পেশিবহুল পেটানো চেহারা। নিয়মিত শরীর চর্চার অভ্যেস। গড় ওজন একটু বেশি। আর তা নিয়েই যত বিপত্তি।
সাধারণত, ১০০ আসনের বিমানে এক এক জন যাত্রীর গড় ওজন ৫০ কিলোগ্রাম করে ধরা হয়। কারণ বিমানে যেমন ৭০-৮০ কিলো ওজনের যাত্রী থাকেন, তেমনই ১৫-২০ কিলো ওজনের বাচ্চারাও থাকে। কিন্তু বিমানের সমস্ত আসনেই যদি সামরিক বা আধা-সামরিক বাহিনীর
স্বাস্থ্যবান জওয়ান থাকেন, তা হলে গড় ওজনটা বেড়ে প্রায় ৭০ কিলোগ্রাম হয়ে যায়। ফলে ১০০ আসনের বিমানে যাত্রীদের ওজনের ব্যবধানটা তখন বেড়ে যায় ২ হাজার কিলোগ্রামে!
রবিবার, আইজল থেকে আধা-সামরিক বাহিনীর জওয়ানদের নিয়ে কলকাতায় আসার সময়ে এই ওজনের গেরোয় পড়ে জেট এয়ারওয়েজ। ১৬৬ জন জওয়ানকে জেটের বোয়িং ৭৩৭ বিমানে আনা হলেও, তাঁদের মধ্যে ১৫৬ জন যাত্রীর বাক্স-প্যাঁটরা পৌঁছয় না কলকাতায়। সেই বাক্স-প্যাঁটরা পেতে দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত কলকাতা বিমানবন্দরে অপেক্ষা করতে হয় দেড়শোর বেশি জওয়ানকে। এঁদের কারও যাওয়ার কথা ছিল কাশ্মীর, কারও বিহার, কারও উত্তরপ্রদেশ। অনেকেই নিজের গন্তব্যে যাওয়ার উড়ান বা ট্রেন ধরতে পারেননি।
সাধারণ উড়ানের সম সংখ্যক যাত্রীর তুলনায় এমনিতেই বিমানটির ওজন ছিল প্রায় ৩ হাজার কিলো বেশি। তার উপরে একটি বিমান টেক-অফ করার সময়ে তখনকার আবহাওয়া, বাতাসের গতি, তাপমাত্রার উপর তার সর্বোচ্চ ওজন নির্ভর করে। জেট সূত্রের খবর, রবিবার দুপুরে আইজলের আবহাওয়া, বাতাসের গতি, তাপমাত্রা কোনওটাই অনুকূল ছিল না। তাই, ন্যূনতম জ্বালানি তুলেও, বেশির ভাগ জওয়ানদের বাক্স-প্যাঁটরা বিমানে তোলা যায়নি। জেটের এক কর্তার কথায়, সকলের বাক্স-প্যাঁটরা নিতে গেলে সব যাত্রীকে আনা যেত না।
রবিবার দুপুর দেড়টা নাগাদ কলকাতায় নামার পরে জিনিসপত্র না-পেয়ে ক্ষোভে ফেটে প়ড়েন জওয়ানেরা। অভিযোগ, সেই সময়ে জেটের অফিসারেরা তাঁদের বিষয়টি বোঝাতে গেলে অফিসারদের ধাক্কা মেরে বসেন ক্ষুব্ধ জওয়ানরা। হইচই বেঁধে যায় বিমানবন্দরে। সেই দলে ছিলেন সীমান্তরক্ষী বাহিনী, সিআইএসএফ, সিআরপি-র জওয়ানেরা। এ নিয়ে পরে বিমানবন্দর থানায় অভিযোগও জানানো হয়েছে জেটের তরফ থেকে। এক কর্তার কথায়, ‘‘শৃঙ্খলাবদ্ধ বাহিনীর থেকে এমন ব্যবহার আমরা আশা করিনি।’’
জেট জানিয়েছে, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে, প্রত্যন্ত এলাকায় কর্তব্যরত এই জওয়ানদের জন্য বিশেষ উড়ান চালায় কেন্দ্র সরকার। খরচ বহন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। সপ্তাহে গড়ে দু’দিন জেট এবং এয়ার ইন্ডিয়া উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন শহর থেকে এ ভাবে কলকাতায় নিয়ে আসে জওয়ানদের। তাঁরা বেশির ভাগই ছুটি পেয়ে বাড়ি ফেরেন। রবিবারও বেশির ভাগ জওয়ানই বাড়ি ফিরছিলেন। কলকাতায় বাক্স-প্যাঁটরা না পেয়ে জওয়ানদের তরফে অভিযোগ, এমনিতেই উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রত্যন্ত এলাকায়, জঙ্গলে-পাহাড়ে তাঁরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ডিউটি করেন। দিনের পর দিন পরিবার-পরিজন ছেড়ে থাকতে হয়। সহজে ছুটি মেলে না। এত দিন পরে ছুটি পেয়ে বাড়ি ফিরছিলেন তাঁরা। তার মধ্যে কলকাতায় নেমে দেখেন মাত্র ১০ জনের জিনিসপত্র এসেছে।
জেট সূত্রে জানা গিয়েছে, আইজলে আটকে পরা বাক্স-প্যাঁটরা দুপুরে বিমানে করে পাঠানো হয় গুয়াহাটি। জেট জানিয়েছে, সেই উড়ানে রবিবার যাত্রী কম থাকায় জওয়ানদের মালপত্র পাঠানো সম্ভব হয়। গুয়াহাটি থেকে এয়ার ইন্ডিয়ার সন্ধ্যার উড়ানে ৬০ জন যাত্রীর মালপত্র কলকাতায় পাঠানো হয়। বাকি মালপত্র আসে জেটের উড়ানে। রাত সাড়ে আটটার পরে সেই মালপত্র কলকাতায় পৌঁছয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy