প্রতীকী ছবি
একসঙ্গে পাঁচটি আলাদা নম্বরের সিমকার্ড নিয়ে ‘কাজে’ বসত সে। সোশ্যাল মিডিয়ায় নজরদারি চালিয়ে আগেই বেছে রাখা প্রোফাইল ধরে ধরে ফোনের মাধ্যমে সিনেমায় কাজের সুযোগের টোপ দিত। সঙ্গে বলিউড বা টলিউডের কোনও নামী পরিচালকের নাম করে বলত, ‘‘এর পরে ওই পরিচালক ফোন করে কাজ বুঝিয়ে দেবেন।’’ এর পরে আলাদা সিমকার্ড ফোনে ভরে ওই পরিচালকের নাম ভাঁড়িয়ে ফোন করত সে নিজেই!
বছর দু’য়েক আগে কলকাতার এক চিত্র পরিচালকের অভিযোগের তদন্তে নেমে বিহারের জামুই পর্যন্ত পৌঁছে পুলিশ দেখে, নিজেকে পরিচালক দাবি করা ব্যক্তি আদতে সেখানকার এক ইটভাটার ম্যানেজার। মাঝেমধ্যে সে সেখানকার এক মহিলাকেও ডেকে নিত ফোনে কথা বলতে হবে বলে। তখন ওই মহিলা হত বলিউড বা টলিউডের কোনও নামী গায়িকা বা নাচের প্রশিক্ষক। জেরায় ওই ব্যক্তি পুলিশকে জানায়, সোশ্যাল মিডিয়া থেকে বাছা প্রোফাইলের কেউ যদি নাচে আগ্রহী হন, তাঁর জন্য নামী নাচের প্রশিক্ষকের নাম ভাঁড়ানো হত। গান ও অভিনয়ে আগ্রহীদের জন্যও ছিল একই ছক। যে সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইলে ব্যবহারকারীর মোবাইল নম্বর দেওয়া থাকত, সেগুলিই হত প্রথম টার্গেট। যেগুলিতে নম্বর থাকত না, সেগুলির ব্যবহারকারীকে কাজের টোপ দিয়ে মেসেজ করা হত কোনও পরিচালক বা অভিনেতার ‘ফ্যান পেজ’ থেকে।
লকডাউনের এই সময়ে ওই ধরনের প্রতারণাচক্র ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে নানা মহল থেকে নতুন করে অভিযোগ আসতে শুরু করেছে। চলতি মাসেই এক উঠতি অভিনেত্রী এবং এক টেলিভিশন অ্যাঙ্কর এমন অভিযোগ করেছেন। অভিনেত্রী কলকাতা পুলিশে অভিযোগ দায়ের করে জানিয়েছেন, কলকাতার এক নামী পরিচালকের নামে খোলা সোশ্যাল মিডিয়ার ‘ফ্যান পেজ’ থেকে দিন কয়েক আগে তাঁকে মেসেজ করে কাজের টোপ দেওয়া হয়। এর পরে একটি নম্বর দিয়ে বলা হয় সেটি পরিচালক সুজয় ঘোষের। অভিনেত্রীর কথায়, ‘‘ওই নম্বরে মেসেজ করলে আমার কাজের কিছু ছবি চাওয়া হয়। কিন্তু ওই নম্বরে ফোন করলে যে ব্যক্তি কথা বলেন, তিনি যে সুজয় ঘোষ হতে পারেন না তা কথা শুনেই মনে হয়েছিল। বিনোদন জগতে কাজ করা বন্ধুদের থেকে জানতে পারি এমন ভাবে নতুন প্রতারণা চক্র চালানো হচ্ছে। এর পরেই পুলিশে অভিযোগ করি।’’
গত ২৬ তারিখই এক রেডিয়ো জকি তথা ফ্রিলান্স অ্যাঙ্করকে একই ভাবে যোগাযোগ করা হয় সুজয় ঘোষের নাম ভাঁড়িয়ে। ওই মহিলার কথায়, ‘‘জয়ন্ত নামে এক ব্যক্তি ফোন করে বলে, সুজয় ঘোষের নতুন একটি ওয়েব সিরিজের জন্য নাকি আমায় ভাবা হচ্ছে। আমার কাজের কিছু ছবিও পাঠাতে বলা হয়। এর পরে একটি নম্বর দিয়ে বলা হয় সেটি সুজয় ঘোষের। তাতে ফোন করে গলা শুনেই বুঝেছি ভুয়ো। অত বড় ব্যক্তিত্ব কখনওই রেজিস্ট্রেশনের জন্য বলবেন না। ওই রেজিস্ট্রেশন করলেই যে টাকা উধাও হবে বুঝে গিয়েছিলাম।’’
পরিচালক সুজয়বাবু ফোনে বলেন, ‘‘এ ব্যাপারে কিছুই জানি না। কারা এ সব করছে? পুলিশকে বলব দ্রুত ব্যবস্থা নিতে।’’
লালবাজারের সাইবার শাখা সূত্রের খবর, বছর দু’য়েক আগে তদন্তে নেমে যাদের গ্রেফতার করা হয়েছিল, তারা প্রত্যেকেই এখন জামিনে মুক্ত।
এমন কাণ্ড কি তবে তারাই ঘটাচ্ছে? সাইবার শাখার এক আধিকারিক বললেন, ‘‘সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কিছু সূত্রও পাওয়া গিয়েছে। তবে করোনা পরিস্থিতিতে চাইলেই বাইরে গিয়ে সেই সব সূত্র খতিয়ে দেখা যাচ্ছে না।’’
তা হলে উপায়?
লালবাজারের সাইবার শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ আধিকারিক বললেন, ‘‘সব দিক না বুঝে কোনও রকম অনলাইন আর্থিক লেনদেনের পথে এখন হাঁটাই উচিত নয়। প্রলোভনে পা দেবেন না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy