত কলকাতার দিকে আসার ব্যবস্থা রাখতে পারত। এতটা রাস্তা ঘুরে হাসপাতালে আসতে হচ্ছে। তার মধ্যে গাড়িও নড়ছে না। এক পুলিশকর্মীকে অনুরোধ করে তবে হাসপাতালে ঢুকতে পারলাম।’’

এক মাস ১৩ দিনের শিশুপুত্রকে নিয়ে এ দিন আর জি করে এসেছিলেন দেগঙ্গার বাসিন্দা মহিমা বিবি। বহির্বিভাগে সকাল সাড়ে ১১টার মধ্যে দেখানো হয়ে গেলেও বেলা ৩টের সময়েও হাসপাতাল ছাড়তে পারেননি। কোথা দিয়ে ট্রেন ধরতে যাবেন, তা-ই তিনি বুঝে উঠতে পারেননি। মহিমা বলেন, ‘‘ছেলেটার খুব জ্বর। একটা বাসও আসছে না। কত ক্ষণ রোদে এ ভাবে দাঁড়িয়ে থাকব জানি না।’’

কত দিন এই ভোগান্তি চলবে? ছুটির দিনেই পরিস্থিতি এমন দাঁড়াল যে প্রশাসনের কাছে এই প্রশ্নের কোনও স্পষ্ট উত্তর নেই। সোমবারের আগে উত্তর খুঁজে না পেলে আরও বেশি ভোগান্তির আশঙ্কা করছেন শহরবাসী।

অন্য বিষয়গুলি:

Tala Bridge Traffic
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE