—প্রতীকী চিত্র।
কখনও ফুটপাতে লরি নিয়ে উঠে পড়ে কয়েক জনকে পিষে দেওয়ার পরে লরি ফেলেই চম্পট দেন চালক, কখনও আবার মত্ত অবস্থায় স্টিয়ারিংয়ে বসে পথচারীদের ধাক্কা মারার পরে কাউকে বাঁচানোর সামান্যতম চেষ্টাও করেন না চালক। থানায় হাজিরা দেওয়া তো দূর, অভিযুক্ত চালককে খুঁজে পেতেই এর পরে হিমশিম খেতে হয় পুলিশকে! এমনও দেখা যায়, বাস থেকে নামতে গিয়ে চাকার তলায় কেউ পিষ্ট হয়েছেন বুঝেও থামে না বাস। হয় বাস নিয়ে চম্পট দেওয়ার চেষ্টা করা হয়, নয়তো বাস ফেলেই গা-ঢাকা দেন চালক ও কন্ডাক্টর। পুলিশের দাবি, অনেক ক্ষেত্রেই চালক নিজে তৎপর হলে তখনও বেঁচে থাকা ব্যক্তি চিকিৎসা পেতে পারতেন!
এমনই একাধিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এ বার কড়া অবস্থান নিতে চলেছে কলকাতা পুলিশ। লালবাজার সূত্রের খবর, নতুন ন্যায় সংহিতার ১০৬/২ (হিট অ্যান্ড রান বা গাড়ি চাপা দিয়ে পালিয়ে যাওয়া সংক্রান্ত) ধারা সরাসরি ব্যবহার করার ভাবনাচিন্তা শুরু করেছে পুলিশ। ট্র্যাফিক পুলিশ সূত্রের খবর, গত ৭ ফেব্রুয়ারি ভোরে রবীন্দ্র সরণিতে সত্যনারায়ণ দে নামে এক প্রৌঢ়ের মৃত্যু হয়। একটি গাড়ি তাঁকে ধাক্কা মেরে চম্পট দেয়। আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল তাঁকে মৃত ঘোষণা করে। ওই মামলায় এই ধারা যুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে সূত্রের খবর। গত সপ্তাহে প্রগতি ময়দান থানা এলাকায় বাইপাসের উপরে এক ব্যক্তিকে ধাক্কা মেরে চম্পট দেয় একটি লরি। সেটির চালককে পরে বহু খুঁজে গ্রেফতার করে পুলিশ। এর পাশাপাশি, উল্টোডাঙা ট্র্যাফিক গার্ডের আরও একটি ‘হিট অ্যান্ড রান’ মামলায় ওই ধারা ব্যবহারের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
পুলিশ সূত্রের খবর, নতুন ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ১০৬/২ ধারা অনুযায়ী, যদি কোনও গাড়ি কাউকে ধাক্কা মারার পরে চালক পুলিশ বা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দ্রুত বিষয়টি না জানিয়ে চম্পট দেন, সে ক্ষেত্রে পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে ১০৬/২ ধারা যুক্ত করতে পারে। এতে দোষী প্রমাণিত হলে ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং সাত লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। আইনজীবী দেবকুমার চন্দ্র বললেন, ‘‘ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৪এ, অর্থাৎ গাফিলতির কারণে মৃত্যুর ধারার পরিবর্তে এই নতুন ধারা ব্যবহার হবে। পুরনো ধারায় দু’বছরের কারাদণ্ডের কথা ছিল। সেটা বাড়ানো হয়েছে। আসলে বহু ক্ষেত্রেই দেখা যায়, কাউকে গাড়ি বা মোটরবাইক দিয়ে ধাক্কা মারার পরে তাঁকে ফেলে রেখে চালকের পালিয়ে যাওয়ার কারণে চিকিৎসা পাওয়ার সুযোগটাও হারান সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি। এতে মৃত্যু নিশ্চিত হয়। এই দায় না নিয়ে পালিয়ে বাঁচার জায়গাটা বন্ধ করতেই এই নতুন ধারা কার্যকর করার ভাবনা চলছে।’’ আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়ও বললেন, ‘‘ব্রিটিশ আমলের আইনের বদল অত্যন্ত জরুরি ছিল। এক জন গাড়ির ধাক্কা খাওয়া মানুষ যাতে দ্রুত চিকিৎসা পান, সেই জায়গাটা প্রস্তুত করাই এই নতুন ধারার উদ্দেশ্য। কড়া হাতে এই নতুন ধারার ব্যবহার হওয়া প্রয়োজন।’’ আইনজীবীরা এই ধারার পক্ষে সওয়াল করলেও দেশের বিভিন্ন জায়গায় লরিচালক এবং পরিবহণ সংগঠনের সদস্যেরা এ নিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। মূলত জনরোষের জেরে মার খাওয়ার ভয়েই চালকেরা পালিয়ে যান বলে তাঁদের দাবি।
কলকাতা পুলিশের কর্তারা যদিও পরিসংখ্যান দিয়ে জানিয়েছেন, গোটা দেশে ২০২২ সালেই পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ১ লক্ষ ৬৮ হাজার জনের। অর্থাৎ, প্রতিদিন মারা গিয়েছেন ৪৬২ জন। গোটা বিশ্বে যেখানে পথ দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বছরে পাঁচ শতাংশ করে কমছে, সেখানে এ দেশে সেই সংখ্যা প্রতি বছর ১২ শতাংশ করে বাড়ছে। ‘ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস বুরো’র পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে, ২০২২ সালে দেশে ৪৭ হাজার ৮০৬টি ‘হিট অ্যান্ড রান’ মামলা হয়েছে। যাতে মৃত্যু হয়েছে ৫০ হাজার ৮১৫ জনের। কলকাতা পুলিশের যুগ্ম-নগরপাল পদমর্যাদার এক অফিসার বলেন, ‘‘কাউকে গাড়ি বা মোটরবাইক নিয়ে ধাক্কা মারার পরে কেউ জনরোষের মুখে পড়ার ভয় পেতেই পারেন। কিন্তু চাইলেই তিনি পরের কোনও থানা বা ট্র্যাফিক পোস্টে গিয়ে দুর্ঘটনার কথা জানাতে পারেন। এতে কোনও আহত ব্যক্তি দ্রুত চিকিৎসা পেতে পারেন। সেটুকুর জন্যই কড়াকড়ি করা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy